More

Social Media

Light
Dark

ছোট্ট সাদা পাখি

২০২০ সালের স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনাল। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে খেলা গোলশূন্য ড্র। সৌদি আরবের কিং সিটি আব্দুল্লাহ স্টেডিয়ামে তখন অতিরিক্ত সময়ে জয়ের চেষ্টা করছিল দুই নগর প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ এবং অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ। ম্যাচের বয়স তখন ১১৪ মিনিট, ডি-বক্স থেকে কয়েক গজ দূরে ফ্রি-কিক পেলো রিয়াল মাদ্রিদ।

ফ্রি-কিক থেকে আসা ক্রস ক্লিয়ার করেই কাউন্টার অ্যাটাকে উঠে আসে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ। ফাঁকায় দাড়িয়ে থাকা আলভারো মোরাতা পেয়ে যান বল। বল পেয়েই ভোঁদৌড় মোরাতার। প্রায় বিনা বাঁধায় মাদ্রিদের ডি-বক্সের কাছাকাছি চলে যান তিনি। সামনে ছিল শুধুই মাদ্রিদ গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া। 

মোরাতা মনে মনে কোর্তোয়াকে পরাজিত করার ছক কষছিলেন। মাত্র একটি বাঁধা টপকে গেলেই মিলবে শিরোপা, সে স্বপ্নেই বিভোর ছিলেন মোরাতা। কিন্তু হঠাৎ করেই পিছন থেকে আসে বাঁধা। সাদা জার্সি পড়া একখানা পা মাটিতে ফেলে দেয় মোরাতাকে। নিশ্চিত গোল থেকে বেঁচে যায় রিয়াল মাদ্রিদ।

ads

আলভারো মোরাতে থামিয়ে দেয়া পা জোড়া কার ছিল সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। লিটল বার্ড খ্যাত ফেদেরিকো ভালভার্দে সেদিন ছিলেন রিয়ালের ত্রাণকর্তা। তাঁর সে এক ফাউলের সুবাদেই শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে জিতে শিরোপা উৎসব করে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা।  আর সেজন্য লালকার্ড দেখার পরও ভালভার্দে হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা। সেদিনের পর থেকেই নিজের প্যাশন আর ডেডিকেশনের জন্য মাদ্রিদিস্তাদের হৃদয়ে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন সুদর্শন এই তরুণ। 

১৯৯৮ সালের ২২ জুলাই উরুগুয়ের রাজধানী মন্টেভিডিওতে জন্মগ্রহণ করেন রিয়াল মাদ্রিদ মিডফিল্ডার ফেদে ভালভার্দে। পূর্বপুরুষ কারো ফুটবলের সাথে যোগসূত্র না থাকলেও মাত্র ২ বছর বয়সে ফুটবলের প্রেমে পড়েন ফেদে। সে সময় নিজর বাসাতেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেন ফেদের বাবা। 

এক বছর পরেই ফুটবল ভিত্তিক স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয় তাকে। ৫ বছর বয়সে নিজের ক্যারিয়ারে প্রথম শিরোপা জিতেন তিনি। ৬ বছর বয়সে পেশাদার বয়সভিত্তিক দলে নাম লেখান। উরুগুয়েতে তখন দিয়েগো ফোরলানের জয় জয়কার। তাকে আইডল মেনেই বড় হয়েছেন ফেদে।

২০০৮ সালে প্যানারোলের একাডেমিতে মায়ের সাথে ট্রায়াল দিতে গিয়েছিল ছোট্ট ফেদে। কিন্তু লাজুক প্রকৃতির ভালভার্দে গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে। কিছুতেই অপরিচিত ছেলেদের সাথে খেলতে রাজি হয়নি সে। পরে  সেখানকার এক কোচের কথায় ট্রায়ালে যোগ দিয়েছিলেন ভালভার্দে। এরপর নির্বাচকদের মুগ্ধ করে সুযোগ পেয়ে যান প্যানারোল একাডেমিতে। 

