More

Social Media

Light
Dark

স্বর্গে গেছেন ফিরে

‘এই ছেলেটা মাঠে ভূতের মত উদ্দেশ্যহীন ভাবে দৌড়াদৌড়ি করছে কেন শুধু শুধু?’ – কথাটা  ১৯৮২  বিশ্বকাপ চলাকালীন ইতালিয়ান এক সাংবাদিক বলে বসেন। সত্যিই তাঁর কথাটা তখন অবধি ঠিকই ছিল।

ইতালিয়ান সাংবাদিকের মত ইতালিয়ান ভক্ত সবাইই গ্রুপ পর্বের ম্যাচ গুলোতে তার পারফরম্যান্সে যারপরনাই হতাশ ছিলেন। শুধু হতাশ বললেও কিছুটা কমই হবে। একেবারে যারপরনাই বিরক্ত যাকে বলে।

একজন দণ্ডপ্রাপ্ত  আসামী, যিনি কিনা দুই বছরের মত সময় ধরে ফুটবলের বাইরে। শারীরিক ভঙ্গি, মুভমেন্ট, স্কিল কোনোটাই হয়ত এখনকার সময় হলে ফুটবল মাঠে নামার জন্য যথেষ্ট হত না। অথচ সেরকম একজনকে সরাসরি বিশ্বকাপের মত আসরে নামিয়ে দেয়া হল!

ads

তৎকালীন ইতালির জাতীয় দলের কোচ ছিলেন এনজো বেয়ারজট। ছেলেটির গ্রুপ পর্বের পারফরম্যান্সের ফলে সবাই যেন কোচকে ধুয়ে নামায়।

কিন্তু তিনি যেন কিছু একটার অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি জবাবটা তার মুখ দিয়ে নয়; পা দিয়ে দিয়েছিলেন।

হ্যাঁ, সেই মাঠের ভূতই হয়ে গেলেন স্বর্গের দূত-পাওলো রসি।

ব্রাজিলের স্বপ্নের দলকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে দেওয়ার খলনায়ক, ইতালিকে স্বপ্নের বিশ্বকাপ এনে দেওয়ার নায়ক এবং বহু কীর্তির মালিক পাওলো রসি। জুভেন্টাস ও ইতালির এই মহানায়ক ২০২০ সালের ফাড়ায় পড়ে চলে গেলেন দুনিয়া ছেড়ে। যেন স্বর্গের দূত স্বর্গে ফিরে গেলেন।

ফুটবল বিশ্বকাপ!

৩৬. ৮ সেন্টিমিটার এই সোনালি ট্রফিটা প্রতিটা ফুটবল খেলুড়ে দেশের জন্য সবচেয়ে আরাধ্য বস্তু। এই ট্রফিই একজন পেলে,ম্যারাডোনাদের করেছে কিংবদন্তি। আবার বর্তমান সময়ের  লিওনেল মেসি কিংবা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোদের কাছে  সবচেয়ে আরাধ্য।

একটা বিশ্বকাপ একা মাতিয়ে রাখার কথা এলে সবার আগে হয়তো ডিয়েগো ম্যারাডোনার কথা আসবে। কিন্তু আরেকজন মানুষ ১৯৮২ সালে এই কাজ করেছিলেন। এই পাওলো রসি প্রায় এক পায়ে ইতালিকে এনে দিয়েছিলেন বিশ্বকাপ।

  • ফুটবল প্রেম

১৯৫৬ এর ইতালির প্রাটো শহরে জন্ম। মাত্র ছয় বছরেই ফুটবলের সাথে সম্পর্ক হওয়া রসি একসময় বনে যান দেশের ইতিহাস। ছোটকালে বন্ধুবান্ধবদের সাথে শুরু করা ফুটবল নিয়ে এতই মজে যান যে একসময় তাঁর জীবনে পড়ালেখা এবং ফুটবলের মধ্যে একটা বেছে নেন তিনি।

ভাগ্যিস সেদিন রসি ফুটবলকেই বেছে নিয়েছিলেন। নতুবা আজকের ইতালির ফুটবল ইতিহাস হয়ত অন্যরকম হত। রসি প্রথম ফুটবল শুরু করেছিলেন সান্টা লুসিয়ার হয়ে।সেখান হতেই তার পেশাদার ফুটবল হওয়ার পথের যাত্রা শুরু।

মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ক্যাটোলিকার হয়ে খেলার সময় তৎকালীন জুভেন্টাস ম্যানেজার ইতালো এলোডির নজরে আসেন। এলোডি তাকে জুনিয়র টিমের জন্য চুক্তিবদ্ধ করতে চাইলে রসির বাবা-মা বাধ সাধেন। ছেলেকে ছেড়ে অন্য শহরে থাকা সম্ভব হবে না,সাফ জানিয়ে দেন।

কিন্তু রসির রক্তে ছিল ফুটবল। বাবা মায়ের  আপত্তি সত্ত্বেও জীবনের প্রথম চুক্তিটি সম্পন্ন করেন। কিন্তু একজন ফুটবলার হিসেবে যে শারীরিক গঠন থাকা উচিত রসির তা ছিল না।

তিনি খুবই হালকা পাতলা গড়নের ছিলেন। যার কারণে ইনজুরিতে পরে জুভের ৩ সিজনের মধ্যে দুই সিজনই মাঠের বাইরে কাটাতে হয় তাকে।

এরপর ১৮ বছর বয়সে কোপা ইতালিয়ার এক ম্যাচে জুভেন্টাসের হয়ে অভিষেক হয় পাওলো রসির। প্লেয়িং টাইমের জন্য জুভেন্টাস তাকে আরেক ক্লাব কোমোয় লোনে পাঠায়।

  • রাইটব্যাক টু স্ট্রাইকার

১৯৭৬-৭৭ সিজনে আরেকবার লোনে ক্লাব ভিসেঞ্জায় যান রসি। ক্লাবটি তখন ইতালিয়ান দ্বিতীয় স্তর এ খেলত-সিরি বি। এখানেই রসি মূলত রসি তে পরিণত হোন।

মূলত রসি এর আগে খেলতেন একজন রাইট ব্যাক হিসেবে। কিন্তু তখনকার ভিসেঞ্জার কোচ জিওভান বাতিস্তা রসির ভেতরে মুক্তো দেখতে পান। স্ট্রাইকার হিসেবে রসির ভেতরে এক্স ফ্যাক্টর টা খুজে পান তিনি এবং নিয়মিত রসিকে স্ট্রাইকার পজিশনে খেলান।

তার ফলটাও হাতেনাতেই পেয়ে যান। প্রথম সিজনেই ২০ বছর বয়সী রসি ২১ গোল করেন। জিতে নেন লিগের সর্বোচ্চ গোলস্কোরারের পুরস্কার।

শারীরিকভাবে দূর্বল রসি প্রথম সীজনেই এমন কিছু করবেন হয়ত সে নিজেও ভাবতে পারে নি। ভিসেঞ্জাকে সিরি ‘বি’ থেকে সিরি ‘এ’-তে তুলে সেখানেও তাণ্ডব চালান রসি। পরের সীজনে আবার ২৪ গোল করেন। এবারও সিরি আ তে গোল্ডেন বুট জিতেন সর্বোচ্চ গোলস্কোরার হিসেবে।

মজার বিষয় হল, দ্বিতীয় স্তর থেকে প্রথম স্তরে এসেই ভিসেঞ্জা সরাসরি লিগে রানার্সআপ হয়ে লিগ শেষ করে।

  • ইতালির রসি

জাতীয় দলে রসির প্রথম ম্যাচ ছিল ১৯৭৭ সালে; বেলজিয়ামের বিপক্ষে। ম্যাচে রসি খুব একটা ভাল না খেললেও ইতালি জয়লাভ করে। লিগে টানা দুই সিজন টপ গোল স্কোরার হওয়াই অনুমিতই ছিল রসির বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়াটা।

১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপে ফ্রাংকো কসিও আর রবার্তো বেতেগা আর রসি মিলে যে ত্রয়ী গঠন করেছিল,তা ফুটবল বিশ্ব আজও মনে রেখেছে। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই ফ্রান্সের বিপ্পক্ষে গোল করে দলকে ২-১ গোলে ম্যাচ জেতান রসি।

ঐ বিশ্বকাপে সবমিলিয়ে তিনটি গোল করেন রসি।

নিজের প্রথম বিশ্বকাপ হিসেবে দল দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নিলেও রসি জিতে নেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলস্কোরার এর পুরস্কার সিলভার বল। এ বাদেও বিশ্বকাপের সেরা একাদশেও রসি স্থান পান।

  • টোটোনেরো কেলেঙ্কারি

ভিসেঞ্জার হয়ে পরের সিজনে রসি আগের মত পারফরম্যান্স না করতে পারায় দলও খারাপ করে। রেলিগেটেড হয়ে যায় ভিসেঞ্জা সিরি-এ থেকে।

