More

Social Media

Light
Dark

একজন ধোনি চাই পাকিস্তানের

বাইশ গজের ভারত ও পাকিস্তানের লড়াইয়ে পৃথিবীটা যেন কিছু মুহূর্তের জন্য থমকে যায়। সীমানার রাজনৈতিক দ্বন্দ থেকে মাঠের ক্রিকেটের লড়াই, ভারত-পাকিস্তানের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার সূচনাটা ঘটে যেন ভ্রূণের মাতৃগর্ভে থাকাকালীনই। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের উত্তেজনাটা তাই আট-দশটা সাধারণ ম্যাচের মত হয় না। এমনিতেও এসব লড়াই – দ্বন্দ্বের গ্যাঁড়াকলে এই দুই দেশের মধ্যে কোন দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হয় না।

দুই প্রতিপক্ষের তাই দেখা মেলে কেবল বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপের মত বড় বড় আসরগুলোতেই। টি- টোয়েন্টি  বিশ্বকাপ ২০২২ এর উদ্বোধনী ম্যাচে ২৩ অক্টোবর পাকিস্তান আরও একবার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ভারতের। ভারত- পাকিস্তান হাই ভোল্টেজ ম্যাচের প্রাক্বালে, তাঁদের বিগত দুই বছরের মুখোমুখি লড়াইয়ের  সমীকরণে চোখ বুলানো যাক।

গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত পাকিস্তান বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচে ভারতকে হারাতে সক্ষম হয়নি। তখন অব্দি ওয়ানডে  বিশ্বকাপের আসরে সাত বার মুখোমুখি হয়ে ভারত সাতটি ম্যাচেই জয়লাভ করেছে এবং টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসরে বার পাঁচেক লড়াই করে পাঁচ বারই ভারত জয়লাভ করেছে। এশিয়া কাপের আসরেও ভারতের জয়ের পাল্লা ভারী।

ads

অবশেষে ২০২১ টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে পাকিস্তান বিশ্বকাপের ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে তাদের প্রথম জয় লাভ করে। সেই সাথে ২০২২ সালের এশিয়া কাপে দুইবার মুখোমুখি হয়ে পাকিস্তান ভারতকে আরেক বার হারাতে সক্ষম হয়েছে। অর্থাৎ গত বারো মাসে তিনবার লড়াইয়ে পাকিস্তান দুইবার হারিয়েছে ভারতকে।

ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপ আসরে পাকিস্তানের দাঁড়াতে না পারা এবং গত এক বছরে পরিবর্তিত চিত্র নিয়ে সাবেক পাকিস্তানি ক্রিকেটার শহীদ আফ্রিদি নিজের ব্যাখ্যা দিলেন। আফ্রিদির মতে মহেন্দ্র সিং ধোনির অধিনায়কত্বের সময় ভারত পাকিস্তানের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং মনোভাব পরিবর্তন করে ফেলেছিলো।

কারণ সেই সময়ে ভারত পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা শুরু করেছিলো। পাশাপাশি শহীদ আফ্রিদি মনে করেন যে পাকিস্তান খেলার প্রতি তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার সাথে সাথে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে।

এতকাল ধরে বিশ্বকাপ দেখায় পাকিস্তানের উপর ভারতের নিখুঁত আধিপত্য, এটিকে একতরফা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিণত করেছিল। কিন্তু গত বারো মাসে সেই দৃশ্যপট পরিবর্তিত হয়েছে। ভারতের একচ্ছত্র আধিপত্য রুখে দেয়া হয়েছে। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি মনে করেন এই সফলতা এসেছে পাকিস্তানের বর্তমান অধিনায়ক বাবর আজমের জন্য। কারণ বাবরের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দলের দৃষ্টিভঙ্গির দারুণ ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।

আফ্রিদি বলেন, ‘মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্ব বিগত কিছু বছরে ভারত-পাকিস্তান উন্মাদনা বলতে যা বোঝাতো সে দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলে দিয়েছিল। কারণ তাঁরা একের পর এক জয় পেয়ে যাচ্ছিল। তখন তাঁরা অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মত বড় বড় দলগুলোর সাথে খেলতে শুরু করল। দু:খিত, তবে এটা বলতে হয় যে তখন তাঁরা পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন আবার পরিস্থিতি আগের মতো হচ্ছে। আপনি নিজেকে কোন পর্যায়ে কাদের সাথে রাখতে চান সেই দৃষ্টিভঙ্গি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’

যাই হোক ধোনির নেতৃত্বের ছায়াতলে ভারত যখন শক্তিমত্তায় ফুলে ফেঁপে ওঠে, তখন তাঁরা শক্তিশালী দলগুলোর মুখোমুখি হয়েছে বারংবার। তখন তাঁরা পাকিস্তানকে কিছুটা অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখেছিল। বিশেষ করে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) আসার পর দু’টি দেশের ক্রিকেটীয় শক্তির পার্থক্যটা দিনকে দিন বেড়েই চলেছিল। যদিও, সম্প্রতি সেই ব্যবধান বাবর আজমের সময়ে কমতে শুরু করেছে।

পাকিস্তান এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নিজেদের দিন ফিরিয়েছে। বাবর আজমের নেতৃত্বে তাঁরা নিজেদের যেকোনো দলকে বুক চিতিয়ে মোকাবেলা করার মত দলে পরিণত করেছে। এই আত্মবিশ্বাস ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিই পাকিস্তানকে সাম্প্রতিক এশিয়া কাপের ফাইনাল অবধি পৌঁছে দিয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link