১৭ বছর বয়সে ফেদেরিকো ভালভার্দে সুযোগ পেয়েছিলেন নিজের আইডল ফোরলানের সাথে খেলার সুযোগ। আইডলের পরামর্শে নিজেকে ছাড়িয়ে যাবার আত্মবিশ্বাস পেয়েছিলেন। এসময় অসাধারণ নৈপুণ্যের জন্য তাঁর দিকে নজর পড়ে ইউরোপের ক্লাবগুলোর।

কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের প্রতি তীব্র ভালবাসা ছিল তাঁর। তাই অন্য ক্লাবকে প্রত্যাখান করে লস ব্ল্যাঙ্কোস শিবিরে চলে আসেন তিনি। প্রথমে মাদ্রিদ বি, পরে লা করুনায় ধারে খেলতে যাওয়ার পর এখন মাদ্রিদ দলের অন্যতম ভরসার প্রতীক। 

মূল পরিচয় মিডফিল্ডার হলেও কোচের আস্থার প্রতিদান দিতে কখনো রাইটব্যাক, কখনো রাইট উইংগার হিসেবেও খেলেছেন। শুধু খেলেছেন বললে ভুল হবে, নিজের শতভাগের চেয়ে বেশি দিয়েছেন ২৩ বছর বয়সী এই ফুটবলার। 

দুর্দান্ত পারফরম্যান্স আর প্রতিভাবান হওয়ার পরেও কখনো প্লেয়িং টাইম নিয়ে অভিযোগ করেননি ফেদে ভালভার্দে। তারই সমসাময়িক মার্টিন ওডেগার্ড প্লেয়িং টাইমের জন্য রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ভালভার্দে ম্যাচে সময় পাওয়ার জন্য লড়েছেন, দলের সাথে থেকে গিয়েছেন। এখন তিনি শুরুর একাদশে নিয়মিত। 

কোচ, ক্লাব ম্যানেজম্যান্টের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করেছেন ফেদেরিকো ভালভার্দে। প্রত্যেক মাদ্রিদ ভক্ত তাকে ভীষণরকম ভালোবাসে। কারণটা একেবারে সাধারণ; উরুগুয়ের এই ছেলেটা মাদ্রিদের রয়্যাল ব্যাজের জন্য যেকোন কিছু করতে সর্বদা প্রস্তুত। 

সর্বশেষ মৌসুমে লা লিগা শিরোপা, স্প্যানিশ সুপার কাপ এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পথে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল ফেদে ভালভার্দের। এর মাঝে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের গোলের অ্যাসিস্ট করেছিলেন তিনি।

আবার স্প্যানিশ সুপার কাপে চিরপ্রতিদ্বন্দী বার্সেলোনার বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে জয়সূচক গোল এসেছিল তাঁর পা থেকেই, সেদিন জার্সি খুলে উঁচিয়ে ধরেছিলেন। ঠিক যেমনটা পাঁচ বছর বয়সে গোল করার পর ডায়াপার খুলে গোল উদযাপন করতেন ভালভার্দে। 

মন্টেভিডিওর শান্ত শিষ্ট ফেদে ভালভার্দে অল্প বয়সেই অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। ট্রেনিংয়ে কখনো ক্রুস, মদ্রিচদের কাছ থেকে শিখছেন, কখনো আবার সতীর্থদের শেখাচ্ছেন। আর মাঠে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিচ্ছেন।

এমন ফর্মের ধারবাহিকতা ধরে রাখলে নিঃসন্দেহে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ছড়িয়ে যাবে একজন ভালভার্দের গল্প; সান্তিয়াগো বার্নাব্যুয়ের সবুজ ঘাসে নিবেদিত এক আত্মার গল্প। ভবিষ্যতে কোন মাদ্রিদিস্তাদের আলোচনায় উঠে আসবে ‘এল পাজারিতো’ কথা। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link