More

Social Media

Light
Dark

লাল রঙের গোল উৎসব

একটা স্বস্তির নিশ্বাসই যেন বয়ে গেল অ্যানফিল্ডে। নিজেদের মাঠে নবাগত বোর্নমাউথকে ৯-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে লিগে নিজেদের প্রথম জয় তুলে নিল লিভারপুল। অল রেডদের গোল উৎসবের সামনে পড়ে অসহায় আত্মসমর্পণ ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি চেরিরা।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ চালু হওয়ার পর এটিই অল রেডদের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে পাওয়া জয়। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং লিস্টার সিটির পর তৃতীয় দল হিসেবে ইপিএলের সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ডে ভাগ বসাল অল রেডরা।

মৌসুমের শুরুটা খুব একটা ভাল হয়নি তার উপর গত সপ্তাহে প্রবল প্রতিপক্ষ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাথে এমন বাজে ফুটবল খেলে হারার পর ইউর্গেন ক্লপের লিভারপুল অপেক্ষায় ছিল আবার নিজেদেরকে প্রমাণ করার জন্য যে, তারা এখনো ফুরিয়ে যায়নি। আর এতেই কপাল পোড়ে বোর্নমাউথের, অ্যানফিল্ডে তাদেরকে নিয়ে এক রকম ছেলে খেলাই খেলেছে অল রেডরা। এদিন নিজেদের মধ্যে জমিয়ে রাখা রাগের তেজে চেরিদের ক্ষত-বিক্ষত করে তারা। নিজ মাঠে বোর্নমাউথের বিপক্ষে এমন আলো ঝলমলে পারফর্মেন্স তাদের বাজে শুরুর দুঃখটা কিছুটা হলেও কমিয়ে দেবে এই আশা করাই যায়।

ads

গোলের নেশায় মত্ত লিভারপুল এদিন খেলার প্রথম অর্ধেই পাঁচ গোল করে বসে। খেলা শুরুর ৩ মিনিটেই হেড থেকে গোল করে দলকে ১-০ তে এগিয়ে দেন লুইস দিয়াজ। এর কিছুক্ষণ পরেই খেলার ৬ মিনিটের সময় ডি বক্সের একটু বাইরে থেকে শট নিয়ে দলের দ্বিতীয় গোলটি করেন তরুণ মিডফিল্ডার হার্ভি এলিয়েট। খেলার ১৫ মিনিটে দূরপাল্লার এক শটে গোল করে দলকে ৩-০ তে এগিয়ে দেন সপ্তাহ রাইট ব্যাক ট্রেন্ট আলেকজান্ডার আর্নল্ড।

পুরো ম্যাচজুড়েই দারুণ খেলা রবার্তো ফিরমিনো ম্যাচের ৩১ মিনিটে এক অ্যাকরোব্যটিক ফিনিশে নিজের প্রথম ও দলের চতুর্থ গোলটি করেন এরপর হাফ টাইমের কিছুক্ষণ আগে অ্যান্ডি রবার্টসনের নেওয়া কর্নার থেকে শক্তিশালী এক হেডে দলের পঞ্চম গোলটি করেন সেন্টার ব্যাক ভার্জিল ভ্যান ডাইক।

মৌসুমের শুরুর তিন ম্যাচ খেলা লিভারপুল আর এই লিভারপুলের মধ্যে ছিল আকাশ পাতাল পার্থক্য। ফুলহাম, প্যালেস এবং ইউনাইটেডের সাথে ধুঁকতে থাকা, খেলার ক্ষণে ক্ষণে মনোযোগ হারিয়ে ফেলা এক লিভারপুলকে দেখা গেলেও এদিন অল রেডরা পুরো ৯০ মিনিটই প্রতিপক্ষের উপর নিজেদের দাপট দেখিয়েছে। প্রথম অর্ধে বিশাল লিড নেওয়ার পরও থেমে যায়নি, করেছে একের পর এক আক্রমণ।

লিভারপুলের এই আক্রমণের কাছে খেই হারিয়ে বসা বোর্নমাউথ ডিফেন্ডার ক্রিস মেম্ফাম ম্যাচের ৪৬ মিনিটে নিজ জালে বল পাঠিয়ে অল রেডদেরকে তাদের ষষ্ঠ গোল উপহার দেন। চেরিদের গোলরক্ষকের বার বার বলকে আটকে দেওয়ার সব প্রচেষ্টাকে ভেস্তে দিয়ে  ম্যাচের ৬২ মিনিটে ফিরমিনো নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন।

খেলার দ্বিতীয়ার্ধে এলিয়টের বদলি হিসেবে নামা ফ্যবিও কারভালহো ম্যাচের ৮০ মিনিটে কপ এন্ডের সামনে অল রেডদের জার্সিতে নিজের প্রথম গোলটি করেন। এরপর গোল উৎসব এর শুরু হয়েছিল যার হাত ধরে সেই কলম্বিয়ান ফুটবলার লুইস দিয়াজ খেলার ৮৫ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় এবং দলের নবম গোলটি করে গোল উৎসবের সমাপ্তি টানেন, আর এতেই ৯-০ গোলের বিশাল এক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে লিভারপুল।

