More

Social Media

Light
Dark

জিমি নিশাম, বর্ণালী জীবনের আঁধার

দুঃখের জীবন তার। বিশ্বকাপ ফাইনালের মঞ্চে লর্ডসে নায়ক হতে গিয়ে হয়েছেন ট্র‍্যাজেডির শিকার। সুপার ওভারে সেদিন জস বাটলার উইকেট ভেঙে দেওয়ার সাথে সাথে বদলে গিয়েছিল তার জীবন। সেই উত্তেজনা সামলাতে না পেরে প্রাণ গিয়েছিল তার ছোটবেলার শিক্ষকের। অথচ মাঠের বাইরে বর্ণিল এক চরিত্র তিনি। দারুণ হিউমারে ভরা সব টুইট করেন, মজা করেন সতীর্থদের সাথে। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের এই দু:খী মানুষের নাম জিমি নিশাম, স্কট স্টাইরিশ পরবর্তী যুগে কিউইদের ফিনিশার।

নিউজিল্যান্ডে ক্রিকেটটা ঠিক কেউ সিরিয়াসলি খেলে না। এমনিতেই জনসংখ্যা প্রতিবেশি অস্ট্রেলিয়ার তুলনায় অনেক কম। তারউপর রাগবির জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী, ফুটবলটাও কম নয়। কিন্তু ক্রিকেটটা ঠিক যেন ধাতে সয় না কিউইদের। তারপরও যুগে যুগে তাসমান সাগরপাড় থেকে উঠে এসেছে কালজয়ী সব ক্রিকেটার। স্যার রিচার্ড হ্যাডলী, মার্টিন ক্রো, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, স্টিভেন ফ্লেমিংরা শাসন করেছেন ক্রিকেটবিশ্ব। সেই মশালই সামনে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন জিমি নিশামরা।

ঘরোয়া ক্রিকেটে শুরুটা অকল্যান্ডের হয়ে হলেও সাফল্যের শুরুটা হয় ওটাগোতে দল পরিবর্তন করার পর। ঘরোয়া ক্রিকেটে একই ম্যাচে চল্লিশোর্ধ্ব রান এবং পাঁচ উইকেট নেবার পর ডাক আসে জাতীয় দল থেকে। দারুণ ব্যাটিং দক্ষতার সাথে কার্যকরী বোলিং, সঙ্গে যোগ করুন দুর্দান্ত ফিল্ডিং স্কিল।

ads

সবমিলিয়ে স্কট স্টাইরিশ পরবর্তী যুগে এমন কাউকেই খুঁজছিলো নিউজিল্যান্ড। অভিষেক ম্যাচেই সব আলো নিজের দিকে টেনে নেন নিশাম, ভারতের বিপক্ষে আট নম্বরে ব্যাট করতে নেমে খেলেন অপরাজিত ১৩৭ রানের ইনিংস। সেঞ্চুরির ধারা অব্যাহত রাখেন পরের ম্যাচেও, বনে যান ইতিহাসের প্রথম কিউই ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম দুই ম্যাচেই সেঞ্চুরি করা প্রথম ক্রিকেটার। যদিও লাল বলের ক্রিকেটে ক্যারিয়ারটা দীর্ঘায়িত হয়নি তার।

দুর্দান্ত হিটিং অ্যাবিলিটির কারণে ক্রমেই ফিনিশার হিসেবে কিউইদের ভরসার প্রতীক হয়ে উঠেন। তবে তার জন্য সবচেয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বোধহয় ২০১৯ বিশ্বকাপ। সেবার বিশ্বকাপের শুরু থেকেই দারুণ চনমনে ছিলেন, দারুণ কিছু করে দেখাবার তাড়নাটা ছিল। গ্রুপপর্বে কার্লোস ব্র‍্যাথওয়েট যখন আরেকটা ক্যারিবিয়ান রূপকথা লেখার দ্বারপ্রান্তে ঠিক সেই সময়ে বোলিং এ এসে জিতিয়েছিলেন দলকে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট।

সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষেও নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট, পাশাপাশি ম্যাট হেনরির বলে লুফে নিয়েছিলেন দীনেশ কার্তিকের দুর্দান্ত ক্যাচ। বাঁ দিকে ঝাপিয়ে পড়ে এক হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে নেয়া সে ক্যাচ আজও মুগ্ধতা ছড়ায় ক্রিকেটপ্রেমীদের মাঝে। ফাইনালে সুযোগ হয়েছিল নিজের ব্যাটিং প্রতিভা দেখানোর। সেখানে ভালো খেললেও সেটা বিশ্বকাপ জেতানোর মতো ছিল না, জোফ্রা আর্চারের সুপার ওভারে ছক্কা হাঁকালেও সেটা জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না।

ইংল্যান্ডের সমান রান করলেও বাউন্ডারির মারপ্যাঁচে থাকতে হয় রানার্স আপ হয়েই। অথচ বিশ্বকাপের আগের ১৮ মাস দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছিল নিশামের। অফফর্মের কারণে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অবসর নিয়ে ফেলার, কিন্তু বোর্ড এবং অধিনায়কের পরামর্শে সে সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসেন। 

বিশ্বকাপ ফাইনালের সেই হারটা যেন বদলে দিয়েছিল নিশামকে। তাই তো পরের বছর টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আবারো যখন প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড এবং দল আছে পা হড়কানোর দ্বারপ্রান্তে। তখনি দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে, এবার আর অন্য কাউকে স্ট্রাইক না দিয়ে স্ট্রাইকটা রাখেন নিজের কাছেই।

১১ বলে ২৭ রান করে সেবার বাড়ি ফেরার টিকিট ধরিয়ে দিয়েছিলেন ইয়ন মরগ্যান, বেন স্টোকসদের। অবশ্য ফাইনালে আর পেরে উঠেননি, অস্ট্রেলিয়াও জিতে নেয় তাদের ইতিহাসের প্রথম টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। নিশাম আরও একবার থেকে যান পরাজিতের দলেই। 

দারুণ হিটিং অ্যাবিলিটির সুবাদে অবশ্য বিশ্বজুড়ে ফ্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর নিয়মিত মুখ তিনি। আইপিএল, সিপিএল, গ্লোবাল টি টোয়েন্টি সবখানেই খেলে বেড়াচ্ছেন দাপটের সাথেই। অবশ্য সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বয়সটাও। সেকারণেই কিনা এবার ফিরিয়ে দিয়েছেন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের বাৎসরিক চুক্তির প্রস্তাব, ক্রিকেটটা এখন খেলতে চান বেছে বেছে। 

যেকোনো খেলাতেই জয়-পরাজয়ই শেষ কথা। ইতিহাস সবসময়ই বিজয়ীরাই লিখে বলে তাতে থাকে না বিজিতদের কথা। কিন্তু জিমি নিশামরা রয়ে যান ক্রিকেটভক্তদের মনে। দৃঢ়চিত্তে লড়াই করে বারবার ফিরে আসার গল্পটা যে তার মতো করে লিখতে পারে না কেউই। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link