More

Social Media

Light
Dark

ইংল্যান্ডের ‘অব্রিটিশীয়’ গ্রেটনেস

ঘটন, অঘটন, কামব্যাক, সেটব্যাক – অসংখ্য ঘটনার দৃশ্যায়নে শেষ হল এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। মেলবোর্নের মহারণে শেষ হাসিটা হাসল ইংলিশরা। ক্রিকেট সাম্রাজ্যে আবারও ইংলিশদের আধিপত্য। সাদা বলের ক্রিকেটের শেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপটা ইংল্যান্ডই পেয়েছিল। তবে ক্রিকেটের ছোট ফরম্যাটের শিরোপা খরা ছিল প্রায় এক যুগ ধরে। অবশেষে সেই দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান। সহস্র ঘণ্টার নীরবতা ভেঙে মেলবোর্নের মাটিতে শিরোপা উদযাপন করলো ইংল্যান্ড।

২০১০, ২০১৯ এরপর ২০২২। শেষ এক যুগে তিন তিনটা শিরোপা। অথচ ক্রিকেট ইতিহাস সমৃদ্ধ এ দেশটির এর আগে কোনো আইসিসির শিরোপাই ছিল না। ইংল্যান্ডের এমন আমূল বদলে যাওয়ার পেছনে ছিল এক ঝাঁক তরুণ ক্রিকেটার। ক্রিকেটীয় সেই স্বপ্নসারথীদের মাঝে এমনও অনেকজন ছিলেন যারা জন্মসূত্রে ইংলিশ নন। আবার অনেকেই আছেন যারা অন্যদেশের বংশোদ্ভূত ছিলেন। ইংল্যান্ডের এই বিশ্বকাপ জয়ী দলটাতেই যেমন স্টোকাস, কারান জন্মেছিলেন অন্য দেশে। আর মঈন আলী, আদিল রশিদের পূর্ব পুরুষ ছিল পাকিস্তানের।

এবারের বিশ্বকাপ ম্যান অব দ্য ফাইনাল এবং টুর্নামেন্ট, দুটিই নির্বাচিত হয়েছেন স্যাম কারেন। ইংল্যান্ডের এ বিশ্বকাপ জয়ে সবচেয়ে বেশি অবদান যার সেই স্যাম কারানের শিক্ষাজীবন কেটেছে জিম্বাবুয়েতে। স্যাম কারানের ভাই টম কারানও ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন। আর স্যাম কারানের বাবা কেভিন কারা খেলেছিলেন জিম্বাবুয়ের হয়ে। তো পুত্র স্যাম কারানের ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার হয়ে যাওয়ার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে।

ads

কারান ফ্যামিলির জিম্বাবুয়েতে খামারের ব্যবসা ছিল। কিন্তু জিম্বাবুয়ে ভূমি আইনের গ্যাঁড়াকলে পড়ে তাদের খামারকে এক সময় বাজেয়াপ্ত করা হয়। আর এর পরেই ইংল্যান্ডে চলে আসে তাঁর পরিবার। আর সেখান থেকেই স্যাম কারানের ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু হয়।

বয়সভিত্তিক দলের গণ্ডি পেরিয়ে এক সময় ইংল্যান্ডের হয়েও খেলার সুযোগ পান স্যাম কারান। দারুণ বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংটাও ভালই করেন কারান। তাই আইপিএলেও সুযোগ পেয়েছেন দ্রুতই। আর এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ তো বলতে নিজেরই করে নিলেন।

মেলবোর্নের ফাইনালে উইকেট আগলে রেখে জয়ের বন্দরে ইংল্যান্ডকে নিয়ে গিয়েছিলেন বেন স্টোকস। ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ফিফটি পেলেন এই ফাইনাল থেকেই। তবে ইংলিশদের শিরোপা আনন্দের ভাসানো এই স্টোকসের জন্মও কিন্তু ইংল্যান্ডে না। তাঁর জন্ম নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে। ১২ বছর বয়সে তিনি পরিবারের সঙ্গে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান। তাঁর বাবা জেরার্ড স্টোকস ছিলেন পেশাদার রাগবি খেলোয়াড়। পরে তিনি ইংল্যান্ডে গিয়ে রাগবি কোচিং শুরু করেছিলেন।

২০১১ ইংল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় স্টোকসের। টেস্ট আঙিনাতেও পা রাখেন ২ বছর বাদে, ২০১৩ সালে। আর এরপর থেকেই ইংল্যান্ড ক্রিকেটে গুরুত্বপূর্ণ এক সদস্য হয়ে ওঠেন স্টোকস। ২০১৯ বিশ্বকাপ জেতার নায়ক তো তিনিই ছিলেন। এ ছাড়া অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেডিংলিতে তাঁর খেলা অবিশ্বাস্য সেই ইনিংস তো এখনও তাজা স্মৃতি। বর্তমানে ইংলিশদের লাল বলের ক্রিকেটে কাপ্তানির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন নিউজিল্যান্ডে জন্মানো এ ক্রিকেটার।

মঈন আলী, ইংলিশ ক্রিকেটার আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। মঈন আলীর জন্মও ইংল্যান্ডেই। তবে তিনি পরিচয়ে পাকিস্তান বংশোদ্ভূত। মঈন আলীর দাদা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই কাশ্মীর থেকে ইংল্যান্ডে চলে গিয়েছিলেন। আর সেখানেই তার মায়ের জন্ম হয়।

তাই মঈন আলীকে সেভাবে নন ইংলিশ বলাও যায় না। তার উপর চলতি বছরের জুন মাসে মঈন আলী ‘অর্ডার অফ ব্রিটিশ এম্পায়ার’- ওবিই উপাধি পেয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের সাদা বলের ক্রিকেটে অবদানের কারণে দ্বিতীয় রাণী এলিজাবেথের জন্মদিনে তিনি এই উপাধি পান।

এবারের বিশ্বকাপ ফাইনালে পাকিস্তানের ব্যাটারদেরকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন আদিল রশিদ। তাঁর লেগ স্পিনের কারিশমাতেই বল রিড করতে হিমশিম খেয়েছে বাবর, হারিসরা। মজার ব্যাপার হল, মঈন আলীর মতোই তাঁর পরিবারও কাশ্মীর থেকে ইংল্যান্ডে চলে এসেছিল। ১৯৬৭ সালে তাঁর পরিবার ইংল্যান্ডে স্থানান্তর হয়। ইয়র্কশায়ারের জন্ম নেওয়া এ ক্রিকেটারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ২০০৯ সালে। এক যুগেরও বেশি সময়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তিনিও ইংল্যান্ড ক্রিকেটে হয়ে উঠেছেন অবিচ্ছেদ্য অংশ।

অবশ্য আধুনিক ব্রিটেনের ভাবধারাটাই তো এমন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও তো ঠিক ব্রিটিশ নন। আসলে জাতিগত ভাবে তাঁরা যেখান থেকেই আসুক না কেন – নিজেদের কাজে তাঁরা প্রতিটা মুহূর্ত দেন ব্রিটেনকেই। এখানেই ব্রিটেনের গ্রেটনেস!

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link