More

Social Media

Light
Dark

নাথান ব্র‍্যাকেন, এক নীরব ধারাবাহিকতা

পাঁড় ক্রিকেটভক্ত না হলে তার নামটা আপনার মনে থাকবার কথা নয়। অবশ্য যে দলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন রিকি পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ম্যাথু হেইডেন, ব্রেট লি, শেন ওয়ার্ন, গ্লেন ম্যাকগ্রারা তাদের ছাপিয়ে ঝাঁকড়াচুলো এই পেসারকে মনে না রাখাটা দোষের কিছু নয় মোটেই। ব্রেট লি’র মতো এক্সপ্রেস গতি নেই, নেই ম্যাকগ্রার মতো নির্ভুল লাইন-লেংথ।

তবু, নিজের কাজটা নিরবে নিভৃতে করে গিয়েছেন, ছিলেন দুবারের বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য। দুই দিকের সুইং করানো আর বলের নানা ভ্যারিয়েশন এই দুই মিলিয়েই ব্যাটম্যানদের বিভ্রান্ত করে গিয়েছেন বারবার। বলা হচ্ছিল সাবেক অজি পেসার নাথান ব্র‍্যাকেনের কথা, তারকাদের ভীড়ে যিনি আজও রয়ে গিয়েছেন আড়ালেই।   

ঘরোয়া ক্রিকেটে শুরুটা নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে। ১৯৯৮ সালে কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে অভিষেক হলেও পায়ের নিচে শক্ত মাটি খুঁজে পেতে সময় লেগেছে বছর তিনেক। ঘরোয়া ক্রিকেটে বছর তিনেক পারফর্ম করার পর ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রথমবারের মতো ডাক পান জাতীয় দলে। এমসিসিতে অভিষেকে মাত্র এক উইকেট পেলেও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন দারুণ সুইংবোলিংয়ের এক পসরা সাজিয়ে। 

ads

ত্রিদেশীয় সিরিজের পাঁচ ম্যাচেই নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন ব্র‍্যাকেন। আহামরি পারফর্ম না করলেও নির্বাচকরা ঠিকই বুঝতে পারেন এ ছেলে লম্বা রেসের ঘোড়া। ব্র‍্যাকেনের পরবর্তী সফর ছিল ভারতে। উপমহাদেশে বোলিং করা যেকোনো পেসারের জন্যই চ্যালেঞ্জের। অথচ কি দারুণভাবেই না সে পরীক্ষায় উতরে যান ব্র‍্যাকেন, বিশাখাপত্তমে দারুণ বোলিং করে ২১ রানে নেন দুই উইকেট। 

অ্যাশেজ- যেকোনো ক্রিকেটারের জন্যই এক স্বপ্নের নাম। ব্র‍্যাকেনও স্বপ্ন দেখতেন ব্যাগি গ্রিন পড়ার, মর্যাদার এ লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিত্ব করার। ভারতের বিপক্ষে দারুণ পারফরম্যান্সের সুবাদে সেই সুযোগ পেতেও দেরি হয় না। কিন্তু ভাগ্যবিধাতা বোধহয় সেবার তার পক্ষে ছিলেন না, স্কোয়াডে থাকলেও সিরিজ শুরুর আগেই বাদ পড়েন ইনজুড়ির কারণে। 

ইনজুরি থেকে ফিরলেও অজি দলে পুনরায় ফেরাটা সহজ হয়নি ব্র‍্যাকেনের জন্য। ব্রেট লি, গ্লেন ম্যাকগ্রা ছাড়াও অ্যান্ডি বিকেল, জ্যাসন গিলেস্পি, মাইকেল ক্যাসপ্রোভিচরা তখন সমানতালে খেলে যাচ্ছেন হলুদ জার্সিতে। কিন্তু ২০০৩ বিশ্বকাপের ঠিক আগে জেসন গিলেস্পির ইনজুরির সুবাদে ভাগ্য খুলে যায় ব্র‍্যাকেনের।

