More

Social Media

[ivory-search id="135666" title="Post Search"]
Light
Dark

ক্রাইসিস ম্যানের নির্দয় হাসিমুখ

জুটি গড়তে হবে? দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করতে হবে? ইউনুস খান আছেন।

বড় একটা ইনিংস খেলে প্রতিপক্ষের পর চাপ বাড়াতে হবে? ইউনুস খান তো আছেনই।

বিরুদ্ধ কন্ডিশনে তরুণ ব্যাটসম্যানরা মানিয়ে নিতে পারছেন না? সমস্যা নেই, ইউনুস খান পুষিয়ে দেবেন।

ads

ইউনুস খানও সদা ঠোঁটের কোনো হাসি ধরে রাখতেন। যেন বলতে চাইতেন, ‘আমি আছি না!’ আর সেই হাসি ঠোঁটে ধরে রেখেই তিনি বাইশ গজে প্রতিপক্ষের বোলারদের ওপর হয়ে উঠতেন নির্মম।

নিশ্চয়ই আর বুঝতে বাকি নেই যে, ইউনুস খান কি পরিচয়ে খেলেছেন পাকিস্তান দলে। তিনি ছিলেন সত্যিকারের ক্রাইসিস ম্যান। আর ক্রাইসিসের মধ্যে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে দিতে তিনি কালক্রমে হয়ে উঠেছেন পাকিস্তানের রান মেশিন।

ইউনুস খান হলেন একমাত্র পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান যিনি টেস্টে ১০ হাজারের ওপর রান করেছেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান জাভেদ মিয়াঁদাদ নয় হাজার রানেরও কম করেছেন।

ইউনুস আধুনিক ওয়ানডে ঘরানার সাথে খুব কমই মানিয়ে নিতে পেরেছেন নিজেকে। যদিও, ৫০ ওভারের ক্রিকেটেও তার রান সাত হাজারের ওপরে। ২০১৫ সাল অবধি খেলেছেন ৫০ ওভারের ক্রিকেট। এরপর বাকিটা সময় মন দিয়েছিলেন কেবলই টেস্টে।

অধিনায়কত্বের ক্ষেত্রেও তিনি ক্রাইসিস ম্যান। ঝঞ্ঝা-বিতর্কিত পরিস্থিতির মাঝেই তিনি ২০০৯ সালে দেশকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতিয়েছিলেন। ইমরান খানের পর তিনি দ্বিতীয় পাকিস্তানি অধিনায়ক হিসেবে তিনি বিশ্বকাপ জেতেন, হোক সেটা টি-টোয়েন্টি ফর‌ম্যাটের। এর চার মাস আগে তিনি তৃতীয় পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেন, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করাচিতে।

জন্মগত ভাবে ইউনুস খান হলেন পাঠান। তিনি পেশোয়ারের ছেলে। তবে, বেড়ে ওঠা কৈশোরে। তরুণ বয়সে ইউনুসের মেন্টর ছিলেন সাবেক পাকিস্তানি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান রশিদ লতিফ। পরে, দু’জন এক সাথে জাতীয় দলেও খেলেন।

২০০০ সালে অভিষেকেই সেঞ্চুরি দিয়ে শুরু হয় ইউনুসের টেস্ট ক্যারিয়ার। তবে, তিন নম্বর পজিশনে তিনি থিঁতু হন বছর চারেক বাদে। ভারতের বিপক্ষে তাঁর ব্যাট বরাবরই ছিল চড়াও। টানা এক ডাবল সেঞ্চুরি-সহ চারটি সেঞ্চুরি তিনি করেছেন ভারতের বিপক্ষে। ভারতের বিপক্ষে তাঁর ব্যাটিং গড় ৯০-এর মত।

২০১০ সালের মার্চে দলে অন্তর্কলহের জের ধরে তাঁকে নিষিদ্ধ করে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে, বছর খানেকেরও কম সময়ের মধ্যে ইউনুসকে ফেরানো হয়। ২০১৪ সালে তিনি ফর্মের তুঙ্গে ছিলেন। টানা পাঁচ টেস্টে করেন সেঞ্চুরি। তখনই, দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির মালিক বনে যান।

যদিও, ২০১৫ বিশ্বকাপটা ভাল কাটেনি। বাজে পারফরম্যান্সের জের ধরে দল থেকে জায়গা হারান। তবে, সে বছর নভেম্বরে তাঁকে ফেরানো হয়। ফিরে একটা ম্যাচ খেলেই তিনি এই ফরম্যাটকে ‘টা টা’ বলে দেন।

ক্যারিয়ারে এরপরের দু’টি বছর তাঁর ধ্যান-জ্ঞান ছিল কেবলই সাদা পোশাক। এই সময়ে অর্জনও তাঁর কম নয়। পালেকেল্লেতে রেকর্ড রান তাড়ার পথে ১৭১ রানে অপরাজিত থাকেন, ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করে দলের জয় নিশ্চিত করেন, যার সুবাদে পাকিস্তান টেস্ট র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে ওঠে।

ক্যারিয়ারের একদম শেষ টেস্ট সিরিজে তিনি ১০ হাজার রানের মাইলফলকে পা দেন। এমন স্বর্ণালী সময়ে বিদায় বলার সৌভাগ্য সবার হয় না!

মজার একটা তথ্য দিয়ে শেষ করি।

বোলার পরিচয়ে কখনই পরিচিত ছিলেন না ইউনুস খান। পার্ট টাইম বোলারের চেয়েও অনেক কম বোলিং করতেন। কখনও লেগ স্পিন, কখনও স্লো মিডিয়াম পেস করতেন। ২০০৭ সালে ডার্বি কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচে তিনি ইয়র্কশায়ারের হয়ে স্লো-ওভার রেটের খড়গ এড়ানোর জন্য এক ওভার বোলিং করেছিলেন মাত্র ৩৫ সেকেন্ডে।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link