More

Social Media

Light
Dark

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মৃত্যুকুপ

ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে কঠিনতম টুর্নামেন্ট সম্ভবত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। প্রতিটা দেশের ঘরোয়া লিগের চ্যাম্পিয়নদের ঠাই হয় সেখানটায়। লড়াইটা হয় চ্যাম্পিয়নদের মধ্যে। এক চুল পরিমাণ জায়গা ছাড়তে যেন নারাজ প্রতিটা দল। তবুও একটা অপবাদ আছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বগুলো নাকি খুব একটা জমজমাট হয় না। দুই লেগের খেলাটা তেমন একটা উন্মাদনার নাকি সৃষ্টি করে না।

তবে স্রেফ অবান্তর বলেই এই কথাগুলোকে উড়িয়ে দেওয়া যায়। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রতিটা পর্বেই হয় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। গ্রুপ অব ডেথগুলো গ্রুপ পর্বের উন্মাদনাটা বাড়িয়ে দেয় শতগুনে। এই যে যেমন এবারের গ্রুপ সি। বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ আর ইন্টার মিলানের মত দল রয়েছে। এই গ্রুপের লড়াইটা নিঃসন্দেহে জমবে বেশ। এমন কিছু গ্রুপ অব ডেথ নিয়েই থাকছে আজকের আয়োজন।

  • ১৯৯৮/৯৯ (গ্রুপ বি)

ছয় ম্যাচের পাঁচটিতে ড্র করে নিশ্চয়ই পরের পর্বের চিন্তা করাটা অমূলক। জুভেন্টাস, গালাতাসারাই, অ্যাতলেটিকো বিলবাও ও রোসেনবার্গ। এই ছিল সে মৌসুমের ডেথ গ্রুপ। এখনকার প্রেক্ষাপট চিন্তা করলে জুভেন্টাস বাকি সব দলগুলো থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে। তবে সেই নব্বই দশকে চিত্রনাট্য ছিল ভিন্ন। তবুও পাঁচ ম্যাচ ড্র করে সেবার পরবর্তী রাউন্ড অবধি পৌঁছেছিল জুভেন্টাস। সে সময়ে গ্রুপে থাকা প্রায় প্রতিটা দল ছিল সমান শক্তিশালী। সেবারের গ্রুপ পর্বটা জমেছিল বেশ। গালাতাসারাইও জুভেন্টাসের সমান আট পয়েন্ট সংগ্রহ করেছিল। স্রেফ গোল ব্যবধানে তাঁরা চলে যায় দ্বিতীয় স্থানে।

ads

  • ২০০৩/০৪ (গ্রুপ বি)

পরবর্তী রাউন্ডে সেই গ্রুপ থেকে উৎরে যাওয়া দলগুলো আর থেকে যাওয়া দলগুলোর মধ্যে পয়েন্টের ফারাকটা ছিল মাত্র দু’এক পয়েন্টের। সেই গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরবর্তী রাউন্ড নিশ্চিত করেছিল ইংলিশ ক্লাব আর্সেনাল। সমান পয়েন্ট ছিল রাশিয়ান ক্লাব লোকোমোতিভ মস্কো আর ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানের। তবে গোল ব্যবধানে ইন্টারকে চলে যেতে হয় ইউরোপা লিগে। আর ডায়নামো কিয়েভ সাত পয়েন্ট সংগ্রহ করলেও পার করতে পারেনি গ্রুপ পর্বের বাঁধা। এই সামান্য বিবরণ থেকেই তো আন্দাজ করে নেওয়া যায়, ঠিক কতটা লড়াই হয়েছিল সেবার।

  • ২০২১/২২ (গ্রুপ বি)

গ্রুপ পর্বের সবগুলো ম্যাচ জিতে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে শেষ করেছিল ইংলিশ ক্লাব লিভারপুল। এইটুকু পরিসংখ্যান দেখেই কোনভাবেই ভেবে নেওয়ার সুযোগ নেই যে এই গ্রুপটা ছিল একেবারে ম্যাড়ম্যাড়ে। বরং লড়াইটা হয়েছে জম্পেশ। লিভারপুল নিঃসন্দেহে সে মৌসুমের অন্যতম সেরা দল ছিল। মৌসুমের প্রায় সব কয়েকটি শিরোপা জেতার দাবিদার ছিল তাঁরা। এমন দল গ্রুপে থাকার পরও অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ, পোর্তো আর এসি মিলান দ্বিতীয় স্থানটির জন্য শেষ অবধি লড়াই চালিয়ে গিয়েছিল। সে মৌসুমের গ্রুপ অব ডেথ ছিল বি।

  • ২০১০/১১ (গ্রুপ এ)

