More

Social Media

Light
Dark

পাগলাতে সূচির বলি

বিস্ময়ে ভরা এক ক্যারিয়ার কাটিয়েছেন ইংলিশ তারকা বেঞ্জামিন অ্যান্ড্রু স্টোকস। ইডেন গার্ডন্সে চার বলে চার ছয় হজম করে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছিলেন স্টোকস, তিনিই আবার হেডিংলিতে শুনিয়েছেন সিংহের গর্জন। একটা সময় নাইটক্লাবে মারামারি করে ভিলেন হওয়া বেন স্টোকস, লর্ডসেই বনে গিয়েছিলেন পুরো ইংরেজ জাতির নায়ক।

এই উত্থান আর পতনে ভরা ক্রিকেট ক্যারিয়ারে বেন স্টোকস অনেকবারই মুগ্ধ করেছেন পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে। ব্যাট হাতে কিংবা বল হাতে, যেখানে সুযোগ পেয়েছেন সেখান থেকেই দলের জন্য সবটুকু করেছেন। বিরাট কোহলির চোখে তিনি ‘দ্য মোস্ট কমপ্লিট’ ক্রিকেটার।

পুরোটা সময় বাইশ গজের পারফরম্যান্সে স্তব্ধ করে দেয়া স্টোকস, এবার মাঠের বাইরে থেকেই অবাক করলেন সবাইকে। জানিয়ে দিলেন আর সম্ভব নয় ক্রিকেটের সব সংস্করণে অংশগ্রহণ করা, ওয়ানডে থেকেই ছুটি নিয়ে নিলেন পুরোপুরি।

ads

মাত্র ৩১ বছর বয়সেই ইংল্যান্ড ওয়ানডে দলের জার্সি খুলে রেখেছেন বেন স্টোকস, এমনটা মানা যায় না। অন্য অনেকের মতই মানতে পারেননি ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক নাসের হুসেইন। মূলত বেন স্টোকসের অবসরের কারন ছিল বর্তমান ক্রিকেটারের ব্যস্ত সময়সূচি। আর এই ব্যাপারেই নিজের বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করলেন নাসের হুসেইন।

বর্তমানে ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করা নাসের ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) ক্রিকেট ক্যালেন্ডারের তীব্র সমালোচনা করেন। এবং জানান যে এটি ক্রিকেটারদের জন্য পুরোপুরি একটা ‘ম্যাডনেস’।

স্কাই স্পোর্টসে নাসের হুসেইন তাঁর লেখা একটি কলামে লিখেন, ‘নি:সন্দেহে এটি একটি হতাশাজনক খবর। আর এটি বর্তমান সময়ের ক্রিকেটে যে ব্যস্ত সূচি চলমান তার একটি প্রতিক্রিয়া। যা ক্রিকেটারদের জন্য পাগলামি।’

তিনি আরো লিখেছেন, ‘আইসিসি ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করে যাচ্ছে। তাছাড়া সদস্য দেশগুলো ক্রিকেট বোর্ডগুলো এর ফাঁকে যতটা সম্ভব বেশি বেশি ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে চায়। এভাবে আসলে চলা যায় না। এই প্রক্রিয়া সামনেও চলতে থাকলে ক্রিকেটারদের অনেকেই নিজেদের সমাপ্তি ঘোষণা দিবে। বেন স্টোকস মাত্র ৩১ বছর বয়সে ওয়ানডে ফরম্যাট থেকে সরে দাঁড়িয়েছে এটা মোটেও স্বাভাবিক নয় ৷ এই বিরতিহীন ক্রিকেট সংস্কৃতিতে নজর দেয়া উচিত। এই মুহূর্তে এমন সূচি রীতিমতো রসিকতা মনে হচ্ছে।’

