More

Social Media

Light
Dark

‘অন্য’ অর্জনের সুবাতাস

এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কেমন করবে, সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে নতুন শুরুর পরিকল্পনা কাজে লাগবে কি না এমন আলোচনায় এখন মুখর ক্রিকেট পাড়া। সাকিবের দল এখনো মাঠে নামেনি তবে বাংলাদেশের জন্য ভিন্ন রকমের এক সাফল্যের সংবাদ ভেসে এসেছে আরব আমিরাত থেকে। এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তানের মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন দুই বাংলাদেশি আম্পায়ার।

দেশের আম্পায়ারিং প্যানেলে পরিচিত মুখ মাসুদুর রহমান মুকুল থাকবেন দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ম্যাচে অন-ফিল্ড আম্পায়ার হিসেবে। এছাড়া গাজী সোহেল আছেন চতুর্থ আম্পায়ারের দায়িত্বে। শুধু বাংলাদেশের আম্পায়ার নয়, দর্শকদের জন্যও এমন খবর নি:সন্দেহে গর্বের। কেননা এবারই প্রথমবার মহাগুরুত্বপূর্ণ কোনো ম্যাচে দেখা যাবে বাংলাদেশের ম্যাচ অফিশিয়াল।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার প্রায় দুই যুগ পেরিয়ে গিয়েছে। ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশ এই সময়ে কিছুটা হলেও নিজেদের স্থানটা পাকাপোক্ত করেছে। কিন্তু আইসিসির আম্পায়ারদের এলিট প্যানেলে জায়গা পাওয়া যেকোনো বাংলাদেশির জন্য অধরাই রয়ে গিয়েছে। মাঝে দুই-একজন সম্ভাবনা তৈরি করলেও শেষপর্যন্ত কেউই পারেনি এই কৃতিত্ব অর্জন করতে।

ads

এমনকি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ম্যাচেও দেশি আম্পায়ারদের দেখা যেত কালেভদ্রে। তবে এই অবস্থার অবসান ঘটেছে। করোনা কালীন সময়ে আইসিসির স্থানীয় আম্পায়ার ব্যবহার শুরু করাটা বাংলাদেশিদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে। নিজেদের ম্যাচ পরিচালনার সক্ষমতা প্রমাণের সুযোগ পান তাঁরা।

আর এই সুযোগ কাজে লাগাতে মোটেও ছাড় দেননি শরফুদৌল্লা ইবনে সৈকত, মাসুদুর রহমান মুকুলরা। নিরপেক্ষতার পাশাপাশি সঠিক আম্পায়ারিংয়ের মাধ্যমে নজর কেড়েছেন ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং বিদেশি বোর্ডগুলোর।

বাংলাদেশি আম্পায়ারদের পারফরম্যান্সে আইসিসি অভিভূত হয়েছে এবং অভিবাদন জানিয়ে ই-মেইল পাঠিয়েছে বলে জানান গাজি সোহেল। তিনি আরো যোগ করেন যে, গত বছরের অস্ট্রেলিয়া সিরিজ শেষে দলটির টিম ম্যানেজার নিজ দেশে ফেরার পরে আম্পায়ারিং নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে ই-মেইল পাঠিয়েছিলেন।

এখানে কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়টা বড় একটা ভূমিকা রেখেছে। বিদেশি আম্পায়ারদের তখন পাওয়া না যাওয়ায় দেশের আম্পায়ার ও ম্যাচ অফিসিয়ালদের বাজিয়ে দেখা গিয়েছে। আর এই সুযোগটা ভালভাবে কাজে লাগাতে পেরেছেন মুকুল-সোহেলরা।

ঘরের মাঠে শেষ সাতটি হোম সিরিজের সবগুলো ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ম্যাচ পরিচালনা করেছেন তারা। এছাড়া টেস্টে একজন আইসিসির এলিট আম্পায়ারের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন শরিফুদ্দৌলা সৈকত। সব মিলিয়ে বাংলাদেশি আম্পায়ারদের সঠিক সিদ্ধান্ত দেয়ার হার ৯২%, অবাক করার মত হলেও সত্যি যে গত দুই বছরে এর চেয়ে বেশি সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি আর কোন দেশের আম্পায়ার।

এমন দুর্দান্ত সাফল্যের পুরস্কার দ্রুতই পেয়েছেন গাজী সোহেলরা। আইসিসির বৈশ্বিক ইভেন্টে সুযোগ পেতে শুরু করেছেন তারা। আইসিসির নারী বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনায় ছিলেন শরিফুদ্দৌলা সৈকত। এছাড়া মাসুদুর রহমান মুকুল এবং গাজী সোহেল অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে আম্পায়ারিং করেছেন। আবার আইসিসির টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়ার রাউন্ডের বি-রাউন্ডে দেখা গিয়েছে গাজী সোহেলকে।

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আবেদন নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় প্রতিটি ক্রিকেটপ্রেমীর আবেগ মিশে আছে এই দ্বৈরথে। এমন রোমাঞ্চকর ম্যাচে দুই বাংলাদেশীকে দায়িত্ব দেয়াটা প্রমাণ করে যে আম্পায়ার হিসেবে এখন এই লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা অনেক বেশি ভরসা-যোগ্য।

সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, আইসিসির এলিট প্যানেলের অংশ হয়ে বিশ্বকাপের মত টুর্নামেন্টে ম্যাচ পরিচালনা করবেন বাংলাদেশের আম্পায়াররা; কি জানি এই এশিয়া কাপে ভাল করলে হয়তো আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুযোগ মিললেও মিলতে পারে। আপাতত নজর ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের দিকে, দুই দেশের কোটি কোটি সমর্থকদের সামনে কতটা চাপমুক্ত থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারেন মাসুদুর রহমান মুকুল সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link