More

Social Media

Light
Dark

নাদের মাঝি নন সোহান

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতায় ‘নাদের মাঝি’ কথা দিয়েছিল তিন প্রহরের বিল ঘুরিয়ে আনবে কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেলেও কথা রাখেনি সে। মাঝির মতই সাহসী ক্রিকেট খেলার কথা দিয়েছিলেন বাংলাদেশের নতুন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান।

তবে তিনি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেননি; পরাজয় নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আক্রমণ করেছেন স্বাগতিক বোলিং লাইনআপের উপর। বলা যায়, ক্যাপ্টেন লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট। তিনি নাদের মাঝি হননি।

নুরুল হাসান সোহান যখন ক্রিজে এসেছিলেন বাংলাদেশ তখন পাহাড়সম লক্ষ্যের দিকে উদভ্রান্তের মত এগুচ্ছিলো। এরপর নিজেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন সোহান; নাজমুল শান্তকে সাথে নিয়ে মাত্র ২১ বলে ৪০ রানের ঝড়ো গতির পার্টনারশিপ করেন। শান্ত ফিরলেও লড়াই থামাননি সোহান। 

ads

মোসাদ্দেক সৈকতকে সাথে নিয়েই লড়াই করেছেন। একটা পর্যায়ে তাঁর সাহসে ভর করে অসম্ভব এক জয়ের স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছিল বাংলাদেশী ভক্তরা। শেষপর্যন্ত অবশ্য পারেননি অধিনায়ক সোহান, বলতে হয় তাঁকে পারতে দেয়া হয়নি। ইনিংসের শেষদিকে সঙ্গীর অভাবে বেশ কয়েক বলে সিঙ্গেলও নিতে পারেননি তিনি।

বিশেষ করে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান এনামুল হক বিজয়ের শম্ভুক গতির ব্যাটিং আর শেষদিকে মোসাদ্দেকের যথাযথ সমর্থনের অভাবে সোহান ট্র্যাজিক হিরো হয়ে রইলেন। শেষপর্যন্ত ২৬ বলে ৪২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেও মাথা নিচু করে ড্রেসিং রুমে ফিরে এসেছেন তিনি। 

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের নড়বড়ে পারফরম্যান্সের কারণে স্কোয়াডে পরিবর্তনের একটা দাবি সবসময়ই ছিল। এবার জিম্বাবুয়ে সফর উপলক্ষে সিনিয়রদের সবাইকে বাদ দিয়ে নতুন অধিনায়কের নেতৃত্ব তারুণ্য নির্ভর দল তৈরি করে নির্বাচকরা। ক্যাপ্টেন্সি পাওয়ার পরেই সোহানের কন্ঠে শোনা গিয়েছিল সাহসী ক্রিকেটের সুর। 

টি-টোয়েন্টিসুলভ ক্রিকেটটা খেলতে চাওয়া নুরুল হাসান সোহানের উপর ভরসার হাতে রেখেছিল টিম ম্যানেজম্যান্ট। খালেদ মাহমুদ সুজন বলে দিয়েছিলেন, জয়, পরাজয় নয়; বাংলাদেশের কাছ থেকে সাহসী খেলাটা দেখতে চায় সবাই।

বোলারদের বেহিসেবী রান বিলানোর দিনে কি-ইবা করার ছিল সোহানের। মুস্তাফিজুর, তাসকিনদের মত অভিজ্ঞদের পাশাপাশি শরিফুল, নাসুমদের মত তরুণরাও ছিলেন নখদন্তহীন। ফিল্ডিংয়ে গা-ছাড়া ভাব বেশ চোখে লেগেছে। এত কিছুর পরেও হাল ছাড়েননি ক্যাপ্টেন। চেষ্টা করেছেন, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। 

একটা গুঞ্জন অনেকদিন থেকেই বাতাসে ভাসছে। নুরুল হাসান সোহান ব্যাটিং পারেন না; শুধু উইকেট কিপিং দিয়ে নাকি জাতীয় দলে খেলছেন। আসলেই নুরুল ব্যাটিং পারে না, লিটন দাসের মত নান্দনিক শটস তাঁর হাতে নেই। তিনি চাইলে ফুল লেংথের একটা বলকে কপিবুক কভার ড্রাইভ করতে পারেন না। বোলার বল করার আগেই তিনি লেগসাইডে শট খেলার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান। 

কথাগুলো মিথ্যে না, ব্যাটসম্যান সোহানের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরও তিনি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে একা হাতে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে শিরোপা জেতাতে পারেন। তিনি ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ গড়তে জানেন। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, সোহানের ‘গাটস’ রয়েছে বোলারকে বিধ্বস্ত করার। 

কিছুদিন আগের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের দুই টেস্টে দুইবার ইনিংস হার থেকে দলকে রক্ষা করেছিলেন সোহান। ব্যাটিং না পারা সোহান শেষ ওয়ানডেতে হঠাৎ পরাজয়ের মুখে থাকা বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছেন; ৩৮ বলে অপরাজিত ৩২ রান করে দলকে তীরে এনে দিয়েছিলেন। আর এবার অধিনায়ক হওয়ার পরে আরো সাহসী, আরো তেজদীপ্ত সোহানের দেখা মিলেছে। 

এতসব কিছুর পরেও মন্তব্য করা হবে সোহান কোটার খেলোয়াড়। উইকেটের পিছনের তাঁর যত জারিজুরি, উইকেটের সামনে তিনি নড়বড়ে।

নিন্দুকের মুখে থাকুক এসব কথা, নুরুল হাসান সোহান তাঁর কাজটা করে যেতে পারলেই হয়। আনঅর্থোডক্স ব্যাটিং করে যদি দলকে জেতানো যায়, যদি ব্র্যান্ড ক্রিকেট খেলা যায় তাহলে অমিত প্রতিভাধর কিন্তু শূন্য প্রতিফলনময় ব্যাটারের আর দরকার নেই। 

যে বাংলাদেশি ব্র্যান্ড ক্রিকেটের আহ্বান সোহান জানিয়েছিলেন তেমনটা নিজেও মাঠে দেখাবেন, সতীর্থদের শেখাবেন কিভাবে খেলতে হয়। ভয়হীন সোহানের নেতৃত্বেই নিকট ভবিষ্যতে হয়তো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নতুন বাংলাদেশের দেখা মিলবে; সোহানের উপর তেমনটা আশা করা মোটেও অমূলক নয়। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link