More

Social Media

Light
Dark

আমেরিকার বিষাণ সিং বেদি!

সিলিকন ভ্যালি স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচ। উন্মক্ত চাঁদের সিলিকন ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে উড়িয়ে এনেছে ফিদেল এডওয়ার্ডসকে। খবরটা জানলেন হারমিত সিং, ভারতীয় ক্রিকেটার। তিনি নির্ভার, স্রেফ বললেন, ‘ফোড় দেঙ্গে!’ হারমিত সিং এমনই। আগে থেকে কাবু তিনি হতে জানেন না।

ভারতীয় ক্রিকেটার হারমিত সিংয়ের ক্যারিয়ারকে ছোটখাটো এক ‘রোলার কোস্টার রাইড’ বলা চলে। মাত্র নয় বছর বয়সে শিবাজি পার্ক জিমখানা তাঁর প্রতিভাকে খুঁজে বের করে। ১৬ বছর বয়সে রমাকান্ত আচরেকারের নজরে আসলেন। পেয়ে গেলেন স্কলারশিপ। অনূর্ধ্ব ১৬ ও অনূর্ধ্ব ১৯ পর্যায়ে মুম্বাইয়ের হয়ে খেলেছেন। ২০১২ সালে উন্মুক্ত চাঁদের নেতৃত্বে বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় অনূর্ধ্ব ১৯ দলেরও সদস্য ছিলেন হারমিত।

তবে, হারমিতের এর পরের রাস্তাটা মসৃণ ছিল না। বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য, তার ওপর বিষাণ সিং বেদির মত অ্যাকশন – জাতীয় দলের সুযোগটা সহজে পাওয়ার কথা ছিল হারমিতের। কিন্তু যে ভারতেই যে অসংখ্য অসাধারণ ক্রিকেট প্রতিভা তৈরি হয়, সেখানেই সম্ভবত হারমিত সিংয়ের জৌলুসটা মলিন হয়ে গেল। ওদিকে আবার ২০১৩ সালের আইপিএল স্পটফিক্সিং বিতর্কে নামতাও জড়িয়ে গেল। যদিও বিসিসিআই এর তদন্তে তাঁর সরাসরি ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ads

তাঁর সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য তিনি কখনো ভারতীয় জাতীয় দলের জার্সি পরার সুযোগ পাননি। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ৩১ ম্যাচ খেলে করেছেন একটি সেঞ্চুরি ও একটি হাফ সেঞ্চুরি-সহ মোট ৭৩৩ রান। উইকেট নিয়েছেন ৮৭ টি। যার মধ্যে চারটি ফাইফার রয়েছে। এই বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনারের ইকোনমি রেট ছিলো ৩.০৮, যা সত্যিই দারুণ। কিন্তু, বয়সের চাকাকে তো আর থামিয়ে রাখা যায়না।

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বয়সটা বেড়েই যাচ্ছিল। কিন্তু কিছুতেই যেন ক্যারিয়ারটা গুছিয়ে উঠতে পারছিলেন না হারমিত সিং। জাতীয় দলে ডাক নেই, ঘরোয়া লিগ, আইপিএলেও ছিলেন অনেকটা উপেক্ষিত। তাই হয়তো বিকল্প রাস্তাটা দেখতেই হতো। হারমিতও তাই করলেন। নতুন দেশে নতুন করে জীবন শুরু করার বাসনায় ভারত ছেড়ে পাড়ি জমালেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।

অনেকটা হতাশা নিয়েই ২০২১ সালের জুলাইয়ে ভারতীয় ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন। তারপর তিন বছরের চুক্তিতে আমেরিকার নয়া ফ্রাঞ্চাইজি আসর মেজর লিগ ক্রিকেটে খেলতে চলে গেলেন। এই লিগে তিনি সিয়াটল থান্ডারবোল্টসের হয়ে খেলছেন। অবশ্য তাঁর আগে মেজর লিগে যুক্ত হওয়ার জন্য উন্মুক্ত চাঁদ, মনন শর্মার মতো ক্রিকেটাররাও দেশ ছেড়েছিলেন। আমেরিকান ক্রিকেট লিগে খেললে বড় ধরনের আর্থিক নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। এই দিকটি মাথায় রেখেই ভারতীয় ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর কথা অকপটে স্বীকার করেছিলেন হারমিত।

জীবনের নতুন অধ্যায়ে হারমিত এখন সাদা বলের একজন দারুণ অলরাউন্ডার। নিজেকে যেন ঘষেমেজে নতুন করে ঢেলে সাজিয়েছেন। কেবল এই মৌসুমেই তিনি ব্যাট হাতে তিনি ১৪১ ডেলিভারিতে ৩০ টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। হারমিত তাঁর বোলিং অ্যাকশনে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছেন, যেগুলোর সাথে কিংবদন্তি বিষাণ সিং বেদির সাথে মিল রয়েছে

আমেরিকার মাইনর লিগ ক্রিকেটের ফাইনালে আটলান্টা ফায়ার দলের বিপক্ষে লড়ছে হারমিত সিংয়ের সিয়াটল থান্ডারবোল্টস মুখোমুখি হয়েছিল। অধিনায়ক হারমিত সিংয়ের নেতৃত্বে সিয়াটেল থান্ডারবোল্টস তাদের প্রথম মাইনর লিগ ক্রিকেট টিটোয়েন্টি শিরোপা জিতে নেয়।

আবেগাপ্লুত হারমিত তখন বলেন, ‘২০১৩ সালের ট্রায়ালে আমি যে মানসিক অশান্তির মধ্যে ছিলাম, এরপর আমি অনেক কিছু শিখেছি। ছিটকে যাওয়া সুযোগের জন্য আমি কান্না বন্ধ করে দিয়েছি। সেই ঘটনার পর যখনই আমি ক্রিকেট খেলতে পেরেছি তখনই আমি নিজেকে অত্যন্ত সৌভাগ্যবান মনে করেছি। এরপর আমি যে ক্রিকেটই খেলেছি, তা রঞ্জি ট্রফি হোক কিংবা কোলাপুরের মতো জায়গার এক্কেবারে সাধারণ ক্রিকেট হোক সবসময়ই জয়ের তীব্র ক্ষুধা নিয়ে খেলেছি।’

হারমিত সিংয়ের পরিকল্পনা জুড়ে এখন যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় দলের হয়ে খেলার বাসনা। নিজ জন্মভূমির হয়ে পারেননি, তাতে কি! অন্তত ভিনদেশের জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়াতে চান। বিদেশি কোনো ক্রিকেটার যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে চাইলে তাকে ৩০ মাস ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতে হয়। হয়তো সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে হয়তো ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখা যাবে তাঁকে।

বয়সটা তখন ত্রিশ ছাড়াবে। তবে, ওই যে কথায় আছে না, ‘বেটার লেট দেন নেভার’। একটু দেরিতেই না হয় হারমিতের স্বপ্নটা পূর্ণতা পাবে!

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link