More

Social Media

Light
Dark

ভারতের ইতিহাস লেখার দিন

টুইটারে বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) এর একটি টুইট চোখে ভাসল। যার বঙ্গানুবাদ করলে এমন দাঁড়ায়, ‘১৯৮৩ সালের এই দিনে, ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য একটি ঐতিহাসিক ও বিশেষ মুহূর্ত ছিল, কপিল দেবের নেতৃত্বে বিশ্বকাপজয়ী খেতাব অর্জন করার সেই সোনালী দিন।’

দিনটি ২৫ জুন। ১৯৮৩ সালের এই দিনে ভারত প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ট্রফি অর্জন করেছিল। স্বাভাবিকভাবেই সকল ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমীদের জন্য স্বর্ণখচিত একটি দিন। স্বপ্ন সত্যি হওয়ার একটা দিন। ভারতের মাটিতে ক্রিকেট রীতিমত ধর্মে পরিণত হওয়ার একটা দিন। যেই দিনটির মহানায়ক ধরা হয় কপিল দেবকে।

ভারতের বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের ৩৯ তম বার্ষিকীতে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলবিন্দর সিং সান্ধু, সাবেক স্পিনার স্মৃতিচারণা করেন সেই দিনের, ‘কপিল খুব আত্মবিশ্বাসী এবং ইতিবাচক ছিল। স্কোর সত্যিই কম ছিল (১৮৩)। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সহজেই এই রান করতে পারে। আমরা সবাই মাঠে নামার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কপিল ড্রেসিংরুমে এলেন এবং তার চোখে জয়ের আশা ছিল। তিনি চিৎকার করে বললেন ‘চলো লড়াই করা যাক, বন্ধুরা। জয়ের জন্য তাদের ১৮৪ রান করতে হবে। সুতরাং, চলো লড়াই করি।’ আমরা সবাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে গিয়েছিলাম।’

ads

সাবেক এই পেসার সেই ফাইনালের অন্যতম তারকা ছিলেন।  তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না ৩৯ বছর পার হয়ে গেছে। সেটি মহাকাব্যিক টুর্নামেন্ট ছিল এবং ফাইনাল ম্যাচটিও। কেউ বিশ্বাস করেনি আমরা জিততে পারব। আমাদের ফেভারিট হিসেবে ট্যাগ করা হয়নি। তবে সমস্ত কৃতিত্ব কপিলের কারণ তিনি যেভাবে দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন । কপিল সর্বদা আমাদের অধিনায়ক থাকবেন। তিনি সর্বদা আমার অধিনায়ক হয়ে রইবেন। আমরা এখনও দেখা করে অনেক কিছু আলোচনা করি। আমরা সবাই হাসি এবং দিনটিকে স্মরণ করি। আমাদের অনেক স্মৃতি রয়েছে এবং আমরা চিরকাল সেগুলিকে লালন করব।’

পুরো বিশ্বকাপের সময়টাই অবিশ্বাস্য ছিল বাল্লুর চোখে। তিনি বলেন, ‘কপিলের জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৭৫ রানের অর্জন এবং ১৯৮৩ বিশ্বকাপের ফাইনাল জিতে ট্রফি তোলা এই দুটি সবচেয়ে অবিস্মরণীয় মুহূর্ত।’

আসলেই কপিল দেবের ক্যারিয়ার জুড়ে তার সর্বোচ্চ ওয়ানডে স্কোর ছিল সেই ১৭৫ রানের অপরাজিত ইনিংসটি। দুর্ভাগ্যবশত সেই ম্যাচের কোনো ফুটেজ নেই কারণ সেদিন বিবিসি ধর্মঘটে ছিল।

ঐতিহাসিক ফাইনালে তিন উইকেট লাভ করা মদন লালও দিনটির স্মৃতি রোমন্থন করেন। তিনি ও কপিল কিভাবে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ভিভ রিচার্ডসকে ঘায়েল করার পরিকল্পনা করেছিলেন সেদিন, তাও উল্লেখ করেন।

রিচার্ডস মদন লালের ডেলিভারিগুলোকে খুব পেটাচ্ছিল। এভাবে হচ্ছিল না। তাই কপিল বোলিংয়ে অন্য কাউকে আনতে চাইলেন। কিন্তু মদন তাঁর দলের জন্য এই কাজটা নিজে করতে চাইলেন এবং তিনি কপিলের কাছে গিয়ে আরেকটি ওভার চাইলেন। কপিল তখন তাঁকে ভরসা করলেন। আরেকটি ওভার বল করার সুযোগ দিলেন মদনকে। মদন ভিভ রিচার্ডসকে ঠিকি প্যাভিলিয়নে পাঠাতে সক্ষম হলেন। মজার বিষয় হলো, কিছুটা পেছনে হঠে কৌশলে ভিভ রিচার্ডসের পাঠানো বলটিকে মুঠোবন্দি করলেন স্বয়ং কপিল দেবই।

মদন লাল টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘হাততালি দিয়ে আনন্দে চিৎকার করা ভক্তদের বিশাল সমাবেশের সামনে লর্ডসের মাঠে বিশ্বকাপের ট্রফি তোলা পুরো ব্যাপারটিই ছিল অবাস্তব। সেই মুহূর্তটি মনে পড়লে আমি এখনও গুজবাম্প পাই। ভক্তদের চিয়ার্স এখনও আমার কানে প্রতিধ্বনিত হয়। আমরা ১৮৩ রান করার পর কপিল একটি কথাই বলেছিল – চলো, লড়াই করি। আমরা খুশি যে আমরা লড়াই করেছিলাম এবং ইতিহাস তৈরি করেছিলাম। কেউ আমাদের উপর ভরসা করেনি , কেবল আমরা নিজেদের উপর বিশ্বাস রেখেছিলাম । 

খুব সম্ভবত ফাইনালের দিনটিতে কপিলের তৎকালীন সব সতীর্থই সবার আগে কপিলকে মনে করবেন। কপিলের নেতৃত্ব সেদিন ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নকে বাস্তবরূপ দিয়েছিল। সেই সাথে দলীয় প্রচেষ্টা তো ছিলই। ভারতীয় কোটি কোটি ক্রিকেট ভক্তের মনে আজীবন সেই বিশ্বজয়ী দল ও কপিল দেবের জন্য আকাশচুম্বী ভালোবাসা ও সম্মান বজায় থাকবে। সেদিনটা না হলে হয়তো বৈশ্বিক  ক্রিকেটের চিত্রটাই আজ এমন হত না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link