বেন স্টোকসের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত নি:সন্দেহে বিশ্বকাপ ফাইনালের সেই ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরষ্কার। তাঁর ৮৪ রানের ইনিংসেই ভর করে সেবার ম্যাচটি সুপার ওভারে নিয়ে যায় ইংল্যান্ড এবং পরবর্তীতে বাউন্ডারি আইনে জিতে নেয় সোনালী ট্রফি। বামহাতি এই ব্যাটসম্যানের এই অবদানের কথা মনে করিয়ে দিতেও ভোলেন নি নাসের হুসেইন।

ইংলিশ অলরাউন্ডারের প্রশংসা করে নাসের হুসেইন বলেন, ‘সবচেয়ে চাপের কোন মুহূর্তে, একজন ইংলিশ ক্রিকেটারকে পাঠাতে হলে সেটা হবে বেন স্টোকস; সে বর্ন-উইনার। যে কেউ চাইলে এই গুন অর্জন করতে পারে না, এটা শুধুই বিধাতা প্রদত্ত একটি বৈশিষ্ট্য। যা বেন স্টোকসের মাঝে আছে এবং সে এটা প্রমাণ করেছে।’

কিছুদিন আগেই মানসিক স্বাস্থ্যের কারন দেখিয়ে লম্বা সময় ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন বেন স্টোকস। বিরতি থেকে ফেরার পরে টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব দেয়া হয় তাকে। স্বাভাবিকভাবেই একটু চাপে ছিলেন তিনি, ধারনা করা হয়েছিল হয়তো সাদা বলে মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিয়ে তিনি হয়তো খেলা চালিয়ে যাবেন।

কিন্তু সবাইকে বিস্মিত করে পুরোপুরি অবসর নিয়ে নিলেন বেন স্টোকস। এছাড়া ঘরোয়া টুর্নামেন্ট ‘দ্য হান্ড্রেড’-এ না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই ইংলিশ তারকা। এবং এটির মূল কারন ক্রিকেট শিডিউল। স্টোকস মনে করছেন টানা খেলার মধ্যে থাকায় পঞ্চাশ ওভারের ফরম্যাটে তিনি শতভাগ দিতে ব্যর্থ, তাই বেছে নিয়েছেন সরে যাওয়ার পথ।

আইসিসির ২০২৪ সালের ফিউচার ট্যূর এন্ড প্রোগ্রামে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের জন্য আড়াই মাসের বেশি সময় রাখা হয়েছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ আরো কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে নিজেদের ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের সম্ভাব্য সূচি নির্ধারণ করেছে। আর নাসের হুসেইন মনে করেন এসব কারনে পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেট নিজের জায়গা হারাতে যাচ্ছে।

ইংল্যান্ডের আরেক সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন বাতলে দিয়েছেন ব্যস্ত সময়সূচি থেকে বের হওয়ার উপায়। তার মতে, যদি বোর্ডগুলো নিজেদের ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট চালু করতে বেশি আগ্রহী হয়, তবে তাদের উচিত দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলা কমিয়ে আনা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অথবা ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট এই দুইটির মধ্যে যেকোনো একটিতে ছাড় দিতেই হবে। ৩১ বছর বয়সে কোন ক্রিকেটারকে অবসর নিতে বাধ্য করাটা মানা যায় না।

নায়কোচিত বিশ্বকাপ কাটানোর পর থেকে ইনজুরি, সাময়িক অবসর এবং বিশ্রামের কারনে গত তিন বছরে মাত্র নয়টি ওয়ানডে খেলেছেন বেন স্টোকস। এখন তো অনিয়মিত খেলার চেয়ে একেবারে অবসরের পথে হাঁটলেন তিনি। বোঝাই যাচ্ছে, এমন টানা খেলার মধ্যে থাকলে আরো অনেক তারকা ক্রিকেটারকেও বেন স্টোকসের পদচিহ্ন অনুসরণ করতে হতে পারে। তাই আইসিসির এই ব্যাপারগুলো নিয়ে এখনই ভাবা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link