More

Social Media

[ivory-search id="135666" title="Post Search"]
Light
Dark

মহারাজ একি সাজে…

মহারাজা! তোমারে সেলাম
সেলাম, সেলাম, সেলাম

না, হীরক মহারাজ নন। এ রাজা প্রোটিয়া মহারাজ, কেশব মহারাজ। ডারবান টেস্টের পঞ্চম দিন পুরোটাই নিজের করে নিলেন মহারাজ। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অতিথিদের একেবারে নাকানিচুবানি খাইয়ে তিনি নিজের দলকে এনে দেন এক অতি সহজ জয়। যে জয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকায় একটা শক্ত অবস্থান গড়ে ফেলতে পারল দক্ষিণ আফ্রিকা।

দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে পঞ্চম দিনের খেলা। স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের যে কোন প্রান্তে টেস্টের চতুর্থ ইনিংস কিংবা পঞ্চম দিনে ব্যাট করা মানেই সাক্ষাৎ এক মৃত্যুকূপ। বাংলাদেশের টেস্ট দলের অধিনায়ক মুমিনুল হক অকপটে সে মৃত্যুকূপে ঝাপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন। বড় অদ্ভুত এক সিদ্ধান্ত। হয়ত সবাই ভেবেছিল তিনি তাঁর ব্যাটারদের উপর পূর্ণ আস্থা রেখেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে দৃশ্যপটে যে একজন মহারাজের ঘূর্ণি জাদু প্রকট হবে তা হয়ত আন্দাজই করতে পারেননি মুমিনুল।

চতুর্থ দিনের একেবারে শেষ সেশন শেষ হওয়ার খানিক আগে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। প্রোটিয়ারা ততক্ষণে স্কোরবোর্ডে ২৭৪ রানের এক বিশাল লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিয়েছে। বিশাল লক্ষ্যমাত্রা আর চতুর্থ ইনিংস ব্যাট করতে নামার একটা অদৃশ্য স্নায়ুচাপ সেই সাথে মহারাজ আর সিমন হার্মারদের ঘূর্ণি জাদু সব মিলিয়ে মাঠে নামার আগেই যেন নিজেদের সবচেয়ে তুচ্ছ মনে করতে শুরু করেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা।

ads

সেই মানসিক পরিস্থিতি আরও বিষিয়ে তোলেন প্রথম ইনিংসের শর্প হয়ে দংশন করা হার্মার, তাঁর সাথে যোগ দেন কেশভ মহারাজ। তবে হার্মারকে এবার আর নিজের থেকে এগিয়ে যেতে দেননি মহারাজ। চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে বাংলাদেশ মাত্র ছয়টি ওভার ব্যাটিং করার সুযোগ পায়। সে ছয় ওভারেই পঞ্চম দিনটা যে ঠিক কতটা ভয়ংকর হতে চলেছে বাংলাদেশের ব্যাটারদের জন্যে সে আভাসটা দিয়ে দেন প্রোটিয়া দুই স্পিনার মহারাজ ও হার্মার।

মাত্র ১১ রানেই তিন উইকেট খুইয়ে ফেলে বাংলাদেশ। প্রথম আঘাতটা হানেন হার্মার। নিয়ে নেন সাদমান ইসলামের উইকেট। তারপর দ্বিতীয় ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদুল হাসান জয়কে ফেরান কেশব মহারাজ। এরপর আবার কেশব মহারাজের আঘাত। প্যাভিলনে ফিরে গেলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল হক। অথচ চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত যে একেবারেই ভুল নয় মুমিনুল সেটা তো তাঁরই প্রমাণ করার ছিল। সে যাই হোক, খানিক স্বস্তি শেষ চতুর্থ দিন।

কিন্তু মহারাজ তখন হয়ত মনে মনে ভাবছিলেন, ‘ওহে বাংলাদেশ এত কেবল শুরু’। পঞ্চম দিনের সকাল। সূর্য তখনও তাঁর প্রকট আলোর বিকিরণ শুরু করেনি। ডারবান তখন অপেক্ষায়, টেস্টের ফলাফল যাবে কোনদিকে। সে জন্যে খুব বেশি অপেক্ষা করার সুযোগই দেননি কেশব মহারাজ। ১৩ ওভার, ৫৫ মিনিট। সকালটা ঠিক মধুর হয়ে রইলো প্রোটিয়াদের। ভিন্ন চিত্র বাংলাদেশ শিবিরে।

প্রায় ঘণ্টাখানেকের মধ্যে দুমড়ে-মুচড়ে শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। পঞ্চম দিনে মাত্র সাতটি ওভার করেছেন মহারাজ। আর সে সাত ওভারই যে যথেষ্ট ভীতসন্ত্রস্ত বাংলাদেশি ব্যাটারদের প্যাভিলনের ফেরানোর জন্যে তা দিনের আলোর মতই স্পষ্ট হয়ে গেল। আগের দিনের দুই উইকেটের সাথে এদিন আরও পাঁচটি উইকেট নিজের ঝুলিতে পুরেছেন কেশব মহারাজ। একে একে তাঁর শিকারে পরিণত হন, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, ইয়াসির আলী চৌধুরি, তাসকিন আহমেদ ও খালিদ আহমেদ।

অন্যদিকে কেবল নাজমুল হোসেন শান্ত ও মেহেদী হাসান মিরাজের উইকেট তুলে নিতে সক্ষম হন হার্মার। একটা প্রান্ত থেকে বাংলাদেশি ব্যাটারদের নাভিশ্বাসের কারণ হয়ে উঠেছিলেন মহারাজ। পঞ্চম দিনের উইকেটে থাকা ফাঁটল ও সে সাথে নিজের স্বাভাবিক টার্নের সংমিশ্রণ করে বাংলাদেশ ব্যাটারদের কোনরকম সুযোগই দেননি মহারাজ। সত্যি বলতে বাংলাদেশের ব্যাটাররা বুঝেই উঠতে পারছিলেন না কি করে টিকে থাকা যাবে ডারবানের সেই উইকেটে।

আর সে দোলাচলের ফায়দা আর চেনা কন্ডিশনের সুবিধা মিলিয়ে কেশব মহারাজ রীতিমত উৎসব করেছেন ডারবানের বাইশ গজে। সত্যিকারের রাজার মত তিনি রাজত্ব করেছেন পঞ্চম দিনের সে উইকেটে। সে রাজার আক্রমণের কোন উত্তরই জানা ছিল দূর দক্ষিণ এশিয়া থেকে যাওয়ার কিছু ক্রিকেটারের। ৩২ রান খরচা করে সাত উইকেট শিকার করে থামে কেশব মহারাজের বোলিং তাণ্ডব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link