More

Social Media

Light
Dark

‘বিলো অ্যাভারেজ’ সাকিব


দক্ষিণ আফ্রিকার পরাজয়ে বাংলাদেশের সেমিফাইনালের ভাগ্যে আলো জ্বলে উঠেছিল তীব্রভাবে। কিন্তু সেই ভাগ্যকে দিন শেষে সুপ্রসন্ন করতে পারেনি টাইগাররা। পাকিস্তানের কাছে ৫ উইকেটে হেরে পয়েন্ট টেবিলের ৫ নম্বরে থেকে বিশ্বকাপ অভিযান শেষ করল সাকিবের দল। দারুণ কিছু করে দেখানোর আশা নিয়ে দলটার এবারের বিশ্বকাপ পথযাত্রা শেষ হল অন্তিম সময়ে এসে নিজেদের নিদারুণ ব্যর্থতায়।

সাকিব বিশ্বকাপের আগে বরাবরই বলে আসছিলেন, তাঁর দল এবার ভিন্ন কিছু করবে। সেই ভিন্নতায় যেটা খুঁজে পাওয়া যায়, সেটা হল- বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে প্রথম বারের মত একাধিক ম্যাচ জয়। সেই দুটো ম্যাচ জয়ের মধ্যে একটি সহযোগী দেশের বিপক্ষে, অন্যটি গত বিশ্বকাপে খেলতে না পারা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। দিনশেষে নিজেদের নিচের সারির দল ছাড়া একটি ম্যাচেও জয় পায়নি সাকিবরা।

যা একটু প্রতিদ্বন্দ্বিতার রেশ পাওয়া গিয়েছিল, তা ভারতের বিপক্ষে। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা পাকিস্তান, দুই দলের বিপক্ষে টিম বাংলাদেশ ছিল পুরোপুরিই ম্লান।  

ads

বাংলাদেশ দলের এমন ব্যর্থতায় দায় দেওয়া যায় সিংহভাগ ক্রিকেটারকেই। এমনকি সেই তালিকাতে সাকিব নিজেও বাদ যান না। পুরো টুর্নামেন্টে কেমন অধিনায়কত্ব করেছেন সেটি অন্য তর্কের বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশ দলকে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারেননি শেষ পর্যন্ত। গড়পড়তা বোলিং, বাজে ব্যাটিং-পুরো টুর্নামেন্টে সাকিবের বোলিং, ব্যাটিং নিয়ে এই দুটি বিশেষণই যোগ করা যায়। 

পুরো টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে ৫ ম্যাচে সাকিব রান করেছেন ৪৪। পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁর আউট নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে তাঁর ব্যাটিং ব্যর্থতা কিন্তু কোনোভাবেই আড়ালে যায় না। পুরো টুর্নামেন্টে খেলা ৫ ইনিংসেই নম্বর তিন কিংবা চারে ব্যাটিং করেছেন।

এমন গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে তাই সাকিবের ব্যাটে রানের প্রত্যাশাটা থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু ৫ ম্যাচেই তিনি হতাশ করেছেন। ইনিংস বড় করতে পারেননি। এমনকি যে কয়টা রান করেছেন তাতেও স্ট্রাইক রেটের অবস্থা খুব একটা নান্দনিক নয়। আর আরও হতাশার ব্যাপার হল, এ বারের আসরে সাকিব ব্যাট হাতে একটিও ছক্কা হাঁকাতে পারেননি। 

বল হাতে সাকিব ক্যারিয়ারে বরাবরই স্বরূপে ছিলেন। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে সাকিব যেমন বোলিং করেছেন সেটাকে গড়পড়তার চেয়ে বেশি কিছু বলে আখ্যায়িত করা যায় না। পুরো টুর্নামেন্টে ৫ ম্যাচে নিয়েছেন ছয় উইকেট। তবে নেদারল্যান্ডস থেকে শুরু করে পাকিস্তান, কোনো ম্যাচেই নিজের ইকোনমি রেট ৮ এর নিচে রাখতে পারেননি। সব মিলিয়ে তাঁর বোলিং ইকোনমি ছিল ৮.৭৮। 

পুরো টুর্নামেন্টে অধিনায়কোচিত পারফর্মেন্সের হিসেবে, সাকিবকে এবার শূণ্যের দলেই থাকতে হচ্ছে। মূহূর্তের বিবেচনায় হয়তো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সাকিবের সেই রান আউটটি আসতে পারে। কিন্তু খেলোয়াড়ের নাম যখন সাকিব, তখন এমন বিচ্ছিন্ন কিছু মুহূর্ত নিশ্চয় সাকিবকে সামগ্রিকভাবে সফল করতে পারে না। 

২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাংলাদেশের জন্য এক রকম ব্যর্থ একটা যাত্রাই বলা যায়। দল হিসেবে এমন ব্যর্থ মিশনের সাথে সাকিব পরিচিত বেশ কিছুকাল আগে থেকেই। তবে এবার দলগত ব্যর্থতার সাথেও যোগ হল তাঁর ব্যক্তিগত ব্যর্থতা। ২০১৯ বিশ্বকাপে নিজের আলোয় পুরো বিশ্বকে উদ্ভাসিত করেছিলেন সাকিব। আঁধারে থাকা একটি দলের মাঝেও সাকিব ছিলেন সাঁঝবাতির মত। তবে ৩ বছর বাদে, সেই আঁধারে থাকা দলটার মাঝে নিজেও মিশে গেলেন সাকিব। সাকিবের জন্য এমন অনুভূতি নিশ্চয়ই নতুন। 

তবে, দিনশেষে সাকিব তো একজন চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার। এমন সাময়িক ব্যাডপ্যাঁচ হয়তো সামান্যতম প্রভাবিতও করে না তাঁকে। অন্তত সাকিবের ক্ষেত্রে স্বরূপে ফেরার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র আশঙ্কা কারোরই নেই। বিশ্বকাপে ব্যর্থতার ছাপ দ্রুত মুছে সাকিব ঠিকই ফিরবেন সাকিবের মত হয়ে।  

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link