টপ লিগে খেলার জন্য ভিসেঞ্জা থেকে রসি লোনে পেরুগিয়াতে যান। এখানেই ঘটে যায় তার লাইফের সবচেয়ে কালো অধ্যায়। ১৯৮০ সালে সিরি আর সাতটি ক্লাব একসাথে জড়িত হয় ম্যাচ গড়াপেটাতে। যা টোটোনেরো কেলেঙ্কারি হিসেবে ফুটবলে পরিচিত। এই সাত ক্লাবের মধ্যে রসির ক্লাব পেরুগিয়াও জড়িত ছিল।

এই কেলেঙ্কারি প্রমানিত হওয়ায় সাত ক্লাবের কোচ, ম্যানেজার এবং খেলোয়াড়েয়াও বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি পান। যার মধ্যে রসিও ছিলেন। যদিও রসি সবসময় এর জন্যে এই অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে নিস্পাপ দাবী করে গেছেন।

তবুও ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশন  তিন বছরের জন্য রসিকে  নিষিদ্ধ করে। ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধ হওয়ায় রসির ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়ে।

তবে তার এই দুঃসময়ে রসির পাশে এসে দাঁড়ায়,তার পুরনো ক্লাব জুভেন্টাস। রসিকে  ১৯৮২ বিশ্বকাপে খেলানোর কথা বিবেচনা করে, জুভেন্টাস তার নিষেধাজ্ঞা কমানোর জন্য আবেদন করে। যার ফলে তার নিষেধাজ্ঞা একবছর কমিয়ে দেয়। রসি ১৯৮২ বিশ্বকাপের আগে মাঠে নামার সুযোগ পান।

প্রথম তিন ম্যাচ মাঠে নামলেও বলার মত কিছু করতে পারেননি রসি।

  • রসি রূপকথা

এতকিছুর পরেও ইতালির কোচ এনজো বেয়ারটজ রসির ওপরে আস্থা রাখেন। তাকে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে ডাক দেন।এই নিয়ে তখন পুরো ইতালি জুড়ে বয়ে যায় সমালোচনার ঝড়। একের পর এক প্রশ্ন,সাংবাদিক, সমর্থক সহ সবাই এনজোকে ধুয়ে দেন তার সিদ্ধান্তের জন্য।

এর ওপর গ্রুপ পর্বের রসির পারফরম্যান্স, এনজোকে আরওই কোণঠাসা করে দেয়।

একটি খেলোয়াড়, যে কিনা গত দুই বছর কোনো ফুটবল এর সাথে ছিল না। না আছে ম্যাচ ফিটনেস, না আগের মত গতি,না স্কিল। সেই খেলোয়াড় গ্রুপের ম্যাচগুলো তে শুধু দৌড়াদৌড়ি করল।

মনে মনে হয়ত প্রতিজ্ঞাই করেছিলেন, তিনি যে ভূত নন বরং দেবতা। রসি এই কথাটা প্রমাণ করেছিলেন।

দ্বিতীয় পর্বে ইতালির সংগী ছিল ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনা তখন ততটা শক্তিশালী না হলেও ব্রাজিল দলটাকে বলা হত ’৭০ পরবর্তী ইতিহাসের সেরা দল। দ্বিতীয় রাউন্ডে  সমীকরণ এমণ দাঁড়ায়, যেখানে ব্রাজিলের বিপক্ষে ইতালির জয় ছাড়া বিকল্প নেই।

এমনকি ড্র করলেও ইতালি বাদ। একে হট ফেভারিট ব্রাজিল, তার ওপর ঘাড়ের ওপর জয়ের বিকল্প না থাকা সমীকরণ।

এদিকে টানা প্রথম চার ম্যাচে গোলহীন থাকা রসি। তার সাথে গত দুবছর ফুটবলের সাথে সম্পর্কহীনতা। সাংবাদিক সমর্থকদের প্রশ্ন বান। দেয়ালে পিঠ  ঠেকার চেয়েও খারাপ অবস্থা।

পাওলো রসি বেছে নিলেন এই প্ল্যাটফর্মকে।

ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচের ৫ মিনিটেই হেডে গোল করে এগিয়ে দিলেন ইতালি কে। ১২ মিনিটে ব্রাজিলের সক্রেটিস দলকে সমতায় ফেরান। ২৫ মিনিটের মাথায় চোখ ধাধানো এক শটে রসি আবার গোল করে ২-১ এ এগিয়ে নিলেন। ম্যাচের ৬৫তম মিনিটে ব্রাজিলের ফ্যালকাও গোল করায় স্কোরলাইন ২-২!

বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পথে ইতালি,সমর্থক দের চোখে কান্না এসে গেছে,তবে কি এই শেষ ইতালির পথ চলা?

আগের চার ম্যাচে ভূত হয়ে থাকা নেমে এলেন স্বর্গের দূত হয়ে ইতালিয়ান দের জন্য। ত্রাতা হয়ে এলেন ৭৪ মিনিটে। মারকো তারদেল্লির থ্রু বলে করে ফেললেন  গোল।

রসি ও রসি,মাই রসি। আওয়ার রসি।

হট ফেভারিট ব্রাজিল কে ৩-২ এ হারিয়ে সেমিফাইনালে নিয়ে গেলেন একা হাতে; ইতালির স্বর্গের দূত। এমন মঞ্চে হ্যাট্রিক করে নিজেকে আবারও চেনালেন রসি। হাজার প্রশ্ন করা সাংবাদিক, সমর্থক সবাই যেন এক মুহূর্তে রসি বন্দনাতে মেতে উঠলো।

হট ফেভারিট ব্রাজিল কে হারানোর সাথে সাথেই যেন ইতালি হিংস্র হয়ে উঠল, জেগে উঠল। তাদের আত্মবিশ্বাস,মনোভাব সবই পালটে গেছিল। যা দেখা গেছিল পরের ম্যাচে।

সেমিফাইনালে পোল্যান্ডের মুখোমুখি হয় ইতালি। এখানেও রসি একা পায়ে(হাতে) পোল্যান্ড কে হারিয়ে দেন।  রসির জোড়া গোলে ২-০ তে ম্যাচ জিতে ফাইনালে ইতালি। ফাইনালে ইতালির প্রতিপক্ষ ছিল তৎকালীন ফুটবলের অন্যতম শক্তিশালী দল পশ্চিম  জার্মানি।

ফাইনালের মঞ্চকেও নিজের হাতেই রাঙালেন রসি!  ৫৭ মিনিটে তার দেয়া গোলেই ১-০ তে এগিয়ে যায় ইতালি। এরপর পুরো ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ইতালির কাছে।

ম্যাচে আর ফেরা হয়নি পশ্চিম জার্মান দের। পরে আরও দুটি গোলের মাধ্যমে ৩-১ এ ম্যাচ জিতে ব্রাজিলের সাথে তৃতীয় সর্বোচ্চ বারের মত বিশ্বকাপ জয়ের অংশীদার হয় ইতালি।

যেই রসির বিশ্বকাপে খেলারই কথা ছিল না, ছিল না স্কোয়াড এ জায়গা পাওয়ার কথা, যেই রসি প্রথম চার ম্যাচে পান নি কোন গোল; সেই রসিই বাচামরার লড়াইয়ে এসে দেবতা হয়ে ধরা দেন ইতালির জন্য। করেন তিন ম্যাচে ৬ গোল। হয়ে যান টুর্নামেন্টের সব চেয়ে বেশি গোলদাতা, জিতেন গোল্ডেন শু।

শুধু তাই নয়। রসি টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় ও নির্বাচিত হোন।

তবে ওসবের চেয়ে রসির কাছদ মূল্যবান ছিল দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা। গুরুত্বপূর্ণ ছিল তার সমালোচনার জবাব দেয়া। গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাকে চেনানোর।

জাতীয় দলের পাশাপাশি জুভেন্টাসের হয়েও কম অর্জন নয় রসির। ক্লাবের হয়ে তিনটি সিরি-এ, একটি কোপা ইতালিয়া, একটি কাপ উইনার্স কাপ, একটি উয়েফা সুপার কাপ এবং একটি ইউরোপিয়ান কাপ জিতেছেন। ব্যক্তিগত অর্জনের খাতায় ১৯৮২ সালের ব্যালন ডি’অর আছে। খেলা ছাড়ার পর ফুটবল নিয়েই ছিলেন। বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন স্কাই সহ বিভিন্ন সংস্থার সাথে।

আশির দশকে রসি শুধু একটা মানুষ ছিলেন না। রসি ছিলেন একটা ব্র্যান্ড। এমনকি বাংলাদেশেও তখন জন্ম নেয়া অনেক ছেলের নাম রাখা হত রসি। এভাবেই ১৯৮০ এর খলনায়ক থেকে থেকে ১৯৮২ এর নায়ক হয়ে যান পাওলো রসি। বোধহয় তাঁর থেকেই ইংরেজি প্রবাদটা যথার্থতা পায় – ফর্ম ইস টেম্পোরারি, ক্লাস ইস পার্মানেন্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link