More

Social Media

Light
Dark

দুই গ্রেট, এক সূচনা

একজন ঝাঁকড়া চুলের সদ্য স্কুলের গণ্ডী পেরুনো ১৬ বছর বয়সী কিশোর ব্যাটসম্যান, অপরদিকে অন্যজন আঠারো ছুঁইছুঁই টগবগে সুদর্শন তরুন পেসার। সাদা জার্সিতে তাঁদের রঙিন ক্যারিয়ারের ওপেনিংটা হয়েছিল একই দিনে। হয়ত ভাগ্যবিধাতা মুচকি হেসে ক্রিকেট ইতিহাসের দুই উজ্জ্বল নক্ষত্রের আলো ছড়ানোর শুরুটা একই সাথে দেখে নিচ্ছিলেন। ক্রিকেট বিশ্বের নব-রূপকথার উত্থানই বলুন অথবা পাক-ভারত দ্বৈরথের অধুনা উপাখ্যান; চরিত্রের বিশেষণ কেবল দুটি নাম- শচীন রমেশ টেন্ডুলকার আর ওয়াকার ইউনুস।

১৫ নভেম্বর, ১৯৮৯ করাচি। ভারতের পাকিস্তান সফরের প্রথম টেস্টকে ঘিরে দুই সীমান্তে টানটান উত্তেজনা। দুই দলে আজহার উদ্দীন, জাভেদ মিয়াদাদ, কপিল দেব, ইমরান খান ও আবদুল কাদিরের মত তারকা ক্রিকেটারদের উপস্থিতি প্রত্যাশার পাল্লা ঠেলে ভারী করছিল সমান তালে। যেন তারকা-দ্যুতির আড়ালেই অভিষেক হয়ে গেল দুই বিস্ময় বালক শচীন ও ওয়াকারের। কানায় কানায় পরিপূর্ণ করাচি ন্যাশনাল স্টেডিয়াম তখনও জানে না কোন ঐতিহাসিক মুহূর্তের চরম সাক্ষী হতে যাচ্ছে ক্রিকেট বিশ্ব।

হোমগ্রাউন্ড আর স্ট্রং জোনের পুরোপুরি ফায়দা তুলতে একটুও ভুল করল না সন্দেহাতীতভাবে পাকিস্তানের অন্যতম শ্রেষ্ট বোলিং লাইনআপ। সাদা জার্সিতে শচীন যখন প্রথমবার মাঠে নামেন, ৪১/৪ স্কোরবোর্ডে ওয়াকার-ওয়াসিম জুটি দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সমান্তরালে। দারুণ কিছু স্ট্রেট ড্রাইভ আর অন ড্রাইভ শটে শুরুটা ভালই দেখালেন কিশোর শচীন।

ads
তিন কিংবদন্তি এক ফ্রেমে

বাঁধ সাধল শত্রুশিবিরে অভিষিক্ত ওয়াকার ইউনুসের জাদুকরী স্পেল। দারুণ সব আগুনঝরা বাউন্সারে নাকানি-চুবানি খাওয়াচ্ছিলেন শচীন-আজহারকে। দলীয় ৭৩ রানে ওয়াকার এর অসাধ্য ইনসুইং এ নিজের স্টাম্প খুইয়ে দেয়ার সময়ই শচীন চিনে রাখলেন তাঁর ‘পার্ফেক্ট এনিমি’কে। অভিষেকেই ৪/৮০ বোলিং ফিগারে উড়ন্ত সূচনা নিয়ে প্রথম ইনিংসটা নিজের করে রাখলেন ওয়াকার। তা তিনি পারবেন নাই বা কেন, স্বয়ং ইমরান খান যে আবিস্কার করেছেন তাঁকে।

দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয় ব্যাটিং অর্ডার পুরনো রূপ ফিরে পাওয়ায় ক্রিজে নামতে হয়নি শচীনকে। তবে নিজেকে প্রমাণ করতে অপেক্ষা করতে হয়নি বেশিদিন। একই সফরের পরবর্তী টেস্ট গুলোতে আবারও মুখোমুখি হয় নবীন দ্বৈরথ ওয়াকার-শচীন।

প্রথম টেস্টে নিজের অপ্রাপ্তিকে পর্যাপ্ত সামর্থ্যে পরিণত করে টানা প্রত্যেক ম্যাচে নিজেকে ধরে রাখলেন শচীন। বিশেষত সিরিজের চতুর্থ টেস্টে শিয়ালকোটের মারমুখী বোলিং এর বিরুদ্ধে নিজের জাত চেনান এই ব্যাটিং উইজার্ড। ওয়াকারের ভয়ংকর বাউন্সার সরাসরি নাকে লেগে রক্তারক্তির পরও নিজের দৃঢ়চিত্তে একটুও বিচলিত হতে দেখা যায়নি তাকে।

কোন প্রকার মেডিকেল সহায়তা নিতেও ছিলেন নারাজ। নতুন উদ্যমে ক্লাসিক সব শটে গ্রিন পিচে তুলে নেন ফিফটি। ওয়াকার ইউনুসের ভাষায়, ‘ইনজুরির পর তাঁকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল, ৫-৭ মিনিটের ছোট বিরতির পর অবিশ্বাস্য ফিফটি তার অবস্থান বোঝানোর জন্য যথেষ্ট ছিল।’

স্কুল ক্রিকেটে ট্রিপল সেঞ্চুরিকে ছেলেখেলা বানিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ এ আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন শচীন। সেখান থেকে টেস্ট স্কোয়াডে নিজের জায়গাকে পাকাপোক্ত করে নেন একের পর এক ধারাবাহিক পারফর্ম্যান্সে। ক্যারিয়ারের শুরুতে ইনিংস দীর্ঘায়নে ঝামেলা পোহালেও নিজের ক্রীড়াশৈলী আর সুনিপুণ ব্যাটিং ধীরে ধীরে তাঁকে করে তোলে আজকের লিটল মাস্টার। টেস্ট ক্যারিয়ারে ২০০ ম্যাচে রানের ঝুলিতে ৫১ সেঞ্চুরি,৬৮ ফিফটি নিয়ে যোগ করেন অতিমানবীয় ১৫,৯২১ রান!

অপরদিকে, ক্যারিয়ারের শুরুতেই ইনজুরির জন্য বাঁ-পায়ের কানি আংগুল কেটে ফেলা ওয়াকার যখন প্রথম পাকিস্তান স্কোয়াডে ডাক পান, অভিজ্ঞতা হিসেবে ছিল শুধুমাত্র ছয়টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। পরবর্তীতে অধিনায়ক ইমরান খানের খুঁজে পাওয়া এই স্বর্ণ, রিভার্স সুইং বোলিং-এ এক নতুন মাত্রা যোগ করে নিজেকে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়। সতীর্থ ওয়াসিম আকরামকে নিয়ে গড়ে তোলেন ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম ভয়ানক বোলিং লাইনআপ। মাত্র ৮৭টি টেস্ট ম্যাচ খেলে শিকার করেন ৩৭৩টি উইকেট!

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিঃসন্দেহে দুজন অপার্থিব উপহার শচীন-ওয়াকার। বিধাতার অদ্ভুত খেয়ালে কাকতালীয় ভাবে একই দিনে নতুন দুটি শেকড়ের উৎপত্তি হয় যার মহিমা আজ ফুলে-ফেঁপে মহীরুহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link