More

Social Media

Light
Dark

এক পশলা লিটন

বাইশ গজটা একটা মঞ্চ। লিটন পা দুটো নাচালেন। দুই পায়ের কারুকাজ শেষে এবার কব্জির জাদু। একটু সামনে ঝুঁকে বলটাকে আলতো ছোঁয়া দিলেন। একটা মাস্টারপিস ছবিতে শিল্পির শেষ স্ট্রোকটা যেমন হয়। ফাইন লেগের উপর দিয়ে চলে যাওয়া বলটা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলেন ভুবনেশ্বর কুমার, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা কিংবা ঢাকার রাস্তায় কোন টিভি শো রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক বালক। দেখলেন না কেবল লিটন নিজেই, তিনি তো জানেনই বলটা ঠিক কোথায় গিয়ে পড়বে।

কমেন্ট্রি বক্স থেকে বারবার ভেসে আসছিল, ‘জাস্ট ওয়াচ হিম, লিটন দাস।’ সত্যিই তো, এই লিটন থেকে আপনি চোখ সড়াবেন কী করে। লিটনের ব্যাটিং যেন একটা সুর। আপনি হয়তো ক্রিকেটটা বোঝেন না, আপনার হয়তো লিরিক্সটা জানা নেই। তবে এই সুর আপনাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবেই। এই সুর আপনার মনে বাজবেই।

এই যেমন অর্ধশতক পূরণ করার জন্য যে শটটা খেললেন সেটাই দেখুন না। মোহাম্মদ শামির শর্ট লেন্থের বলটা একটু সামনে এসে পুল করলেন। আবারও একটা গোটা ক্রিকেট দুনিয়া তাকিয়ে থাকলো। এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল অ্যাডিলেডের গ্যালারি, থমকে গেল ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, থমকে গেল একটা গোটা ক্রিকেট দুনিয়া।

ads

ছয় মেরেই নিজের অর্ধশতক পূরণ করলেন। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় দ্রুততম অর্ধশতক। একইসাথে আবার দলেরও অর্ধশতক পূর্ণ হল। এটা অবশ্য ক্রিকেট দুনিয়াতেই এই প্রথম। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ বিনা উইকেট হারিয়ে তুললো ৬০ রান। যার ৫৭ রানই এসেছে লিটনের ব্যাট থেকে।

কথায় আছে বড় শিল্পীদের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলতে হয়। লিটনের ব্যাটিং দেখেও কী স্থির থাকা যায়। তবুও দেশের অজস্র ক্রিকেট প্রেমী স্থির বসে আছেন। নড়াচড়া করার সাহস পাচ্ছেন না। তবে লিটনের এই শোতে বিরতি দিল বৃষ্টি।

ততক্ষণে ২৬ বল খেলে লিটন করেছেন ৫৯ রান। ব্যাটিং স্ট্রাইকরেট ২২৬.৯২। মেরেছেন ৭ টি চার ও ৩ টি ছয়। সাত ওভারে কোন উইকেট না হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৬৬ রান। একটা স্বপ্নও উকি দিয়ে উঠে। আজকে তাহলে আরেকটা রূপকথা লেখা হবে? যে রূপকথার নায়ক হবেন লিটন কুমার দাস।

এই লিটন তো পুরোটা সময় জুড়েই আমাদের সাথে ছিলেন। অথচ বিশ্বকাপে একজন ওপেনারের অভাব নিয়ে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। লিটন ব্যাট করেছেন মিডল অর্ডারে। অথচ লিটন ওপেন করাতেই কত সমীকরণ সহজ হয়ে গেল।

অধিনায়ক সাকিবের হয়তো প্রশ্নটা আবার করতে পারেন। লিটন ওপেন করলেই আমরা ম্যাচ জিতবো? তা হয়তো না, কখনও হবে, কখনও হবে না। তবে লিটন অন্তত পাওয়ার প্লের ব্যবহারটা করতে পেরেছেন।

ইনিংসের শুরুতেই হেরে যাওয়া যে শরীরি ভাষা ফুটে উঠতো সেখান থেকে টেনে তুলেছেন লিটন। ১৮৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামা লিটন অন্তত সাহসটা দেখিয়েছেন। বাংলাদেশ জিততে পারে, তিনি জেতাতে পারেন সেই বিশ্বাসটা অন্তত ছিল।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link