More

Social Media

Light
Dark

পরাবাস্তব দৃশ্যের ‘বিরাট’ নায়ক

এ যেন পরাবাস্তব একটা দৃশ্য। বিরাট কোহলির চোখটা ছলছল করছে, সেখানে দাঁড়িয়ে – যেখানটায় তাঁকে সবচেয়ে বেশি মানায়। ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে যাওয়াটা তো তাঁর জন্য নতুন কিছু নয়, তারপরও কেন তিনি আবেগে ভাসবেন? এ পরাবাস্তব নয় তো কি। কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলেন বারবার। নিজেকে সামলে নিয়ে একটু পর বললেন, ‘এটা পরাবাস্তব একটা পরিবেশ, আমার কাছে কোন শব্দ নেই, আমি জানি না কিভাবে এটা ঘটেছে।’

শুধু বিরাট? পৃথিবীর প্রতিটা প্রান্তের সবাই কি ভাষা হারিয়ে ফেলেননি?

আচ্ছা, আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেই অর্থহীন সেঞ্চুরিটাই কি বদলে দিল বিরাট কোহলিকে? সম্ভবত। এর আগে তো তাঁকে দল থেকে বাদ দেওয়ার প্রায় দ্বারপ্রান্তেই পৌঁছে গিয়েছিল ভারতের ম্যানেজমেন্ট। বিরাট সেঞ্চুরি করে জানালেন, তিনি ফুরিয়ে যাননি। বিরাট ইজ নট ফিনিশড।

ads

তারপরও, আড়ালে আবডালে বিরাটের সমালোচকের অভাব ছিল না। ডেড রাবারে, তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষের সাথে সেঞ্চুরির মাঝে গৌরব কিসে!

হ্যাঁ, বিরাট সেই হারানো গৌরবের সন্ধানই করছিলেন, বিশ্বকাপের আগে। একটু একটু করে সেই হারানো দিনের ধারটাও যেন ফিরে পাচ্ছিলেন কিছুটা। দরকার ছিল একটা বড় মঞ্চের। সেই মঞ্চের নাম বিশ্বকাপ, ছোট ফরম্যাটের সবচেয়ে বড় আসর। প্রতিপক্ষ পাকিস্তান, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী।

কে ভেবেছিল, সেই প্রতিদ্বন্দ্বীতার আগুনে পাখি হয়ে উড়বেন কোহলি, ডানা ঝাপটে, ভয়ডরহীন চিত্তে। রান তাড়া করতে নেমে এই ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের অসংখ্য অতিমানবীয় স্মৃতি আছে। মিরপুরে শহীদ আফ্রিদির ঝড়, শাহজাহর বুকে জাভেদ মিয়াঁদাদের শেষ বলে ছক্কা – তেমনই একটা বীরত্বের খাতায় এবার হার্দিক পান্ডিয়াকে সাথে নিয়ে নিজের নাম তুললেন বিরাট কোহলি। তাঁদের ১১৩ রানের জুটিটা যে কোনো উইকেটে টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের সেরা জুটি।

আর সেখানে মূল সঞ্চালকের ভূমিকাটা বিরাটই পালন করেছেন তাঁর বিরাট ব্যাট দিয়ে। ৫২ বলে ৮২ রান। এই নিছক পরিসংখ্যান দিয়ে ইনিংসটাকে বোঝানো যাবে না।

ঠিক বিরাট কোহলি সুলভ ইনিংস এটা নয়। শুরুটা করেছিলেন বেশ ধীরে-সুস্থে। দেখে, শুনে। রান রেট বাড়ছিল একদিকে, অন্যদিকে একের পর এক উইকেট হারাচ্ছিল ভারত। মেলবোর্নের বুকে তখন ভারত নয়, বরং পাকিস্তানের পতাকাটাই উড়ছিল পত পত করে।

কিন্তু, ক্রিকেট বিধাতা অন্য ভাবে ভেবে রেখেছিলেন ম্যাচের ভবিষ্যৎ। কে ভেবেছিল, এমন একটা ম্যাচের নায়ক বনে যাবেন বিরাট কোহলি!

১১ তম ওভার শেষেও বিরাটের রান ২৩ বলে ১৫। হার্দিক ছিলেন, উইকেটের মাঝে বারবার বিরাটকে বলছিলেন, ‘আমরা পারব, শুধু খেলতে হবে শেষ পর্যন্ত।’

হার্দিক ভুল বলেননি। বিরাট পেরেছেন, পেরেছে ভারত। খাঁদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকার পরও পাকিস্তানের মুখ থেকে জয় ছিনিয়ে এনেছে। শেষ তিন ওভারে রান নিয়েছে ৪৮, যা কিনা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসেরই রেকর্ড।

এ সবই সম্ভব হয়েছে বিরাটের কারণে। ইনিংসটা কি টি-টোয়েন্টিতে বিরাটের সেরা ইনিংস নয়? বিরাট নিজেও মোহালির সেই ৮২ রানের চেয়ে এগিয়ে রাখলেন এবারের ৮২। যত পুরনো হচ্ছেন, ততই যেন তিনি নেশাটা বাড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছেন।

উত্থান, পতন, নাটক, অতিনাটকীয়তা – সবই ছিল ভারত-পাকিস্তানের এই মহারণে। আর সেই মহারণ তিনিই শেষ হাসি হাসলেন যাকে, এই কাজে সবচেয়ে বেশি মানায়। নিজে তিনি মুখে যতই বলুন না কেন ‘আই লস্ট মাই ওয়ার্ডস!’ আসলে তিনি সকলের মুখে তালা লাগিয়ে তবেই থামলেন।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link