More

Social Media

Light
Dark

শেষতক আক্ষেপই বুঝি সঙ্গী হবে মেসির!

‘সময় ও স্রোত কারো জন্যে অপেক্ষা করে না’- যতো ক্লিশেই শোনাক সবার ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা প্রযোজ্য। 

শতাব্দির একেবারে গোড়ার দিকে লিওনেল মেসি নামের সদ্য কৈশোরে পা দেয়া এক কিশোর যোগ দিয়েছিলেন বার্সেলোনায়, গ্রোথ হরমোন ডেফিশিয়েন্সি সিন্ড্রোম নিয়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে অভাবটাকে জয় করেছেন। এরপর একে একে স্পেন-ইউরোপ-বিশ্বের সেরা বনেছেন। দলকে জিতিয়েছেন অজস্র লিগ, চ্যাম্পিয়ন লিগ সহ অগুনতি শিরোপা। 

এইতো গেলো বছর, যখন জাভি-ইনিয়েস্তা-পুয়োল কিংবা নেইমারদের ছাড়া একাই বার্সেলোনাকে তৃতীয় ট্রেবল থেকে একধাপ দূরে নিয়ে যাচ্ছিলেন; তখন ‘মেসি থামবেন কোথায়?’-এই ছিলো ইউরোপজুড়ে আনাড়ির চায়ের কাপে ঝড় থেকে শুরু করে পণ্ডিতদের টক-শো’র প্রধান উপজীব্য।

ads

ইউরোপীয় ফুটবলের অমোঘ সত্য, এখানে সবকিছু ভোজবাজির মতো বদলে যায়। আগের মৌসুমের ইউরোপসেরা দলটা পরেরবার শিরোপাশূণ্য মৌসুম পার করে। চলতি মৌসুমে সে অমোঘ সত্য মেনে আরও একবার বদলে গেছে আলোচনা। বিষয় এবার ‘মেসি তবে ফুরিয়েই গেলেন?’… 

ফুরিয়ে ঠিক যাননি। তবে কিছু নির্দেশক ইঙ্গিত দেয়, শেষের শুরু হয়ে গেছে মেসির। এল ক্লাসিকোয় গোল পাচ্ছেন না ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো মাদ্রিদ ছাড়ার পর থেকেই। তবে তাই বলে দ্যুতি ছড়ানো বন্ধ ছিলো না কখনোই। অতি সাম্প্রতিক ক্লাসিকোয় ছেদ পড়েছে সেখানেও!

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ম্যাচের বয়স তখন ৭৫ মিনিট। প্রতি আক্রমণে বলটা পাওয়ার মূহুর্তে সামনে ছিলেন কেবল রাফায়েল ভারান আর সার্জিও রামোস, এমন পরিস্থিতি থেকে আর সব সময়ে গোলই হয় ম্যাচের নিয়তি। কিন্তু সেদিন ব্যতিক্রম হলো। প্রতিপক্ষ বিপদসীমায় পৌঁছুবার আগেই মার্সেলোর ট্যাকলে বল হারালেন, সে এক ট্যাকলেই মাদ্রিদের জেতা নিশ্চিত হয়ে গেছিলো সেদিন। সে এল ক্লাসিকোর মতো নিস্প্রভ মেসি ক্যারিয়ারের কোন বড় ম্যাচে ছিলেন, সেটা একটা গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় রীতিমতো। 

তারপর ধরুন লা লিগা পারফরম্যান্সকে, পুঁচকে এসডি এইবার এর বিপক্ষে ৪ গোলের ম্যাচ বাদ দিলে সাম্প্রতিক ১৫ ম্যাচে গোল করেছেন মাত্র পাঁচটা। পুরো মৌসুমে শীর্ষ পাঁচে থাকা লা লিগা দলগুলোর বিপক্ষে গোল করেছেন মোটে পাঁচটা, যার একটা আবার এসেছে পেনাল্টি থেকে। সার্বিক বিচারে গোলের সংখ্যা যে কমে আসছে সেটা প্রায় প্রমাণিত। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য এটা অবধারিতই ছিলো। 

