More

Social Media

Light
Dark

ম্যানচেস্টার লাল হবেই, একদিন!

ব্যাপারটা হল, এই সিজনে বার্সেলোনা আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সবথেকে বেশী সাইন করিয়েছে এখনও পর্যন্ত। বার্সেলোনার কথা পরে ভাবা যাবে, আগে নিজের ঘর সামলে তারপর পরের সংসারে নাক গলানো উচিত। কাজেই, ট্রিপ টু ম্যানচেস্টার, যারা লিগটা শুরু করেছে খানিক অদ্ভুতভাবে। প্রথম দুটো ম্যাচ বিশ্রী হেরে পরের দুটো ম্যাচে এমন খেলেছে যে সমর্থকদের নিভু নিভু আশার প্রদীপ হঠাৎ দপ!

মাতা, কাভানি, পোগবা এবং মাটিচ – গত দু’তিনটে মৌসুম ধরে এই চারটে প্লেয়ার কোনও না কোনওভাবে দলের পক্ষে মঙ্গলজনক ছিল। কাভানির প্রেসিং আর পজিশন সেন্স ভাল, বিশেষ করে প্রেসিং, গোলটা চিনত ফলে মার্শিয়াল দিব্যি ওয়েজেস নিয়ে খুশিই থাকত। মনে রাখতে হবে এই টিমটাই ২০২০-২১ এ সেকেন্ড, এরাই সাউদাম্পটনকে ৯-০ তে হারায়। অর্থাৎ বোঝা যায় খাতায়-কলমে টিম খারাপ ছিল না। তবে যে টিম আগের মৌসুমেই দ্বিতীয় হল, পরের সিজনে তার এমন অবস্থা যে কনফারেন্স লিগে ট্রান্সফার হচ্ছিল আর একটু হলে। তাকিয়ে থাকতে হয়েছিল ওয়েস্ট হ্যামের শেষ ম্যাচের দিকে।

রোনালদো। ১৮টা গোল করে যে লোকটা প্রায় ভরাডুবি থেকে বাঁচিয়ে তুলল, আদতে গোটা টিম শুধুমাত্র তার প্রতিই নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় গোটা টিম আর টিম থাকনি, ওয়ান ম্যান আর্মি হয়ে গেছে। যারা লিগ শুরুতে লিডসকে ৫-১ এ হারায় তারা শেষে এসে ইউরোপাতে জায়গা পাওয়ার লড়াইয়ে। প্রথম কারণ ব্রুনো নিজের জায়গা এবং ফর্ম, দুটোই ভুলে যাওয়া। দ্বিতীয় কারণ ঝুলস্য ঝুল ডিফেন্স, তৃতীয় কারণ ম্যাসন গ্রিনউডের মতো এমন স্বার্থপর প্লেয়ারকে দিনের পর দিন রাইটে খেলিয়ে যাওয়া, যে কিনা ফাইনাল থার্ডে গিয়ে পাস খেলে না। চার, লুক’শয়ের মতো পারফেক্ট টাইমে পজিশন নিতে না পারা লেফট ব্যাক। আর লাস্ট বাট নট দি লিস্ট, হ্যারি ম্যাগুয়েরের মতো কদর্য ডিফেন্ডারকে চান্সের পর চান্স দেওয়া, যেখানে ভারানের মতো ক্লাসিক প্লেয়ার ডাগআউটে বসে নখ খায়!

ads

এবং তাই, জিনিয়াস এরিক টেন হ্যাগের আমল শুরু, যেখানে প্রথম সাইনিং অ্যাজাক্স থেকে উড়ে আসা লিসান্দ্রো মার্টিনেজ। ধুরন্ধর অ্যাটাকারকে চোখে চোখে রাখা থেকে শুরু করে প্রতিটা ফাইনাল বলের প্রতি নজর, সেকেন্ড বলের প্রতি একটা লড়াই – যার সঙ্গী হয়ে গেল ভারান। টেন হ্যাগের প্ল্যানের মধ্যে থাকা কাসেমিরো চার ব্যাকের সামনে, চার ব্যাক অর্থাৎ ডালো-লিসান্দ্রো-ভারান-মালেশিয়া।

এই শেষের জনের কথা বলতেই হচ্ছে, লিভারপুলের বিরুদ্ধে ওর পারফরম্যান্স জীবনে ভোলার নয়। এরা দু’জন চলে আসাতে বেঞ্চে জায়গা হল লিন্ডেলফ আর ম্যাগুয়েরের। টাকার দরকার এবং স্কোয়াড ডেপথ আছে, তাই টেলেস সেভিয়ায় আর এরিক বাই মার্সেইয়ে লোনে। দুটো সেন্টার ব্যাকের দুটো ব্যাক আপ, সঙ্গে রাইট ব্যাকে ভ্যান বিসাকা আর লেফটে শ’ ব্যাক আপ। লিংক আপ প্লেয়ার হিসেবে যাদের কেউই তেমন কার্যকরী নয়। খেয়াল রাখতে হবে, টেন হ্যাগ আসার পরে ডালো তার পুরনো ফর্ম ফিরে পাওয়ার জায়গায়।