দল ৯-০ তে এগিয়ে থাকলেও লিভারপুল সমর্থকরা আরো গোল চাইছিলেন, দিয়াজের গোলের পর কপ এন্ড থেকে ‘আমরা ১০ নম্বর গোল চাই’ এই দাবির কথা শোনা যাচ্ছিল। সমর্থকদের এই দাবি পূরণ না হলেও দলের এমন পারফর্মেন্স যে তাদেরকে খুশি করেছে তা বলাই যায়।

আর দলের এমন পারফর্মেন্স যে ইউর্গেন ক্লপের বুকের উপর চেপে থাকা পাথরটাকে নামিয়ে দিয়েছে তা তার কথা শুনে বেশ বোঝা যায়। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজেদেরকে প্রমাণ করা জরুরি ছিল, প্রি সিজনে এবার আমরা খুব কম সময় পেয়েছি। এসময়ে ভাল খারাপ দুই রকম ফলই আমরা দেখেছি। মৌসুমের শুরুতে ভাল খেললেও (সিটির সাথে কমিউনিটি শিল্ড জয়) এর পর থেকে আমাদের পারফর্মেন্স দিন দিন খারাপ হতে থাকে।’

তিনি আরো বলেন, ‘খেলা জেতার পর দুনিয়ার সব ম্যানেজারই দুর্দান্ত ফুটবল খেলার জন্য প্রসংশিত হয় কিন্ত খেলা হারার পর আপনি যখন তার কারণ ব্যাখ্যা করেন তখন তা অজুহাতের মত শুনায় তাই আমার চাকরির পাবলিক পার্টটা মোটেই গুরুতপুর্ণ না। আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হল এর থেকে আমরা কি সিদ্ধান্তে উপনিত হলাম আর তাই আমি নিজেদেরকে প্রমান করার কথাটি বলেছি। আমরা যেভাবে খেলছিলাম তাতে আমরা মোটেও সন্তুষ্ট ছিলাম না। সব গুলো খেলায়ই আমরা ভাল কিছু মুহূর্তের দেখা পেয়েছি এবং আমরা দেখাতে পেরেছি কোন কোন জায়গায় আমরা ভাল করছি এবং কোন কোন জায়গায় আমাদেরকে আরো উন্নতি করতে হব।’

‘আমরা আজকে তাই করেছি, তবে এই ব্যাপারটা তো আর এমন না যে আপনি একটা লিস্ট করলেন আর সিরিয়াল অনুযায়ী একে একে সবগুলো কাজ সম্পন্ন করলেন। খেলায় আপনাকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে হবে তাই আজকের খেলার শুরুটা আমার কাছে ভাল লেগেছে। ম্যাচ শুরু হতেই প্রথম গোল পেলাম এবং স্বল্প সময়ে দ্বিতীয় গোল পেলাম এবং আমরা গোল করা চালিয়েই গেলাম। আমরা বিভিন্ন রকমের গোল করলেও আমাদের উদ্দেশ্য ছিল একটাই গোল করতে থাকা, প্রতিপক্ষকে চাপে রাখা এবং থেমে না যাওয়া। খেলা শেষ হওয়ার আগেই আমি এমন কিছু হবে বলে ধারণা করেছিলাম এবং দিন শেষে এই বিকেলে আমরা পারফেক্ট ফুটবল খেলেছি বলতে পারি।’ যোগ করেন তিনি।

ইউর্গেন ক্লপের জন্য পারফেক্ট ফুটবল হলেও বোর্নমাউথের ম্যানেজার স্কট পার্কারের জন্য এটি ছিল এক দু:স্বপ্নের বিকেল। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘নি:সন্দেহে এটি আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন এবং বেদনাদায়ক দিন। তবে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই কারণ আমরা যেই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলছি তাদের মান এবং আমাদের মানের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। আমি আমাদের সমর্থক এবং খেলোয়াড়দের জন্য দু:খ প্রকাশ করছি কারণ এই মুহূর্তে আমরা এই মানের ফুটবলের বিপক্ষে খেলার জন্য প্রস্তুত নই।’

বোর্নমাউথের বিপক্ষে পাওয়া জয়ে লিভারপুলের আকাশে জমে থাকা কাল মেঘ কিছুটা সরে গেলেও সামনের সপ্তাহে নিউক্যাসেলের বিপক্ষে আবার হোঁচট খেলে এই নয় গোলের কোন মূল্য থাকবে না। তাই সমর্থকদের এখন একটাই দাবি অল রেডরা যেন সামনের খেলাগুলোতেও ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করতে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link