গোল করানোয় অবশ্য মরচে ধরেনি। এইতো কিছুক্ষণ আগেই যেমন রাকিতিচকে দিয়ে গোল করিয়েছেন, পেয়ে গেছেন ক্যারিয়ারের ২৫০তম অ্যাসিস্টও। ক্লাব ফুটবল ইতিহাসে এরচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট নেই আর কারো, এ মাইলফলকের আবিষ্কর্তা তিনিই। 

সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারতো নিঃসন্দেহে। কিন্তু হয়নি। শেষ চার মৌসুমে কেবল এক লুইস সুয়ারেজই মেসির বানানো সু্যোগগুলো মিসগুলো করেছেন তা না হলেই হতো, দেম্বেলে, কৌতিনিয়োদের কথা উঠলে আফসোসটা আরও বাড়া উচিত ‘লা পুলগা’র! 

সুযোগগুলো নষ্ট না হলে আরও কিছু শিরোপাও যোগ হতো বার্সার-মেসির ট্রফি কেসে। লিভারপুলের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক  অ্যালিসন বেকারের হাতে তুলে দেয়া দেম্বেলের শটটার কথা ভাবুন। সেটায় গোল হলে যে পরের লেগে লিভারপুলের অবিস্মরণীয় প্রত্যাবর্তন কঠিন হতো সেটা অকপটেই মেনে নিয়েছিলেন অ্যালিসন। সে বাঁধা পেরোতে পারলে ষষ্ঠ চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপাও ধরা দিতো হয়তো!

সেবার হয়নি, এবার তো করোনাক্রান্ত মৌসুমে চোখ রাঙানি দিচ্ছে শিরোপাখরাই! 

ক্রমে বুড়ো হতে থাকা দল, বোর্ড রাজনীতি আর সেসবের চক্রে পড়ে থাকা কোচ; সবকিছুর মিশেল আগামী মৌসুমগুলো নিয়েও আশাবাদী হতে দিচ্ছে না মেসি-পক্ষকে। শঙ্কাটা সত্যি হলে বার্সেলোনাতে শেষ বয়সে হতাশাই হবে মেসির সঙ্গী, আর্জেন্টিনা থেকে যেমন পেতেন।

জাতীয় দল অনন্ত আক্ষেপের নাম ছিলো, যখন ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে ছিলেন তখনো। তবে শেষ কিছু দিনে সে আর্জেন্টিনাই মেসিকে দেখাচ্ছে নতুন আশার আলো। শেষ বিশ্বকাপের পর থেকে লিওনেল স্ক্যালোনির অধীনে দলটা খেলছে দারুণ, অন্তত হোর্হে সাম্পাওলির অধীনে বিশ্বকাপ-দুঃস্বপ্ন থেকে ভালো।

শেষ কোপা আমেরিকায় সেমিফাইনাল-যাত্রা তারই প্রমাণ। তবে সে দলটা বিশ্বকাপেও ভালো পারফর্ম করে মেসিকে পরম আরাধ্য সোনার হরিণ জেতাতে সাহায্য করবে, এমন আশা কিংবা কল্পনা হয়তো অতি আশাবাদী আর্জেন্টাইন সমর্থকেরাও করেন না! 

বছর ছয়েক আগে এস্তাদিও দে মারাকানায় সে সুযোগটা এসেছিলো। বিশ্বকাপ ফাইনালের দ্বিতীয়ার্ধে লুকাস বিলিয়ার বাড়ানো বলে তার শটটা যদি দূরের পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে না যেতো, প্রথমার্ধে যদি হিগুয়াইন ‘হিগুয়াইন’ না হতেন, অতিরিক্ত সময়ে রদ্রিগো পালাসিও ‘হোর্হে বুরুচাগা’ হতে পারতেন, তাহলে হয়তো আর কোনো কিছুই চাওয়ার থাকতো না তার! সেটা হয়নি, তার আগের সুযোগগুলোয়ও হয়নি। অনন্ত আক্ষেপই তাই সঙ্গী মেসির, হয়তো থাকবে ক্যারিয়ারের শেষদিন তকও!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link