More

Social Media

Light
Dark

ইন্টারের কিংবদন্তি, আর্জেন্টিনার আক্ষেপ

এস্তেবান মাতিয়াস ক্যাম্বিয়াসো ডিলিউ, তিনি একজন ফুটবলার। কিন্তু নামটা শুনলে সহসা কোন ছবি মনের পর্দায় ভেসে ওঠার সম্ভাবনা খুবই কম। কেননা সাবেক আর্জেন্টাইন এই ফুটবলারকে চেনেন, এমন মানুষ হাতেগোনা কয়েকজন। অথচ এস্তেবান ক্যাম্বিয়াসো ছিলেন তাঁর প্রজন্মের সেরাদের একজন।

১৯৮০ সালের ১৮ আগস্ট আর্জেন্টিনার সান ফার্নান্দো পার্তিদো শহরে জন্মগ্রহন করেন এস্তেবান ক্যাম্বিয়াসো। তাঁর বাবা কার্লোস ক্যাম্বিয়াস ছিলেন একজন বাস্কেটবল খেলোয়াড় আর মায়ের প্রিয় ছিল চেস্টোবল (অনেকটা ভলিবলের মত)। অ্যাথেলটিক পরিবারে জন্ম নেয়া এস্তেয়ানও তাই বেছে নিয়েছেন খেলাধুলা। তবে বাবা-মায়ের মত নয়, এস্তেয়ানের পছন্দ ছিল ফুটবল।

নিজের ভাইদের সাথে খেলেই ফুটবল বিদ্যা আয়ত্ত করতে শুরু করেন এস্তেবান ক্যাম্বিয়াসো। আবার গ্যারেজের যন্ত্রপাতিকে প্রতিপক্ষ ভেবে সাজিয়ে নিতেন কলাকৌশল।

ads

আর্জেন্টিনা জুনিয়রস প্রেস্টিজিয়াস একাডেমিতে সুযোগ পান এস্তেবান ক্যাম্বিয়াস। এসময় ইউরোপীয় বড় বড় দলগুলোর নজরে আসে এই কিশোরের প্রতিভা। এর মাঝে আয়াক্সের তৎকালীন কোচ লুইস ভন গাল এস্তেয়ানের ভক্ত হয়ে ওঠেন। তিনি এই আর্জেন্টাইনকে আমস্টারডামে নিয়ে আসতে চান। কিন্তু অল্প বয়সে ছেলেকে এত দূরে পাঠাতে রাজি হয়নি ক্যাম্বিয়াস পরিবার।

পরবর্তীতে স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদের কাছ থেকে প্রস্তাব পান এস্তেবান ক্যাম্বিয়াস। তল্পিতল্পা গুটিয়ে মাদ্রিদে পাড়ি জমান তিনি। রিয়াল মাদ্রিদ তাঁর স্বপ্নের গন্তব্য ছিল বলে জানিয়েছিলেন এস্তেয়ান।

রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর এই মিডফিল্ডার এক তারকাখচিত ড্রেসিং রুমে নিজেকে আবিষ্কার করেন। তখন সানচেজ, হিরেইরা, রেদেনদো, চেনদো এর মত খেলোয়াড়রা রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলতো। কিন্তু দুই বছর রিয়াল মাদ্রিদ বি টিমে থাকার পরেও ম্যানেজম্যান্টের মন জয় করতে পারেননি এস্তেয়ান।

বিশেষ করে একাডেমি গ্র্যাজুয়েট বনাম গ্যালাকটিকো বিতর্কের বলি হতে হয় তরুণ এস্তেয়ান ক্যাম্বিয়াসকে। বাধ্য হয়ে তিনি ফিরে আসেন আর্জেন্টিনাতে। নিজ দেশে এসে আবার নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। শুরুতে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ক্লাবের হয়ে এবং এরপর রিভারপ্লেটের হয়ে নিজেকে প্রমাণ করেন এস্তেবান।

এর মাঝে ১৯৯৭ সালে যুব বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে শিরোপা এনে দেন এস্তেয়ান ক্যাম্বিয়াস। এই সময় আরো একবার তাঁর ফুটবলীয় সম্ভাবনা নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ২০০২ সালে পুনরায় রিয়াল মাদ্রিদ এই আর্জেন্টাইনকে নিজেদের ক্লাবে নিয়ে আসে। পরের দুই বছর লস ব্ল্যাঙ্কোসদের মিডফিল্ড সামলানোর কাজটা ভাল ভাবেই করেছিলেন তরুণ এস্তেবান।

২০০৪ সালে স্পেন ছেড়ে ইতালিতে চলে আসেন এস্তেবান ক্যাম্বিয়াস। যোগ দেন ইন্টার মিলানে। ইতালিয়ান ক্লাবে তখন বেশকয়েকজন আর্জেন্টাইন ফুটবলার ছিলেন, তাই এস্তেয়ান দ্রুতই মানিয়ে নিতে সক্ষম হন। প্রতিদ্বন্দ্বী এসি মিলান এবং জুভেন্টাসের অপ্রত্যাশিত অফ ফর্মের কারনে হোক কিংবা ইন্টার মিলানের উত্থানের কারণে – একুশ শতাব্দীর শুরুর দিকে উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করে তাঁরা।

এসময় টানা পাঁচটি লিগ শিরোপা জিতে নেয় তাঁরা। এছাড়া হোসে মরিনহোর কোচিংয়ে ট্রেবল জয়ের কীর্তি গড়ে। এমন সব সাফল্যে সামনে থেকে অবদান রেখেছিলেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার এস্তেবান ক্যাম্বিয়াস৷ রক্ষণ সামলানো তাঁর মূল কাজ হওয়ায় গোল আর অ্যাসিস্ট দিয়ে সেই অবদান উপলব্ধি করা যাবে না।

কিন্তু মরিনহোর বিদায়ের পর ধীরে ধীরে ভাঙন ধরে ইন্টার মিলানে। এক পর্যায়ে তাই দলটির সঙ্গে দশ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করেন এস্তেবান ক্যাম্বিয়াস। এবার যোগ দিয়েছিলেন লেস্টার সিটিতে। অভিষেক মৌসুমে লেস্টার মোটেই ভালো করতে পারেনি, কিন্তু যোগ্য নেতার মত দলকে সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করেছেন এই অভিজ্ঞ ফুটবলার। পরের বছরেই দ্য ফক্সদের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ জয়ের মধ্য দিয়ে মহাকাব্যের জন্ম দিয়েছেন তিনি।

শেষপর্যন্ত ৩৭ বছর বয়সে নিজের বুটজোড়া তুলে রাখেন এস্তেবান ক্যাম্বিয়াস। অবশ্য অবসরের আগে গ্রিসের অলিম্পিয়াকোসের জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন এই আর্জেন্টাইন তারকা। নিজের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে লা লিগা, সিরি ‘এ’, প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সহ সম্ভাব্য সব শিরোপা জিতেছেন এস্তেবান ক্যাম্বিয়াস।

তবে জাতীয় দলে পুরোপুরি নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি এই মিডফিল্ডার। ২০১০ বিশ্বকাপ দলে না রাখার অভিমানেই হয়তো খুব অল্পতেই থেকে গিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। আলবিসেলেস্তাদের জন্য তাই তিনি আক্ষেপ হয়েই আছেন।

একজন অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, ট্রেবল বিজয়ী এবং কিংবদন্তি; এস্তেয়ান মাতিয়াস ক্যাম্বিয়াসো ডিলিউ তাঁর নিজস্ব ইতিহাস তৈরি করেছেন। তাঁর এসব গল্প অনন্তকাল ধরে প্রতিধ্বনিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link