More

Social Media

Light
Dark

বৈধ আউটের ‘অবৈধ’ সমালোচনা

ক্রিকেট মাঠে মানকাডিং হয়েছে অথচ বিতর্ক হয়নি, এমন একটি ম্যাচও পাওয়া যাবে না। অবশ্য ক্রিকেট ইতিহাসে মানকাডিংয়ের ঘটনা হয়েছে হাতেগোণা কয়েকটা। তবে এই গত সপ্তাহেই আইসিসি মানকাডিংকে বৈধ রান আউট বলে স্বীকৃত দিয়েছে। এর আগে মানকাডিংয়ে আউট হলেও সেটি আনফেয়ার হিসেবে বিবেচিত হতো।

কিন্তু আগামী ১ অক্টোবর থেকে এই নিয়ম আর থাকছে না। অর্থাৎ খাতাকলমে মানকাডিং বলে কিছু থাকছে না। তবে মানকাডিং বিলুপ্তির আগে আবারো নতুন করে আলোচনায় এসেছে মানকাডিং আউট। এবারে মানকাডিং আউটের ঘটনা ঘটেছে মেয়েদের ক্রিকেটে।

শনিবার লর্ডসের ভারত ও ইংল্যান্ডের মেয়েদের ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচটিতে ১৭০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করছিল ইংল্যান্ড। ১১৮ রানে পড়ে যায় নবম উইকেট। শেষ সঙ্গী ফ্রেয়া ডেভিসকে নিয়ে তবু জয়ের দিকে ছুটছিলেন ডিন। শেষ ৭ ওভারে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ১৭ রান, স্ট্রাইকে তখন ডেভিস। অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা ওভারের তৃতীয় বলটি করার মুহূর্তে ক্রিজ ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে পড়েন নন-স্ট্রাইকে থাকা ডিন। সুযোগ বুঝে বল ডেলিভারি না দিয়ে স্টাম্প ভেঙে দেন দীপ্তি, রান আউট ডিন। এর ফলে ১৬ রানে ম্যাচটি জিতে নেয় ভারত।

ads

ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে মানকাডিং নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়েছিল ২০১৯ সালে। ঐ বছর আইপিএলের রাজস্থান-পাঞ্জাব ম্যাচে জশ বাটলারকে মানকাডিং করেছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এবার ডিনকে দীপ্তি আউট করার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্বিনের প্রসঙ্গ নিয়ে আসেন অনেকে।

৩৬ বছর বয়সী ভারতীয় অফ স্পিনারও চুপ থাকেননি। দীপ্তির প্রতি সমর্থনসূচক ইমোজি ব্যবহার করে টুইটারে লিখেছেন, ‘সবাই অশ্বিনকে নিয়ে এমন মেতে আছে কেন? আজকের বোলিং হিরো তো দীপ্তি।’ মানকাডিং নিয়ে চলমান ঘটনায় কথা বলেন স্টুয়ার্ট ব্রডও। তিনি টুইটে লিখেন, ‘অনেকের অনেক মত থাকতে পারে। তবে আমি এভাবে কখনোই ম্যাচ জিততে চাইব না।’

ইংলিশ আরেক ক্রিকেটার স্যাম বিলিংস আবার একটু কড়া ভাষাতেই বলেছেন, ‘এমন কেউ কি আছে যে ক্রিকেট খেলে কিন্তু এটাকে গ্রহনযোগ্য বলবে? এটা কখনোই ক্রিকেট হতে পারে না।’ অবশ্য ইংলিশ আরেক ক্রিকেটার এলেক্স হেলস দীপ্তির পক্ষই নিয়েছেন। এক টুইটারে তিনি বলেন, ‘উইকেটের ভিতরে থাকা নিশ্চয় এমন কোনো কঠিন কাজ নয়।’

সাবেক ক্রিকেটার অবশ্য ফিল্ডে থাকা আম্পায়ারদের দিকেই আঙুল তুলেছে। তিনি টুইট করেন, ‘বোলারের ফ্রন্টফুট তো নিচেই ছিল। এটা অবশ্যই ডিআরএসে যাওয়া উচিত ছিল।’ এ দিকে অলরাউন্ডার জর্জিয়া এলিস এ বিতর্কিত আউট নিয়ে বিবিসি টেস্ট ম্যাচ স্পেশালে অংশ নিয়ে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, ভারতীয়রা কীভাবে ভাবল যে উইকেটটা এভাবে নিতে হবে? ডিন কোনো সুবিধা নেওয়ার জন্য এগিয়ে যায়নি। খুবই অদ্ভুত লেগেছে ব্যাপারটি। এ ঘটনা ঝুলনের বিদায়ের মুহূর্তটিকে ম্লান করে দিয়েছে’।

তবে এত আলোচনা সমালোচনার পরেও অধিনায়ক হারমানপ্রিত কাউরকে পাশে পেয়েছেন দীপ্তি শর্মা। ম্যাচ শেষে রান আউটটি নিয়ে করা প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘আমি তো মনে করেছিলাম প্রথম ৯ উইকেট নিয়ে জিজ্ঞাসা করবেন। ওই উইকেটগুলো নেওয়া তো সহজ ছিল না। আর এ ধরনের আউট আইসিসির আইনেই আছে। আমার তো মনে হয়, দীপ্তির করা এই আউট ব্যাটারদের আরও সচেতন করবে’।

মানকাডিং শব্দটা ক্রিকেটে প্রথম আসে ১৯৪৭ এর দিকে। সে বছরে অস্ট্রেলিয়ার বিল ব্রাউনকে এভাবে আউট করেছিলেন ভারতের ভিনু মানকড়। এরপর যখনই বল ডেলিভারির মুহূর্তে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া ব্যাটসম্যানকে আউট করার ঘটনা ঘটেছে, মানকাডের নাম এসেছে। মূলত ভিনু মানকড়ের নামেই মানকাডিংয়ের উদ্ভাবন। অনেকে এই আউটকে ক্রিকেটের স্পিরিটের পরিপন্থী দাবী করলেও, এর সাথে আইনের কোনো বিরোধ নেই। বরং, এরকম আউটের সমালোচনা যারা করে – তারা কার্যত এই আইনেরই বিরোধীতা করছে।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link