More

Social Media

Light
Dark

নাসিম ‘শাহেনশাহ’

একটা গোলাকার আবরণ। তাঁর কেন্দ্রবিন্দু যেই ছেলেটা সে তো কেবল পার করেছেন কৈশরের গণ্ডি। আর তাঁকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা বাকি সবাই এগিয়ে। বয়স অথবা অভিজ্ঞতায়। টি-টোয়েন্টিতে ষাট খানা উইকেট রয়েছে হাসান আলীর পকেটে। সে হাসান আলী এগিয়ে এলেন সবুজ রাঙা এক টুপি হাতে। চড়িয়ে দিলেন ১৯ বছর বয়সী নাসিম শাহের মাথায়। আর অমনি একটা স্মিত হাসি ছড়িয়ে গেল তাঁর মুখে।

টেস্ট অভিষেকটা হয়েছিল ষোল বছর না পেরুতেই। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তিনি অজি ব্যাটারদের বেশ ভুগিয়েছিলেন। উইকেটের খাতাটা ঠিক ততটা সমৃদ্ধ করে ফেলতে পারেননি। তবে কাঁপন ধরিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের মনে। কিশোর একজন বোলার খেলছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাঘা একটা দলের বিপক্ষে। স্নায়ুচাপটা সামলে রাখাটা তখনও নিশ্চয়ই আয়ত্তে আসেনি।

তিনি ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পরিবেশ। মাঝে ওয়ানডে অভিষেকটাও হয়ে যায় তাঁর। তিনি অপেক্ষায় ছিলেন তিন ফরম্যাটের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হতে। সে সময়টা এসে গেল তাঁর। তবে মঞ্চটা যে এবার বিশাল বড়। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চ। জাতীয় দলের হয়ে কোন একটা ফরম্যাটে অভিষেক হওয়াটাই তো বেশ আনন্দের। জাতীয় দলই তো এক সুবিশাল ক্যানভাস।

ads

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুধু রঙের জোগানটা দেয়। আর এশিয়া কাপের মত টুর্নামেন্টগুলো সে ক্যানভাস আর রঙের মিশ্রন ঘটানোর একটা সুযোগ। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শুরুতেই সে সুযোগ নিজের হাতে সামনে পেয়ে গেলেন নাসিম শাহ। এই অভিষেকটা চির অমলিন থেকে যাবে নাসিমের স্মৃতিতে। এই অভিষেকের তো আরও এক মাহাত্ম রয়েছে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে তো আর নতুন করে কিছু বলবার নেই।

তেমনই এক ম্যাচেই অভিষেকের ক্যাপটা নিজ মাথায় পরে নিলেন ১৯ বছর বয়সী নাসিম শাহ। তবে এই সুযোগটা হয়ত তিনি পেতেন না। পাকিস্তানের এই সময়ের সেরা পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদির ইনজুরি তাঁকে সে সুযোগটি করে দেয়। তিনি নিজের ভাগ্যকে হয়ত এ জন্যে পিঠ চাপড়ে দিতেই পারেন। পাকিস্তানের সেরা বোলারের পরিবর্তে তাঁকে যোগ্য মনে করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। এর থেকে বড় কিছু হয়ত নাসিম শাহের মত তরুণ প্রত্যাশাও করেন না।

একটা বার চিন্তা করুণ, এশিয়া কাপের মত মঞ্চে তাঁর অভিষেক, তাও আবার ভারতের বিপক্ষে। চিরপ্রতিদ্বন্দীদের বিপক্ষে তিনি মাঠে নেমেছেন আবার সময়ের সেরা বোলারের বদলে। ইতোমধ্যেই তো নাসিমের অভিষেকটা মহিমান্বিত হয়ে গেছে বহুভাবেই। তবে নাসিমের মধ্যে রয়েছে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ক্ষুধা। নিজের একটা ছাপ ফেলে রেখে যেতে বদ্ধপরিকর তিনি। তাইতো ইনিংস শুরুতেই তিনি আঘাত হানেন।

প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলটা ইনসাইড এডজ হয়ে উপড়ে ফেলেন স্ট্যাম্প। ব্যাস! প্রস্থান লোকেশ রাহুলের। ঠিক সে ওভারেই আরও একটি উইকেট পেয়ে যেতে পারতেন নাসিম। বিরাট কোহলি অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল খেলতে বেশ দ্বিধাদন্দে পড়ে যান। সেটা জেনে অফ স্ট্যাম্পের বাইরের চ্যানেল বরাবর বল ছোঁড়েন। সে বলে আবারও খোঁচা লেগে বল ছুটে যায় স্লিপের দিকে। অল্পের জন্যে বিরাটের উইকেটটা পাওয়া হয়নি তাঁর।

এরপর আর এক ওভার করে বিরতিতে চলে যান নাসিম। আবার ফেরেন ১৫তম ওভারে। ফিরেই আবারও তাঁর ছোড়া বল আঘাত করে স্ট্যাম্পে। এবারও ওভারের দ্বিতীয় বল। আর সুরিয়াকুমার যাদবের উইকেট নিজের করে নেন নাসিম। ক্রমশ ভারতের হাত থেকে ম্যাচ দূরে সরে যেতে শুরু করে।

এরপর আবার ১৮ তম ওভারে বল হাতে বাইশ গজের কাছে ফেরেন নাসিম। পায়ের পেশিগুলো খানিকটা পীড়া দিচ্ছিল তখন। কন্ডিশনের কারণেই বোধহয় পেশিগুলো হাল ছেড়ে দিচ্ছিল। তবুও অদম্য নাসিম। তিনি যেন হাল ছাড়বেন না। রবীন্দ্র জাদেজাকে আউট করার একটা সুযোগ পেলেও, তিনি মাঠে লুটিয়ে পড়েন। কাতরাতে থাকেন। আবার উঠে বোলিং প্রান্তে চলে যান। শেষ করেন নিজের কোটার সবগুলো ওভার।

তবে খেলার ফলাফল যাই হোক, নাসিম শাহ নিজের অভিষেক ম্যাচটা রাঙিয়ে গেলেন সেটা বলতে নিশ্চয়ই কারও দ্বিধা হওয়ার কথা নয়। চিরস্মরনীয় একটা ম্যাচ হয়েই নাসিমের স্মৃতির পাতায় মাঝে মধ্যেই উঁকিঝুঁকি দেবে এই ম্যাচ। ম্যাচের ফল যাই হোক, নাসিমের এই লড়াকু পারফরম্যান্সটা মনে থাকবে অনেকদিন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link