মাঝমাঠে এই সিজনের তুমুল সাইনিং কাসেমিরো( বল ডিস্ট্রিবিউশন তেমন ভাল না হলেও একটা সলিড সিডিএম)। যে পিভট এতদিন করে আসতো ফ্রেড-ম্যাকটমিনে এবং প্রতিটা কাউন্টার অ্যাটাকে পজিশন অবধারিত ভুলত, সেখানেই ৪-২-৩-১ ছকে ২ পজিশনে এবার কাসেমিরোর সঙ্গে শুরু করছে এরিকসন। যে ফর্মেশনটা অ্যাটাকের সময় হয়ে যাচ্ছে ৪-৩-৩। অর্থাৎ ব্যাক আপ পাওয়া গেল দুই মিডকে। এতেই ক্রিয়েট হচ্ছে কার্যকরী হচ্ছে বিল্ড আপ প্লে, ওভারল্যাপে দু’দিক দিয়ে উঠে আসছে মালেশিয়া-ডালো, আর একটু নিচে এরিকসন, ডানদিকে স্যাঞ্চোর কাট ইন করে ঢুকে পড়া আর বাঁদিকে এলেংগার উইং বিল্ড, মাঝে রাশফোর্ড, মাঝে সেই লুকোনো নম্বর ১০ হয়ে ঘুরছে ব্রুনো। এই ডানদিক, বাঁদিক আর সিএম – তিনটে পজিশনের সাথে একমাত্র লিংক যার সে হচ্ছে ব্রুনো।

আদতে, গোটা টিমটাই ব্রুনোর, যে কারণে সুপারস্টার রোনালদো পর্যন্ত বেঞ্চে। এই টিম আসলে খেলতে চায় পজিশনাল ফুটবল, যেটা পুরনো কম্বো দিয়ে সম্ভব নয়। অ্যাটাকিং মিড প্রচুর, আর প্রেসিং গেমে বয়স একটা ফ্যাক্টর, কাজেই এ টিমে মাতার প্রয়োজন আর নেই। স্লো মুভমেন্ট হটাও, কাজেই নো পোগবা, নো মাটিচ। টিমটা তৈরি হচ্ছে মেশিনের মতো। ৯০ মিনিট শুধু প্রেস, প্রেসিং ফুটবলকে জল দিয়ে গুলে খেতে চাইছে এই নতুন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

এবার ডানদিকে এল অ্যান্টনি। অর্থাৎ স্যাঞ্চো বা রাশফোর্ডের মধ্যে কেউ একজন বেঞ্চে শুরু করবে। আই থিঙ্ক স্যাঞ্চোই বসবে। বা বাঁদিকে রাশফোর্ড আর ডানদিকে অ্যান্টনিকে ঠেলে দিয়ে মাঝে রনকে দিয়েও স্টার্ট করা যেতে পারে। টেন হ্যাগের প্ল্যানে যদিও সেটা একেবারেই নেই। ব্যাক আপ স্কোরার হিসেবেই এই সিজনে লাল জার্সি গায়ে চাপাবেন প্ৰিয় বদ্দা। তবে, এত সবকিছুর মাঝে একজনের কথাও বলা দরকার এবং তিনি হলেন আরেক অ্যান্টনি, মার্শিয়াল। ওই কম্বিনেশনে ও সবচেয়ে আইডিয়াল, থ্রু’টাও বেশ ভালই দিতে পারে, কাজেই টেন হ্যাগ খুব সম্ভবত মার্শিয়ালকে তালিকার প্রথম দিকেই রাখবে।

দা ভিয়ার বল ডিস্ট্রিবিউশনটা যদি আর একটু ভাল হতো – প্যানিক না করলেই পারে। রিফ্লেক্স, শটস্টপিং আর এরিয়াল বলের দিক থেকে ওকে কেউ বিট করতে না পারলেও, ৫ নম্বর প্রশ্নে অসাধারণ উত্তর লিখে বাকিগুলো একেবারে ছেড়ে আসা তো ঠিক নয়। আর এই কারণেই নতুন গোলকির সন্ধানে রেড ডেভিলসরা। কারণ, টম হিটন ইস নট দ্য রাইট অপশন ফর ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড প্রেসিং।

দেখা যাক, টেন হ্যাগ তো আছেই। সময় বলবে। আবার ম্যানচেস্টার লাল হবেই, একদিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link