More

Social Media

Light
Dark

ষাট বছর লোহার পাতের সাথে বসবাস

আপনি ক্রিকেট থেকে কখনোই দূরে সরে যেতে পারবেন না। পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে একবার ক্রিকেটের অতলের হারিয়ে গেলে সেখান থেকে নিজেকে ফিরিয়ে আনা বড্ড ঝক্কির কাজ। স্মৃতির পাতায় কিংবা শরীরের ব্যথায় বারবার মনের কোণে উঁকি দেবে ক্রিকেটের কথা। যেমন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার নরি কন্ট্রাক্টরের কথাই ধরুণ না। ৮৮ বছর বয়সেও ক্রিকেটের এক বেদনাতুর স্মৃতি থেকে যেন রেহাই নেই তাঁর।

ঘটনাটা ১৯৬২ সালের। তখন ভারত দল একটা সিরিজ খেলতে গিয়েছিল ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। সেখানেই ক্রিকেটের সব থেকে মারাত্মক নেতিবাচক দিকটার সাথে পরিচয় হয় নরি কন্ট্রাক্টরের। মাথার আঘাত। সে সময়ে এতসব অত্যাধুনিক সব সাজসরঞ্জাম ছিল না।

মাথায় তখন হেলমেট পড়াটাও যেন ছিল এক ধরণের বিলাসিতা। তবে সেই ষাটের দশকে যে বিধ্বংসী সব বোলার ছিল না তা কিন্তু নয়, ছিল। তাঁরা কথায় কথায় বাউন্সারও হাঁকাতেন। তেমনি এক বাউন্সারে কুপকাত হয়েছিলেন ভারতের হয়ে ৩১ টেস্ট খেলা খেলোয়াড় নারি কন্ট্রাক্টর।

ads

মাথায় বসেছিল আস্ত এক ‘মেটাল প্লেট’ শুধু যে বাইশ গজেই ধরাশায়ী হয়েছেন বিষয়টা তেমন নয়। সে এক ইনজুরি তাঁকে ছিটকে দেয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। তবে তাঁর সেই ইনজুরির পেছনে বেশকিছু ঘটনা যেন সেলাই করার সুতোর মত একের পর এক গাঁথা। প্রথমমত চার্লি গ্রিফিতির যে বাউন্সারে কন্ট্রাক্টরের মাথায় আঘাত পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন তার ঠিক আগ মুহূর্তে শর্ট লেগে তিনি একদফা জীবন পান।

শট লেগে থাকা ফিল্ডার ক্যাচ ফেলে দেয়। তবে ম্যাচে তিনি একবার জীবন পেলেন ঠিক, তবে সে জীবন পাওয়াটা হয়ত তিনি দু:স্বপ্নেও চাইবেন না। তিনি যদি সে যাত্রায় শর্ট লেগে তালুবন্ধি হতেন তাহলে হয়ত আর তাঁকে এমন দুর্বিষহ এক যাত্রার মধ্য দিয়ে যেতে হত না। সে যাই হোক। যা হওয়ার থাকে তা আটকানোর ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা তো আর মানুষকে দেননি। সে যাই হোক।

কন্ট্রাকটারকে যে বলটি এসে আঘাত করেছিল তাঁর কয়েক বল আগে থেকেই কন্ট্রাক্টরের সতীর্থ রুশ শুর্তি তাঁকে জানিয়েছিলেন যে চার্লি ‘চাক’ বল করছে। কন্ট্রাক্টর রুশকে বলেছিলেন যে সেটা তাঁকে না জানিয়ে যেন আম্পায়ারকে জানান রুশ।

তবে এটা অনেকেই বিশ্বাস করেন যে কন্ট্রাক্টর সেদিন খুব বেশি অন্যমনষ্ক ছিলেন। অনেকেই বলেন তিনি নিচু হয়ে বল ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন, আবার অনেকে বলেন তিনি সটান দাঁড়িয়ে খেলেছিলেন সে বল। আবার এতসব গুঞ্জনের মাঝে সনামধন্য ক্রীড়া সংবাদমাধ্যম ‘উইজডেন’ বলেছিল তিনি ‘ডাক’ করে বল ছেড়ে দিতে চাননি।

বরং তিনি বলের পিছনে গিয়ে সজোরে পুল শট খেলতে চেয়েছিলেন। অন্যমনষ্ক যে তিনি ছিলেন তাও স্বীকৃতি দিয়েছে উইজডেন। এর কারণ হিসেবে সাজঘরে কেউ একজন জানালা খুলে কন্ট্রাক্টরের মনোযোগে ব্যঘাত ঘটিয়েছিল। এরপর যা হবার তাই হল। তরিঘরি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। লম্বা একটা সময় ধরে তাঁর অপারেশন হয়।

বেশ কিছু খেলোয়াড় সহ এক সাংবাদিক তাঁর জন্যে রক্তদানও করেছিলেন। তাছাড়া বেশ কয়েকবার অস্ত্রাপচার টেবিল ঘুরে অবশেষে প্রায় আড়াই ঘন্টা যাবৎ এক অস্ত্রাপচার হয় তাঁর। কন্ট্রাক্টরের শৈল্যচিকিৎসক জানিয়েছিলেন যে তাঁর মাথায় এঁটে দেওয়া হয়েছিল এক লোহার পাত।

যে পাত কখনো গরম কিংবা ঠাণ্ডা হবে না। এরপর কন্ট্রাকটার প্রায় ছয়দিন অচেতন অবস্থায় ছিলেন হাসপাতালের বিছানায়। স্বাভাবিক জীবনে তিনি ফিরেছিলেন দীর্ঘ একটা বিরতি শেষে। ক্রিকেট মাঠেও ফিরেছিলেন তবে আন্তর্জতিক ক্রিকেটে আর ফেরা হয়নি তাঁর।

হঠাৎ করেই ষাট বছর আগের এক স্মৃতি যেন সজীব হয়ে উঠলো কন্ট্রাক্টরের মাথায়। সেই যে লোহার পাত, সেটা এবার একটু অস্বস্তির কারণ হতে শুরু করে। নতুন দিনের ডাক্তারদের পরামর্শে সে পাত খুলে ফেলা হয়। তবে সে পাত খুলতে গিয়ে কন্ট্রাকটর হারিয়েছেন তাঁর কপাল ও মাথার ত্বক। তাছাড়া তাঁর পরিবার বেশ উৎকন্ঠায় ছিলেন ৮৮ বছর বয়সে মাথার এক কঠিন অস্ত্রপচার করাটা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। তবে বেশ সফলতার সাথেই তাঁর অস্ত্রপচার সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর ছেলে।

কন্ট্রাক্টরের ছেলে হোশেদার বলেন, ‘অস্ত্রপচার সফল হয়েছে এবং খুব শিঘ্রই তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন। তিনি আরও কিছুদিন হাসপাতালেই থাকবেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’ যে ক্রিকেট খেলে আজ কতশত খেলোয়াড় হয়েছেন মহারথী, সেই ক্রিকেটই আবার প্রাণ কেড়ে নেওয়ার দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়। ক্রিকেটকে বোঝা বড় দায়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link