এক ইনজুরি কেড়ে নিয়েছিল তার সুযোগ, তেমনি আরেক ইনজুরির সুবাদে পান জীবনের দ্বিতীয় সুযোগ। এ সুযোগ আর হেলায় হারাননি তিনি, ইংল্যান্ড আর শ্রীলংকার বিপক্ষে দারুণ পারফর্ম করে জায়গা করে নেন বিশ্বকাপ দলে। যদিও বিশ্বকাপে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি, তবু স্কোয়াডের সদস্য হিসেবে হয়ে যান বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য।

২০০৩ সালটা ছিল ব্র‍্যাকেনের জন্য ভীষণ পয়মন্ত। বিশ্বকাপ জেতার পাশাপাশি গ্লেন ম্যাকগ্রার ইনজুরি তাকে সুযোগ করে দেয় নতুন বলে নিজের কর্তৃত্ব তুলে নেয়ার। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদানও তিনি দিয়েছেন দারুণভাবে, প্রতিম্যাচেই প্রতিপক্ষের টপঅর্ডারকে সাজঘরে ফিরিয়েছেন দ্রুতই। আট ম্যাচে ১৮ উইকেট নিয়ে ভারত এবং নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে আয়োজিত ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতান অস্ট্রেলিয়াকে।

সে বছরই স্বপ্নের ব্যাগি গ্রিন পড়ার সৌভাগ্য হয় ব্র‍্যাকেনের। যদিও ভারতের বিপক্ষে সেই সিরিজে নিজের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তিনি, তিন ম্যাচে নেন মাত্র ছয় উইকেট। ফিরে আসার আগেই আবারও ইনজুরির কবলে পড়ে চলে যেতে হয় মাঠের বাইরে। ইনজুরি থেকে ফিরেই অবশ্য শেফিল্ড শিল্ডের ফাইনালে নেন ছয় উইকেট। অবশ্য লাল বলের চাইতে সাদা বলেই বেশি কার্যকরী ছিলেন ব্র‍্যাকেন। 

টানা ভালো খেলার সুবাদে ২০০৮ সালে একদিনের ক্রিকেটে বোলারদের আইসিসি র‍্যাকিংয়ের শীর্ষে ওঠেন ব্র‍্যাকেন। জোহানসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেট। যদিও সেই ম্যাচটা বিখ্যাত হয়ে আছে অজিদের ৪৩৪ রান তাড়া করে প্রোটিয়াদের জেতার সুবাদে।  

সেই বছরেই ভারত আর শ্রীলংকাকে নিয়ে আয়োজিত ত্রিদেশীয় সিরিজের ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৯ সালে জিতেছিলেন বর্ষসেরা অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারের খেতাবও। কিন্তু হাঁটুর ইনজুরি বড্ড ভোগাচ্ছিল ব্র‍্যাকেনকে। ২০১১ সালে তাই বিদায় নেন সব ধরনের ক্রিকেট থেকে।

লাল বলের ক্রিকেটে ক্যারিয়ারটা দীর্ঘায়িত না হলেও সাদা বলের ক্রিকেটে ব্র‍্যাকেনের রেকর্ড ঈর্ষণীয়। এই ফরম্যাটে ১১৬ ম্যাচ খেলে শিকার করেছেন ১৭৪ উইকেট। অবসরের পর অবশ্য বিবাদে জড়িয়েছিলেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সাথে। ইনজুরির সময় অবহেলার শিকার হবার প্রতিবাদে আইনি লড়াইয়ে নেমেছিলেন ক্রিকেট বোর্ডের বিরুদ্ধে। অন্যায়ের বিপক্ষে দারুণ সরব এই ক্রিকেটার একবার নির্বাচনেও দাঁড়িয়েছিলেন। 

ব্র‍্যাকেন হয়ত নিজের সময়ের সবচেয়ে সেরা পেসার ছিলেন না, কিন্তু ঠিকই নিজের দায়িত্বটা পালন করে গিয়েছেন আড়ালে আবডালে। কে জানে হয়ত অন্য সময়ে জন্মালে সেরা পেসারের খেতাবটাও হয়ত জিতে নিতেন এই সোনালীচুলো পেসার। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link