More

Social Media

Light
Dark

অভাগার শুকনো সাগর

ভুল সময় বলতে যদি কিছু থেকে থাকে তবে তা সামনে থেকে হয়ত দেখেছেন ভারতীয় ক্রিকেটার সৈয়দ সাবা করিম। এই একটা কারণ হয়ত তাঁর আক্ষেপের ক্ষতে খানিক স্বস্তি দেয়। আসলেই কি জাতীয় দলে খেলতে না পারার বা সুযোগ কম পাওয়ার ক্ষত কখনোই কি উপশম হয়? হয় না বোধকরি, ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করেও সুযোগ না পাওয়াটা বেশ বেদনাদায়ক। নিজেকে দুর্ভাগ্যবানও আখ্যায়িত করেন হয়ত তিনি।

সৈয়দ সাবা করিম ১৪ নম্ভেম্বর ভারতের বিহার প্রদেশের পাটনায় জন্মেছিলেন। ক্রিকেট ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময়ই তিনি কাটিয়েছেন প্রদেশ দলের সাথে। ডান-হাতি ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি তিনি উইকেটে পেছনের দায়িত্বও পালন করতেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ প্রসিদ্ধ ও প্রশংসিত ছিলেন দস্তানা কিংবা ব্যাট হাতে। তবে সে প্রশংসার পালে হাওয়া লেগেছে বহু পরে। সাবা করিম নামক তরী আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পাড়ে ভিড়েছে লম্বা সময়ের সংগ্রাম শেষে।

মাত্র ১৫ বছর বয়সেই তিনি হাজির হয়ে গিয়েছিলেন প্রথম শ্রেণি ক্রিকেট খেলতে। ঠিক কতটা দক্ষতা এবং সক্ষমতা থাকলে একজন কিশোর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পা রেখে পারফর্ম করতে পারে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সাবা করিম ছিলেন ব্যাট হাতে সুদক্ষ, দস্তানা হাতে চৌকস। ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর নামের পাশে বিশাল অংকের এক রান তাঁর নামকেও যেন আরও বেশি সুসজ্জিত করছে।

ads

প্রথম শ্রেণি ক্রিকেট তিনি রান করেছেন ৭৩১০ রান। তবে সবচেয়ে চমকপ্রদ তাঁর ব্যাটিং গড়। যেহেতু তিনি ছিলেন উইকেটরক্ষক তাই সাধারণত ব্যাটিং ইনিংসের একটু নিচের দিকে নামতে হত তাঁকে। তবুও তিনি যেন ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে কখনোই খুব মাথা ঘামাননি। বরং তিনি যখনই সুযোগ পেয়েছেন নিজের ইনিংসকে বড় করেছেন। রান করে দলকে স্বস্তি জুগিয়েছেন। আর ক্যারিয়ারে জুড়ে নিয়েছেন ৫৭ সংখ্যার গড়। তাঁর ব্যাটিং ক্যালিবার নিয়ে তো প্রশ্নের সুযোগ ঠিক এখনটায় শেষ হয়ে যায়।

প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে অভিষেকের প্রায় ছয় বছর বাদে হঠাৎ বৃষ্টির মত তাঁকে ডেকে নেওয়া হয় জাতীয় দলে। অতিরিক্ত উইকেট রক্ষক কোটায় তিনি গিয়েছিলেন। তবে একেবারেই তরুণ বলে হয়ত তাঁর আর খেলার সুযোগ হয়নি তাঁর। তিনি হয়ত সেবার নিজেকে আরও বেশি প্রস্তুত করার স্পৃহা নিয়ে ফিরেছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। তিনি সেখানটায় নিজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছিলেন। আর এসেই নিজের প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রান।

১৯৯০-৯১ সালে উড়িষ্যার বিপক্ষে রঞ্জি ট্রফিতে করেছিলেন ২৩৪। তবুও টেস্ট ক্রিকেটের জন্যে তিনি খুব সহসাই বিবেচিত হননি তিনি জাতীয় দলে। উইকেট রক্ষক হিসেবে না হোক অন্তত ব্যাটার সাবা করিম হিসেবেও তিনি অন্তত সুযোগ পেতেই পারতেন। তাছাড়া দস্তানা হাতে তিনি যে একেবারেই অকার্যকর ছিলেন তেমনটা বলার সুযোগও নেই। উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে ২৪৩টি ক্যাচ লুফে নিয়েছেন।

তাছাড়া ৫৫ দফা প্রতিপক্ষে ষ্ট্যাম্প তুলে ফেলে সতীর্থ বোলারকে উইকেট পেতে সহয়তা করেছেন। তবুও ওই যে ভুল সময়ের বলি তিনি। তাঁর সময়ে ভারত জাতীয় দলে উইকেটের পেছনে নয়ন মঙ্গিয়া ছিলেন অবিচ্ছেদ্য। তাছাড়া নয়ন মঙ্গিয়ার পরও তিনি ছিলেন অবহেলিত। তাঁর পরিবর্তে ১৯৯৯ বিশ্বকাপের জন্য দলে সুযোগ পেয়েছিলেন এমএমকে প্রসাদ ও সমীর দিঘে। তবে ওয়ানডে ফরম্যাটটাও তিনি যে একেবারেই খারাপ গোছের ক্রিকেটার ছিলেন তা নয়।

‘লিস্ট এ’ ক্যারিয়ারেও তাঁর রান প্রায় আড়াই হাজার। তাছাড়া সেখানেও ১৫০ ডিসমিসালে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।অথচ আন্তর্জাতিক ওয়ানডে  অভিষেকে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দূর্দান্ত এক হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। কিন্তু খুব একটা সুযোগ তাঁকে দেওয়া হয়নি। তিনি চলে যান দলের বাইরে। তবে শত অপেক্ষার পর তাঁর জীবনে আসে সে মাহেন্দ্রক্ষণ। তাঁর অভিষেক হয় ক্রিকেটের বনেদি ফরম্যাটে। শুভ্র সাদা জার্সি পড়ে তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলেন বাংলাদেশের মাটিতে। 

তবে ওই যে বলেছিলাম তিনি অভাগা। ভাগ্যই কখনো তাঁর প্রতি সুপ্রসন্ন হয়নি। অভিষেক টেস্টেই তিনি পড়েন ইনজুরিতে। অনিল কুম্বলের একটি বল গিয়ে আঘাত করে তাঁর চোখে। শুরুতেই শেষ। ওই এক টেস্টেই থেমে যায় সাবা করিমের আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্যারিয়ার। অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকিয়ে যায়। ঠিক এমন দশাই হয়েছিল সাবা করিমের। নতুন একটি শতকে শুরুর বছরই থেমে যায় তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার।

শুধু সময়ের সহায়তাটুকু পেলেই তিনি হতে পারতেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এক কিংবদন্তি। অন্তত টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর ভারতকে অনেক কিছু দেওয়ার ছিল। লোয়ার অর্ডারে তিনি বেশ কার্য্কর একজন ব্যাটার হিসেবেই নিজেকে মেলে ধরতে পারতেন। সবই আসলে সময়ের খেলা কিংবা নিয়তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link