More

Social Media

Light
Dark

নিসাঙ্কার নি:সংকোচ প্রকাশ

গল থেকে ট্রেনে মাতারা যাওয়ার পথে দেখা যায় কালুতারা এসপ্ল্যান্ড গ্রাউন্ড। এই মাঠেই কাজ করতেন সুনিল সিলভা। স্ত্রী গিথিকা গলের রাস্তার ধারে হেঁটে হেঁটে ফুল বিক্রি করতেন। দু’জনের স্বল্প আয়ে কোনো রকমে সংসার চলে যেত। সুনিলের মাঠের প্রতি প্রেম ছিল, ভালবাসা ছিল, আর ছিল ভীষণ আবেগ। একটা সময় এই মাঠকে আপন করে নিতে চেয়েছিলেন তিনি। ৫২ বছর বয়সী সুনিল স্বপ্ন দেখেছিলেন ক্রিকেটার হবেন।

২২ গজ দাপিয়ে বেড়াবেন। বাউন্ডারি হাঁকাবেন, দর্শকদের প্রশংসা কুড়াবেন। কিন্তু সেসব ভাবনা স্বপ্নেই সীমাবদ্ধ রইলো। বাবা-মা’র কঠোর শাসনের বেড়াজালে ক্রিকেটার হবার স্বপ্ন স্রেফ বুক অবধি লালন করতে পেরেছিলেন সুনিল।

গিথিকা সেনানায়কে নামক একজনের সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। ক্রিকেটার হতে পারেননি, পেশা হিসেবেও মাঠকে বেছে নিলেন। তবে, স্বপ্নকে ধূলিসাৎ হতে দেননি তিনি। ছেলে হলে তাকে ক্রিকেটার বানাবেন – এমনটাই ছিল সুনিলের ভাবনা। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে লাগলেন। খুব করে চাইছিলেন প্রথম সন্তান ছেলে হোক। ছেলেকে ক্রিকেটার বানিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করবেন।

ads

কিন্তু, বিধিবাম! প্রথম সন্তান হিসেবে দেখলেন মেয়ের মুখ। স্ত্রী গিথিকা খুশি থাকলেও সুনিল খুব একটা খুশি ছিলেন না। কিছুটা হতাশ হলেন। তবে, ক্রিকেটকে নিয়ে বুকে লালন করা স্বপ্নটা মাটি চাপা যেতে দেননি তিনি। এরপর বছর কয়েক কেটে গেল।

১৮ মে, ১৯৮৮। সুনিলের ঘর আলোকিত করে এল এক পুত্রসন্তান। সুনিল যেন খুশিতে আত্মহারা। ঈশ্বর এবার তাঁর ডাক শুনেছেন। দীর্ঘদিনের লালন করা স্বপ্ন এবার বাস্তবে রূপ দেওয়ার পালা।

‘আশা’ – এমনই একটি শক্তি যা কিনা দুর্বলকে সাহস যোগায়। শত প্রতিকূলতার মাঝেও আশা-ই মানুষকে সুন্দর আর আগামীর স্বপ্ন দেখায়। আজ অবধি পৃথিবীর যত বড় অর্জন কিংবা বিজয় এর পেছনের বড় ভূমিকা – আশা। সেই থেকেই হয়তো ছেলের নাম রাখলেন – পাথুম নিসাঙ্কা সিলভা। পাথুম নামের অর্থ – ‘আশা’। ছেলেকে দিয়ে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিবেন সেই আশাই তো তিনি করেছিলেন। নামকরণও তাই জুড়ে দিলেন স্বপ্নের সাথে।

পাঠ্যপুস্তক ছেড়ে ব্যাট হাতে ধরাতেন ছেলের। নিজের পেটে তিনবেলা খাবার না জুটলেও ছেলের জন্য সবটাই করতেন সুনিল। কোনো রকমে টানাপোড়নের সংসারে ছেলেকে বিন্দুমাত্র কষ্ট বুঝতে দেননি তিনি। ছেলেকে নিয়ে যে সুনিলের বড় আশা।

নিজেই কোচিং করালেন। সুনিলের সব পরিশ্রম আর সাধনার ফল মিললো ২২ বছর ৩১০ দিন পর। শ্রীলঙ্কার জার্সি গায়ে অভিষেক হল ছেলে পাথুম নিসাঙ্কা সিলভার। সাদা পোশাকে লঙ্কানদের হয়ে অভিষেকেই নাম লেখালেন রেকর্ড বইতে। চতুর্থ লঙ্কান ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরির দেখা পেলেন। বাবার স্বপ্নকে নিয়ে গেলেন রেকর্ড বই অবধি।

বাবা সুনিলের কাছ থেকেই ক্রিকেট শেখা। পেশাদার ক্রিকেট অবধি বাবার কাছ থেকেই শিখেছেন সব। নিসাঙ্কার ক্যারিয়ারে অবদান আছে আরও এক সুনিলের। সুনিল সালুওয়াদানা – যিনি একটা সময় কোচিং করিয়েছেন সাবেক লঙ্কান তারকা তিলকারত্নে দিলশানকে।

কালুতারা বিদ্যালয়ার হয়ে খেলতেন পাথুম। কলম্বোর স্কুলগুলো তৃণমূল থেকে প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের বেছে নিতেন। সেখানে সবার নজরে আসেন পাথুম। বেশ কয়েকটি স্কুল-কলেজ পাথুমকে নেওয়ার জন্য তোরজোর চালালো।

তবে, শেষ অবধি প্রখ্যাত ইসিপাতানা কলেজেই ঠাই হল পাথুমের। এই কলেজের সুনাম ব্যাপক। অশোক ডি সিলভা, অরবিন্দ ডি সিলভা থেকে নুয়ান জয়সা, হাসান তিলকারত্নে সহ মোট নয়জন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার সহ নামকরা অভিনেতা, গায়কও এই স্কুল থেকেই উঠে এসেছেন। নয়ের সাথে পাথুম যুক্ত হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের সংখ্যাটা এখন দশে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link