More

Social Media

Light
Dark

রবি বিষ্ণয়, মাঠকর্মী থেকে ভারতের ‘সারপ্রাইজ প্যাকেজ’

পাকিস্তানের ইনিংসের চতুর্থ ওভারের কথা। ভারতের তরুণ স্পিনার রবি বিষ্ণয়ের চার নম্বর বলটি বুঝতেই পারেননি বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বাবর আজম। সেই বলে ক্যাচে দিয়ে ফিরেছেন প্যাভিলিয়নে। পুরো ম্যাচেই এই লেগ স্পিনারকে খেলতে হিমশিম খেয়েছে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানেরা। রান বন্যার ম্যাচে ৪ ওভার মাত্র ২৬ রান দিয়েছেন বিষ্ণুয়।

ভারত-পাকিস্তানের মত হাই ভোল্টেজ ম্যাচে অভিজ্ঞ রবিচন্দ্রন আশ্বিনকে হারিয়ে দলে জায়গা করে নেয়া, চাপের মুখে সেরা পারফর্ম করা – এসবই প্রমাণ করে রবি বিষ্ণয়ের ক্রিকেটীয় প্রতিভা। তবে ক্রিকেট জীবনের শুরু মোটেই এতটা মধুর ছিল না তাঁর জন্য। ক্রিকেটের মাঠ কর্মী থেকে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ, অতপর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) হয়ে জাতীয় দলে – রবি বিষ্ণুয়ের ক্রিকেট জীবনে রয়েছে উত্থান আর পতনের গল্প।

অন্যান্য অনেকের মতই রবি বিষ্ণয়ের বাবা চাননি ছেলেকে ক্রিকেট মনোযোগী হোক। বরং তাঁর ইচ্ছে ছিল ক্রিকেট ভুলে বিষ্ণুই একজন ভাল শিক্ষার্থী হয়ে উঠুক। তবে স্থানীয় কোচ শাহরুখ পাঠান বিষ্ণয়ের বাবাকে বুঝিয়ে আবারো এই তরুণকে ক্রিকেটে ফিরিয়ে আনেন।

ads

শাহরুখ পাঠান এরপর রাজস্থান রয়্যালসের অনূর্ধ্ব ১৯ দলের ট্রায়ালে সুযোগ করে দলন রবি বিষ্ণয়কে। সেখানকার ইন ফর্ম এক ব্যাটসম্যানকে দুইবার আউট করে নিজের প্রতিভার জানান দেন বিষ্ণুই। ভিনু মানকড় ট্রফি টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে পাঁচ উইকেট তুলে দলে জায়গা পাকা করেন তিনি।

অবশ্য রবি বিষ্ণুয় নিজে হতে চেয়েছিলেন মিডিয়াম পেসার। কিন্তু শারিরীক গড়ন পেসার – সুলভ না হওয়ায় তাঁর কোচেরা লেগ স্পিন বোলিং শুরু করতে বলে। কোচের পরামর্শ অনুযায়ী রাজস্থানের এই ক্রিকেটার লেগ স্পিনার হয়ে উঠেন। এছাড়া তৎকালীন সময়ে ভারতীয় ক্রিকেটে লেগ স্পিনারের ঘাটতি ছিল। আর তাই সহজে দলে জায়গা করে নেয়ার জন্য বিষ্ণয়কে লেগ স্পিন করতে বলেছিলেন কোচেরা।

অন্য সাধারণ লেগ স্পিনারদের সাথে রবি বিষ্ণয়ের বোলিং অ্যাকশনের পার্থক্য রয়েছে। অন্যরা যেখানে রানআপে সোজা থাকার চেষ্টা করে, সেখানে বিষ্ণুই কিছুটা বেঁকে রান আপ নেন। অনেকটা অনিল কুম্বলের মতই৷ তাছাড়া এই লেগি দৌড় শুরু করেন প্রায় ১২-১৪ গজ দূর থেকে, যেখানে অন্য লেগ স্পিনাররা সাত গজের মত রান আপ নেয়।

বোলিং অ্যাকশনের এই পার্থক্য রবি বিষ্ণয়ের লেগ স্পিনকে আরো ধারালো করেছে। বিশেষ করে গুগলি ডেলিভারিগুলো জোরে করতে পারছেন তিনি। আর তাই হঠাৎ করে ধেয়ে আসা গুগলি বল বুঝে উঠার সময় পাননা ব্যাটাররা।

ভারতীয় জাতীয় দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের প্রিয় শিষ্যদের একজন রবি বিষ্ণয়। এই কিংবদন্তি ব্যাটার সবসময়ই চেষ্টা করেন এই তরুণকে সাহায্য করতে। ইতোমধ্যে অ্যাকশনে পরিবর্তন না করার জন্য বিষ্ণুইকে বলেছেন দ্রাবিড়। সেই সাথে যথাসম্ভব স্ট্যাম্প টু স্ট্যাম্প বল করতে পরামর্শ দিয়েছেন।

শাহরুখ পাঠান সহ স্থানীয় কোচদের কাছে সবসময়ই ঋণী থাকবেন রবি বিষ্ণয়। কার পার্কিংয়ের পাশে ক্রিকেট খেলা একটা ছেলেকে পেশাদার ক্রিকেটে জায়গা করে দেয়ার পিছনে বড় অবদান আছে তাদের৷ শাহরুখ পাঠান এবং তাঁর সঙ্গী প্রদায়েত সিং যখন ক্রিকেট একাডেমি চালু করেছিলেন সেই একাডেমির প্রথমদিকের ছাত্র ছিল রবি বিষ্ণয়।

টাকা অভাবে অনুশীলনের জন্য মাঠ নিজেরাই তৈরি করেছিলেন তারা। আর এই মাঠ তৈরির শ্রমিকদের মধ্যে অন্যতম ছিল রবি বিষ্ণয়। রবি বিষ্ণয়ের বাবা এখন পুরোনো স্মৃতি মনে করে হাসেন। একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হয়েও ছেলেকে পড়াতে না পারার আক্ষেপ ছিল তাঁর। কিন্তু ছেলে তাঁর ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে, এখন শুধুই সাফল্য কামনা করেন তিনি।

এখনো অবশ্য আরো অনেকটা পথ বাকি। সেরাদের একজন হতে চাইলে একাকি যোদ্ধার মত লড়াই চালিয়ে যেতে হবে রবি বিষ্ণয়কে। পারফরম্যান্স আর ধারাবাহিকতা থাকলে বিশ্বের অন্যতম সেরা লেগ স্পিনার হয়ে উঠতে পারবেন তিনি। কি জানি, হয়তো অনিল কুম্বলের মতই আরেক গ্রেট লেগ স্পিনার হয়েই অবসর নিবেন রাজস্থানের এই তরুণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link