More

Social Media

Light
Dark

মরুর বুকে সালমাদের জয়কাব্য

পত্রিকার লিড নিউজে ঠাঁই পান না তাঁরা, তাঁদের ছবি ছাপা হয় কালে ভদ্রে। অথচ, দেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে সেরা সাফল্যটা এসেছে মেয়েদের কল্যান্যেই। সালমা খাতুনের দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল এশিয়া কাপের মঞ্চে, সেটাও বিশ্ব সেরাদের কাতারে থাকা ভারতীয় মেয়েদের হারিয়ে। তারপরও ছেলেদের দল যে পরিমান ‘সুপার স্টারডম’ ভোগ করে সেটা তাঁরা পান না।

শুধু তাই নয়, সব সময় পারিশ্রমিকের নিশ্চয়তাও নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বেতন কাঠামোতে বৈষম্য যেমন আছে, তেমনি ঘরোয়া ক্রিকেটের দলগুলোরও নারীদের প্রতি আছে অনীহা। পারিশ্রমিক চাইলে কর্মকর্তাদের গালিগালাজও সহ্য করতে হয়েছে জাতীয় দলের ক্রিকেটারকে।

তবে, এসব গঞ্জনাকে আরো একবার বুড়ো আঙুল দেখালেন বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটারদের একজন সালমা খাতুন। মেয়েদের ‘আইপিএল’ খ্যাত ওমেনস টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জে বাজিমাৎ করেছেন তিনি।

ads

আগে টুর্নামেন্টটা নিয়ে একটু বলা যাক। বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) আয়োজনে নভেম্বর পর্দা এই আসরের। অংশ নিয়েছে তিনটি দল – সুপার নোভাস, ট্রেইল ব্লেজার্স ও ভেলোসিটি। মোট চারটি ম্যাচের খেলায় এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়ে যায় নয় নভেম্বরই, সোমবারে।

নারীদের এই আসেরে খেলার সুযোগ পান দুই বাংলাদেশি – জাহানারা আলম ও সালমা খাতুন। টুর্নামেন্টটিতে দ্বিতীয় বারের মত ভেলোসিটির হয়ে খেলছেন জাহানারা। জাহানারা গতবারের আসরেও ভেলোসিটির হয়ে খেলেছেন। অন্যদিকে ট্রেইলব্লেজার্সের জার্সি গায়ে প্রথমবারের মত এই আসরে নিজেকে সম্পৃক্ত করলেন সালমা। হয়তো নতুন কোনো সৌরভ ছড়ানোর উদ্দেশ্যেই পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি আরব আমিরাতে।

এই আসরের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয় শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। ম্যাচে ট্রেলব্লেজার্স প্রথমে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ১১৮ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ২০ ওভারে সাত উইকেটে ১০২ রানে গুটিয়ে যায় দুই মৌসুমের শিরোপা জয়ী সুপার নোভাস। যার ফলে ১৬ রানের জয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতে নেয় ট্রেইলব্লেজার্স।

ফাইনালে অসাধারণ বোলিং নৈপূণ্য দেখান বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সালমা খাতুন। ৪ ওভার বল করে ১৮ রানের বিনিময়ে তিন উইকেট শিকার করেন এই ডানহাতি টাইগ্রেস স্পিনার। সাথে ছিল দারুণ এক রান আউট। তাতে শেষ পর্যন্ত আর লক্ষ্য ছোঁয়া হয়নি সুপার নোভাসের,হয়নি তাদের হ্যাটট্রিক শিরোপা জেতাও।

শুধু ফাইনাল নয়, পুরো টুর্নামেন্টেই নিজের দ্যুতি ছড়িয়েছেন বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের সেনাপতি। কমতি ছিল একটিই;  ডান হাতি অলরাউন্ডার হিসেবে পরিচিত সালমা খাতুন আইপিএল টুর্নামেন্টে ব্যাটের মাধ্যমে নিজের দক্ষতার শিখা ছড়ানোর সুযোগ পাননি। তবে, বোলিং দিয়ে সেটা পুষিয়ে দিয়েছেন। বোলিংয়ে নিজের পরিচয়ের আবারও যেন জানান দিয়েছেন সালমা; হয়েছেন কাগজের হেডলাইনও।

টুর্নামেন্টে ১০ ওভার বোলিং করে ওভার প্রতি মাত্র ৪.৭০ রান দিয়েছেন তিনি। টি-টোয়েন্টির বিবেচনায় এই ইকোনমি দুর্দান্ত।

আসর জুড়ে আলোচিত ছিলেন জাহানারও। পেসার জাহানারা আলম দীর্ঘ আট মাস পর খেলতে নেমেছেন। এতদিন পর দ্রুত ছন্দে ফেরাটা সহজ ছিল না একজন পেসারের পক্ষে। ভেলোসিটির বিপক্ষে তার বোলিংয়ের গতিও ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম। কিন্তু, অভিজ্ঞতা দিয়ে সেই ঘাটতি পুষিয়ে দিয়েছেন তিনি। দুই ম্যাচ খেলে দুই উইকেট নেন তিনি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেক রেকর্ডেই ছেলেদের আগে লেখা হয়েছে মেয়েদের নাম। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেও শিরোপা বিবেচনা করলে, মেয়েদের অর্জনই বেশি। আর এখন বৈশ্বিক ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরেও পারফরম করছেন মেয়েরা। এত অর্জনের হাত ধরে ঘুঁচে যাক সকল বৈষম্য!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link