প্রায় এক যুগ আগের সে মৌসুমের গ্রুপ ড্রয়ের পর ঠিক আন্দাজ করে নেওয়া কঠিন ছিল যে ঠিক কোন গ্রুপটা হতে চলেছে গ্রুপ অব ডেথ। তবে প্রথম পর্বের খেলা শুরু হওয়ার পর সে ধোঁয়াশা কেটে গিয়ে গ্রুপ-এ সামনে চলে আসে। টটেনহ্যাম হটস্পার্স, আর ইন্টার মিলান স্বাভাবিকভাবেই ফেভারিট ছিল। আর কোনরকম অঘটন ছাড়াই এই দুই দল চলে যায় পরবর্তী রাউন্ডে। তবে চমক হিসেবে হাজির হয়েছিল জার্মান ক্লাব ওয়ার্ডার ব্রেমেন আর ডাচ ক্লাব টুয়েন্টে। এই দুই দল বেশ কঠিন পরীক্ষায় ফেলে টটেনহ্যাম ও ইন্টার মিলানকে।

  • ২০০২/০৩ (গ্রুপ এ)

আবারও এক গ্রুপ এ। এখানেও গ্রুপ অব ডেথের বর্ণনাটা প্রায় একই। এখানেও দুই পরাশক্তি আর্সেনাল ও বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের অবস্থান ছিল। খালি চোখে যে কেউ বলে দেবে এই দুই ক্লাবেরই যাওয়ার কথা পরবর্তী রাউন্ডে। তেমনটাই ঘটেছিল। তবে ডর্টমুন্ড আর আর্সেনালের পথটা খুব একটা মসৃণ ছিল না। পুরো চলার পথে বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছিল ডাচ ক্লাব পিএসভি ও ফ্রান্সের ক্লাব অক্সারে। শেষ অবধি অবশ্য যথেষ্ট পয়েন্ট ব্যবধানেই আর্সেনাল ও ডর্টমুন্ড পরবর্তী রাউন্ডের দিকে অগ্রসর হয়েছিল। তবে তাঁদের মধ্যে গ্রুপ চ্যাম্পিয়নের ফারাকটা গড়ে দিয়েছিল গোল ব্যবধান।

  • ১৯৯৪/৯৫ (গ্রুপ এ)

নিস্তবদ্ধতা ছড়িয়ে গিয়েছিল গোটা ইউরোপীয় ফুটবল পাড়ায়। একেবারে সবাইকে চমকে দিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আর বার্সেলোনাকে পেছনে ফেলে গ্রুপ পর্বের সেরা দল হয় সুইডেনের ক্লাব গোটবর্গ। স্রেফ গোল ব্যবধানে সেবারে রক্ষে হয়েছিল বার্সেলোনার। সমান পয়েন্ট ছিল রেড ডেভিল আর কাতালানদের। গালাতাসারাই সে মৌসুমে গ্রুপ পর্ব শেষ করেছিল পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থেকে। তবে সব কিছু ছাপিয়ে আলোচনায় ছিল সুইডিশ ক্লাবটি।

  • ২০২০/২১ (গ্রুপ বি)

জার্মানি, স্পেন, ইতালি আর ইউক্রেনের সব পরাশক্তি দলগুলোর ঠাই হয়েছিল এক গ্রুপে। লড়াইটাও হয়েছিল বেশ জমজমাট। রিয়াল মাদ্রিদ কোন রকমে প্রথম পর্বের বাঁধা উৎরে গেলেও পিছে পড়ে রয় ইন্টার মিলান। শাখতার ডোনেস্ক ক্লাবটাও টক্কর দিয়েছিল সমানে সমান। তবে সবাইকে পেছনে ফেলে রিয়াল মাদ্রিদের সাথে পরবর্তী রাউন্ড নিশ্চিত করেছিল জার্মান ক্লাব বুরুশিয়া মুঞ্চেনগ্ল্যাসব্যাক পেয়ে যায় দ্বিতীয় পর্বের টিকেট।

  • ২০১৮/১৯ (গ্রুপ বি)

বর্তমান সময়ে এসে বার্সেলোনা হোঁচট খেয়েছে। তবে ইতিহাসে তাঁরা বরাবরই বেশ সমৃদ্ধ। ২০১৮/১৯ আসরেও তাঁর ব্যতিক্রম ঘটেনি। ১৪ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম পর্ব পার করে কাতালানরা। লড়াইটা হয়েছিল ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলান ও ইংলিশ ক্লাব টটেনহ্যাম হটস্পার্সের মধ্যে। এই দুইদলই সমান আট পয়েন্ট করে সংগ্রহ করেছিল। তবে শেষমেশ আবারও গোল ব্যবধান। এবার বিজয়ী দলের তালিকায় নিজেদের নাম তোলে স্পার্স।

  • ২০১২/১৩ (গ্রুপ ডি)

রিয়াল মাদ্রিদ, বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড, ম্যানচেস্টার সিটি এবং আয়াক্স। এই ছিল ২০১২/১৩ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ ডি। ড্রয়ের পরপরই এই গ্রুপের গায়ে লেগে যায় গ্রুপ অব ডেথের তকমা। তবে সে আসরে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি সিটিজেনরা। অন্যদিকে আয়াক্সও করেছিল এক লড়াই। তবে সেটা একেবারেই ধোপে টেকেনি। পরের রাউন্ডে যথারীতি বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড আর রিয়াল মাদ্রিদ চলে যায়। অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় জার্মান ক্লাব ডর্টমুন্ড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link