More

Social Media

Light
Dark

অস্থিতিশীল অধিনায়কত্বের মিউজিক্যাল চেয়ার

পরাজিত হতে হতে যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া উপায় থাকে না। টি-টোয়েন্টিতে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করা বাংলাদেশ দলের সামনেও তাই নতুন শুরুর বিকল্প ছিল না। আর এই নতুন শুরুর জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নিয়েছে নানা পদক্ষেপ। টিম ম্যানেজমেন্টে পরিবর্তন এনেছে, তারুণ্য নির্ভর টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়েছে।

আর এসবের সাথে বদল এসেছে টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কত্বেও। এখন পর্যন্ত চলতি বছরে চারজন ক্রিকেটারের নেতৃত্বে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এই চারজন হলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, নুরুল হাসান সোহান, সাকিব আল হাসান এবং মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।

অনেকটা সময় ধরেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক ছিলেন। ২০১৯ সালে সাকিব আল হাসান ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) নিষেধাজ্ঞায় পড়ার পর এই দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। পরে অবশ্য সাকিব ফিরলেও নেতৃত্বের ব্যাটন মাহমুদউল্লাহর হাতেই ছিল। কিন্তু ২০২১ সালের বিশ্বকাপ থেকে সময়টা মোটেই যায়নি এই ডানহাতির।

ads

ব্যাটসম্যান কিংবা অধিনায়ক – কোন পরিচয়েই সাবলীল ছিলেন না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দল যেমন খারাপ করেছে, তেমনি ব্যাট হাতেও তিনি ছিলেন নড়বড়ে। এছাড়া মাঠে তাঁর বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েও তৈরি হয়েছিল সমালোচনা। আর তাই অফ ফর্ম বিবেচনায় রিয়াদকে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় বিসিবি। সব মিলিয়ে ২০২২ সালে মাহমুদউল্লাহর অধীনে বাংলাদেশ ম্যাচ খেলেছে মোট পাঁচটি; আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুইটি ম্যাচের একটি জিতলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে তিন ম্যাচে একবারও জয়ের স্বাদ পায়নি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বাদ পড়ায় নতুন অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি শোনা গিয়েছিল সাকিব আল হাসানের নাম। কিন্তু তখন এই অলরাউন্ডার ছুটিতে থাকায় বেছে নেয়া হয় উইকেট কিপার নুরুল হাসান সোহানকে। গত আগস্ট মাসে তাঁর নেতৃত্বে জিম্বাবুয়ে সিরিজের দল ঘোষণা করে নির্বাচকরা।

অধিনায়কত্বের শুরুটা অবশ্য ভাল হয়নি নুরুল হাসান সোহানের, প্রথম ম্যাচে স্বাগতিকদের বিপক্ষে হেরে যায় বাংলাদেশ। যদিও সোহানের সাহসী ব্যাটিং সেইম্যাচে ভক্ত-সমর্থকদের আশান্বিত করেছিল। পরের ম্যাচে অবশ্য জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে আফিফ, লিটনরা; কিন্তু দুঃসংবাদ হয়ে আসে সোহানের ইনজুরির খবর।

ফলে আফ্রিকান দলটির বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে নুরুল হাসান সোহানকে বিশ্রামে রেখেই খেলতে হয়েছিল। আর সেদিন টস করতে এসেছিল মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের নবম অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। তবে অধিনায়কত্ব করার ম্যাচে পরাজয় সঙ্গী হয় সৈকতের।

জিম্বাবুয়ে সফর শেষে এশিয়া কাপে দলে ফিরলে সাকিব আল হাসানকে পুনরায় অধিনায়ক ঘোষণা করা হয়। তবে দায়িত্ব নিয়েও ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেননি তিনি, মহাদেশীয় টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বে দুই ম্যাচেই জিততে ব্যর্থ টিম টাইগার্স। হতাশা নিয়েই দেশে ফিরে আসে বাংলাদেশ।

আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এখন বাংলাদেশ দল রয়েছে আরব আমিরাতে। কিন্তু নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ খেলতে উইন্ডিজ থাকায় যোগ দিতে পারেননি দলের সাথে। ফলে সহ-অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানকে আরও একবার দলের নেতৃত্বভার দেয়া হয়। স্বাগতিক আরব আমিরাতকে প্রথম ম্যাচে হারিয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি বয়ে আনেন তিনি।

সবমিলিয়ে দুই দফায় এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে নুরুল হাসান সোহান জিতেছেন দুই ম্যাচে। ব্যাট হাতে তাঁর পারফরম্যান্সেও এসেছে উন্নতি; অধিনায়ক হিসেবে দুই ইনিংসে ব্যাট করা সোহান মোট ৭৭ রান করেছেন, স্ট্রাইক রেট ১৪০ এর বেশি। এছাড়া এই দুই ইনিংসে আউট হননি তিনি; প্রতিপক্ষ ছোট হলেও অধিনায়ক হিসেবে তাই সোহানের ছোট এই পথচলা বেশ সম্ভাবনাময়।

মাত্র এগারো ম্যাচে চার অধিনায়ক টি-টোয়েন্টি দলের অস্থিতিশীল অবস্থা বোঝাতে এমন কিছু বোধহয় যথেষ্ট। এই এগারো ম্যাচে মাত্র তিনটি ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ, ব্যাটিং বোলিংয়ে শ্রীহীনতা ফুঁটে উঠেছে প্রায় প্রতি ম্যাচেই। দ্রুত এই ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙ্গতে না পারলে বিশ্ব মঞ্চে আরও একবার ভরাডুবি ঘটবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের।

বিশ্বকাপ এবং ত্রিদেশীয় সিরিজে সাকিব আল হাসান ফিরলে আবারও তিনি হবেন টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ক্রিকেট মস্তিষ্ক নিয়ে সংশয় নেই কারও; এশিয়া কাপে প্রত্যাশিত ফলাফল না পাওয়া গেলেও তাই সাকিবের উপর নতুন করে ভরসা করাই যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link