More

Social Media

Light
Dark

নব্য জুয়ায় আটক ভারতের ক্রিকেট

টিভিতে এবারের এশিয়া কাপ দেখে থাকলে একটা দৃশ্য আপনার চোখে পড়বার কথা। বিজ্ঞাপন বিরতিতে বারবারই ফিরে আসছিলেন যুবরাজ সিং। সাদা শার্টে বাউন্ডারি মারছেন, উল্লাস করছেন আর খুশিতে ফেটে পড়ছেন বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ। আপাত দৃষ্টিতে নিরীহ স্পোর্টস ব্লগের বিজ্ঞাপন মনে হলেও আসলে এটি ছিল একটি বিতর্কিত বেটিং সাইট ‘ওয়ানএক্সবেট’ এর বিজ্ঞাপন।

গত কয়েক মাসে বেটিংসাইট শব্দটার সাথে বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীরা ভালোভাবেই পরিচিত হয়ে গেছেন সাকিব আল হাসানের সুবাদে। যদিও সাকিব পরবর্তীতে সেই চুক্তি বাতিল করেন। ম্যাচফিক্সিং, বেটিং, বাজি কিংবা জুয়া এসব নিষিদ্ধ হওয়ায় জুয়াড়িয়া ইদানীং বের করেছেন নতুন পন্থা। স্পোর্টস ব্লগের নামে চালাচ্ছেন বেটিং সাইট। নামে ব্লগ কিংবা নিউজ সাইট হলেও সেটা কেবল অ্যালিবাই। ব্লগের আড়ালে চলছে স্পোর্টস বেটিং এর জমজমাট ব্যবসা, সৃষ্টি হচ্ছে নানা অপরাধের।

যুবরাজ সিং যেই সাইটের বিজ্ঞাপন করেছেন, সেই ওয়ানএক্সবেট কে ইতোমধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যেখান থেকে ওয়ানএক্স বেটের জন্ম, সেই রাশিয়া থেকেই ২০১৯ সাল থেকে বিতাড়িত এই সাইট। মোরগ লড়াই আর ক্যাসিনোতে অবৈধ কার্যক্রম চালানোর সুবাদে কালোতালিকাভুক্ত করা হয় এই সাইটকে।

ads

এর ফলে অবশ্য তুমুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তাদের, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দলগুলো তাদের চুক্তি বাতিল করে ওয়ানএক্স বেটের সাথে। সেই বছরেরই জুনে আরো একবার আলোচনায় আসে এই প্রতিষ্ঠান। নরওয়েজিয়ান এক স্পোর্টস ম্যাগাজিন জানায় বিশ্বফুটবলের অন্যতম দামি এই স্পন্সরশিপ প্রতিষ্ঠান আসলে দেউলিয়া হয়ে গেছে।

এরপরই ওয়ানএক্স বেট নিজেদের ব্যবসার প্রসারে কিংবা ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে উঠার তাগিদে পা রাখে ভারতে। ভারতীয় আইনে বেটিং নিষিদ্ধ হওয়ায় তারা স্পোর্টস ব্লগ হিসেবে নিজেদের আত্নপ্রকাশ করে। ঠিকই একই সময়ে একই উদ্দেশ্য নিয়ে আরেকটি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা শুরু করে ভারতে, ‘ফেয়ার প্লে’। বলিউড তারকা রনবীর কাপুর এবং বক্সার ম্যারি কমকে ব্র‍্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ঘোষণা করে ফেয়ারপ্লে।

এইধরনের অবৈধ সাইটে বাজি ধরতে ব্যবহারকারীদের প্রথমে নিজেদের ব্যক্তিগিত তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। এরপর ওয়ানটাইম পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে লগিন করতে হয়ে। একবার লগিন করার পর ব্যবহারকারীরা ক্রিকেট, কাবাডি, ভলিবল,ফুটবল, ব্যাডমিন্টনসহ সবধরনের খেলায় বাজি ধরতে পারেন। এই সাইটগুলোতে প্রচলিত প্রায় সকল মাধ্যমেই পেমেন্টের সুবিধা আছে। অন্যদিকে সাইটগুলো সাধারণত কোনো তৃতীয় পক্ষের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এর ব্যবহারকারীদের খুব দ্রুত পেমেন্ট করে।

‘এই ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খোলবার সময় কিংবা ব্যবহারের সময় আপনি অবগত আছেন আপনি যেই দেশে আছেন সেখানে আপনার কার্যক্রম বৈধ কিনা। আপনি অবশ্যই আপনার লিগাল অ্যাডভাইজারের সাথে পরামর্শ করেছেন এখানে অ্যাকাউন্ট খোলবার আগে’ – ওয়ানএক্স বেটে অ্যাকাউন্ট খোলার আগে এই ধরনের একটা সতর্কবার্তা পাবেন আপনি।

এই ওয়েবসাইটগুলো সাধারণত কুরাকাও এবং সাইপ্রাসের মতো দেশের নামে রেজিস্টার করা যেখানে বেটিং বৈধ। নেদারল্যান্ডস, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ছাড়াও কেনিয়া, ইসরায়েল, পোল্যান্ড ইতোমধ্যেই ওয়ানএক্সবেটকে নিজেদের দেশে অবৈধ ঘোষণা করেছে। হাস্যকর ব্যাপার হলো স্পেন এবং ফ্রান্সে নিষিদ্ধ হলেও দুইদেশের সবচেয়ে বড় দুই ক্লাব এফসি বার্সেলোনা এবং প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের স্পন্সর হিসেবে নাম আছে ওয়ানএক্স বেটের।

ভারতে ব্যবসার বিশাল বাজারে সর্বশেষ সংযোজন এই দুই অবৈধ প্রতিষ্ঠান। নিউজ এবং স্ট্রিমিং সাইট হিসেবে বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি ইতোমধ্যেই ডাফাবেট এবং পারিম্যাচ নামের আরো কয়েকটি অবৈধ সাইটের সাথে স্পন্সরশীপ চুক্তি করেছে। যাদের সাথে সম্পৃক্ততা আছে ঘরোয়া লিগের ক্রিকেট, ফুটবল,কাবাডি দলগুলোর।

মানুষ খেলাধুলায় সম্পৃক্ত হয় নির্মল বিনোদনের আশায়। কিন্তু বিনোদনের উদ্দেশ্য কলুষিত হয় বেটিং এর কালো থাবায়। ভারতের কানপুরে চলমান রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেটেরও অন্যতম স্পন্সর এই ওয়ানএক্সবেট। শচীন টেন্ডুলকার, ব্রায়ান লারা, জন্ডি রোডস কিংবা বাংলাদেশের শাহাদাতদের শরীরে শোভা পাচ্ছে এর বিজ্ঞাপন। এই দৃশ্যটা কি ক্রিকেটের জন্যই অশোভনীয় নয়?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link