More

Social Media

Light
Dark

এক নি:সঙ্গ শেরপার লড়াই

এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে ১৮ বলে ১২, দ্বিতীয় ম্যাচে তুলনামূলক দুর্বল হংকংয়ের বিপক্ষে ১৩ বলে ২১। এরপর সুপার ফোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৬ বলে ২৮। বারবার সেট হয়েও কেন যেন ইনিংস বড় করতে পারছিলেন না রোহিত শর্মা। নিজের সেরাটা দিতে বারবার ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি, বিদ্রুপও ভেসে আসছিল মাঝেমধ্যে।

কিন্তু রোহিত শর্মা জানেন কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়, জানেন কিভাবে জবাব দিতে হয়। প্রিয় প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কাকেই বেছে নিয়েছেন প্রত্যাবর্তনের মঞ্চ হিসেবে। ভিতরে জমানো এতোদিনকার সব আক্ষেপ যেন বারুদ হয়ে ফেটেছে৷ টসে জিতে লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা যখন ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে ভারতকে তখন থেকেই ছন্দময়ী ভারতীয় কাপ্তান।

দলের অবশ্য শুরুটা ভাল হয়নি। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে অফ ফর্মে থাকা লোকেশ রাহুল আউট হয়েছেন মাহিশ থিকসানার বলে। এরপর শূণ্য রানেই ফিরেছেন চলতি এশিয়া কাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক বিরাট কোহলি। কিন্তু লঙ্কান বোলারদের এরপর আর চেপে বসতে দেননি রোহিত শর্মা। সুরিয়াকুমার যাদবকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন প্রতিরোধ।

ads

আসিথা ফার্নান্দোর করা পঞ্চম ওভারে এক ছয় আর এক চার মেরে প্রথমবার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন রোহিত শর্মা। এরপর ব্যাটকে হাতিয়ার বানিয়ে শাসন করেন প্রতিপক্ষ বোলারদের। শ্রীলঙ্কার সেরা বোলার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার উপর সবচেয়ে বেশি ঝড় বইয়ে দিয়েছেন রোহিত শর্মা।

ফাইনালে টিকে থাকার দৌড়ে টিকে থাকার জন্য এই ম্যাচে জয়টা বড্ড প্রয়োজন ছিল ভারতের। কিন্তু টস ভাগ্যে হেরে আগে ব্যাট করতে নামা ভারত প্রথমেই ধাক্কা খেয়েছে, কেননা আরব আমিরাতে লক্ষ্য তাড়া করে জেতার রেকর্ড রীতিমতো অবিশ্বাস্য। স্রোতের প্রতিকূলে জিততে তাই ভারতের দরকার ছিল বড় সংগ্রহের।

দলের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়েই চওড়া হয়েছে রোহিত শর্মার ব্যাট। মাত্র ১৫ রানে দুই উইকেট হারানো দলকে টেনে তুলেছেন একা হাতে। বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ওপেনার আরো একবার প্রমাণ করেছেন নিজের সামর্থ্য। তাঁর দুর্দান্ত ইনিংস দেখে বলাই যায়, ক্যাপ্টেন লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট।

চামিকা করুনারত্নের বলে পাথুম নিশাকার হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন রোহিত শর্মা। তবে আউট হওয়ার আগে নিজের কাজটা বেশ ভালোভাবেই করেছেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। মাত্র ৪১ বলে তুলে নিয়েছেন ৭২ রান। পাঁচ চার এবং চার ছয়ে খেলা এই ইনিংসে রোহিতের স্ট্রাইক রেট ১৭৫ এর বেশি।

প্রথম ২৬ বলে রোহিত শর্মা প্রায় ১৪২ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৩৭ রান। আর শেষ পনেরো বলে করেছেন ৩৫ রান যেখানে তাঁর স্ট্রাইক রেট ২৩৩ এর বেশি।

যেকোনো টি-টোয়েন্টি দল টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের কাছে যেমন ব্যাটিং প্রত্যাশা করে ঠিক তেমনটাই করেছেন রোহিত শর্মা। দ্রুত দুই উইকেটের পতন হলেও অতিরক্ষণশীল হয়ে পড়েননি। বরং স্ট্রাইক রোটেট করে চাপ সামাল দিয়েছেন, এরপর টি-টোয়েন্টি সুলভ তাণ্ডব চালিয়েছেন।

সব মিলিয়ে ভারতের জন্য বড় সংগ্রহের মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছেন রোহিত শর্মা। ফিনিশারদের জন্য দারুণ সুযোগ সৃষ্টি করেছেন তিনি। যদিও এই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেনি হার্দিক পান্ডিয়া, ঋষাভ পান্তরা। রোহিত শর্মা আউট হওয়ার পরে ধীরে ধীরে কমে এসেছে রানের গতি। একসময় ১২ ওভারে দলীয় ১০০ রান পেরিয়ে যাওয়া ভারত স্বপ্ন দেখেছিল ২০০ রানের কাছাকাছি স্কোর গড়া। তবে ফিনিশারদের ব্যর্থতায় সেই আশা আর পূরণ হয়নি এশিয়া কাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের।

ম্যাচের ফলাফল যাই হোক রোহিত শর্মার স্বরূপে ফেরাটা স্বস্তির কারণ ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য। কেননা এবারের এশিয়া কাপে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পাশাপাশি ভারতের ভাবনায় রয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তাই বিশ্বজয়ের স্বপ্নে বিভোর ভারত খুব করেই চাইবে রোহিত শর্মার ব্যাট থেকে এভাবেই রান ফোয়ারা সৃষ্টি হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link