More

Social Media

Light
Dark

মুনিম ‘স্পেশাল’ শাহরিয়ার

কোন খবরে নেই। কেউ হয়ত নামটাও জানে না। অগোচরে থাকা এক ক্রিকেটার। টি-টোয়েন্টির মেজাজ বোঝা এক ক্রিকেটার। অথবা তাঁর মেজাজটাই টি-টোয়েন্টির। কোন খোঁজ খবরে না থাকা খেলোয়াড়টা হঠাৎ করে চলে এলেন জাতীয় দলে। হঠাৎ হলেও তিনি যোগ্যতার বলেই হাজির হন বাংলাদশ জাতীয় ক্রিকেট দলে।

মানুষটা আর কেউ নন, তিনি মুনিম শাহরিয়ার। সদ্যই বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলে যুক্ত হওয়া ডান-হাতি ওপেনার। প্রত্যাশার একটা মশাল জ্বালিয়ে তিনি এসেছেন জাতীয় দলে। সে মশালের জ্বালানী হতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ। এই সিরিজে নিজেকে প্রমাণ করতেই হবে মুনিম শাহরিয়ারকে।

মুনিম একটু ‘স্পেশাল’। কারণটাও বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে ‘স্পেশাল’। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আমরা যেন বড্ড বেশি আনাড়ি। আমাদের থেকেও ঢের এগিয়ে অনেক পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসা আফগানিস্তান কিংবা স্কটল্যান্ডের মত দল। এমনটা হওয়ার কারণ আমরা নির্ভার হয়ে বল পেটাতে পারি না। অথচ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মূলমন্ত্রই হচ্ছে ‘ধর তক্তা মার পেরেক’।

ads

সে কাজটাই যেন করতে সিদ্ধহস্ত মুনিম। তিনি ব্যাট হাতে বাইশ গজে নামা মানেই আগুন ঝড়বে। হোক সেটা খানিকক্ষণের জন্যে। তবুও তিনি ড্রেসিং রুমে থাকা প্রতিটা মানুষকে এটাই বলে আসেন। আমি যাচ্ছি, আমি মারবো। এই মানসিকতার বড্ড অভাব বাংলাদেশের ক্রিকেটে। আর সে মানসিকতার পুরোটা নিজের মধ্যে ধারণ করেন মুনিম। ঠিক এই কারণেই মুনিম ‘স্পেশাল’।

আরেকটা কারণও হতে পারে।আর সেটা হল অবহেলার সিঁড়ি বেয়ে সফলতার পাদদেশ খুঁজে পাওয়া। বাংলাদেশের ক্রিকেটে আসলে ঝুঁকি নেওয়ার মত মানসিকতার অভাবও রয়েছে। মুনিম যেভাবে খেলেন সেটা একটু ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি সবদিন রান করবেন না। তিনি সব দিন টিকে থাকতেও পারবেন না। সেদিন হয়ত দল খানিকটা ব্যাকফুটে চলে যাবে। তবে যেদিন তাঁর ব্যাট হাসবে, সেদিন প্রতিপক্ষের চোখে অথৈ সাগর বহমান হওয়া যেন অবধারিত।

মুনিম নিজের মধ্যে সে সক্ষমতাটা ধারণ করেন। তবে তাই তিনি ছিলেন অবহেলিত। ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেন তিনি আবাহনীর হয়ে। পারফর্মার তিনি অবশ্যই। তবে অদ্ভুত ভাবেই টি-টোয়েন্টিতে প্রায় ১৪০ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করা একজন খেলোয়াড় শুরুর দিকে দল পাননি বিপিএলে। প্লেয়ার ড্রাফটের বাইরে থেকে তাকে দলে ভেড়ায় ফরচুন বরিশাল। আর তাতেই যেন ভাগ্য খুলে যায় মুনিমের।

আলোচনায় চলে আসেন তিনি। বিসিবি কর্তাদের নজরও কাড়েন নিজের বিধ্বংসী পারফর্মেন্স দিয়ে। আর নিজের স্বভাবজাত খেলাটা খেলে তিনি জায়গা করে নেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে লাল-সবুজ জার্সি গায়ে অভিষেক হয় তাঁর। সে সিরিজটা নিজের করে নিতে পারেননি মুনিম। ব্যর্থ হয়েছেন তা বলার উপায় নেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন একজনকে নিশ্চয়ই সময় দেওয়া প্রয়োজন।

সে সময়টাই তিনি হয়ত পাচ্ছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের মধ্য দিয়ে। তবে এখানে একটা  কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজটাই হয়ত মুনিমের সামর্থ্য দেখানোর অন্যতম সেরা মঞ্চ হতে পারে। তিনি হয়ত তেমনটা করতেই ঘাম ঝড়াচ্ছেন অনুশীলনে। কিন্তু যদি তিনি ব্যর্থ হন সেখানটায়, তবে সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে দল থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার।

কেননা ওই যে বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতিতে ঝুঁঁকি নেওয়ার নজির কম। ঝুঁঁকি এড়াতে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের সাথে যুক্ত করা হয়েছে এনামুল হক বিজয়কে। এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ফর্মের একেবারে শীর্ষে ছিলেন তিনি। রেকর্ড পরিমাণ রান সংগ্রহ করেছেন বিজয়। সুতরাং মুনিম একটু ভুল করলে বিজয়কে হয়ত সুযোগ  দিতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট।

তবে সেটা নির্ভর করবে মুনিম শাহরিয়ারের উপর । এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে দেখার পালা মুনিম নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখতে পারেন কি না। নতুবা তিনি হারিয়ে যাবেন আরও এক উল্কা-পিণ্ড হয়ে ক্রিকেট নামক মহাকাশের অতল গহ্ববরে। সময় জানে সবকিছুর উত্তর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link