More

Social Media

Light
Dark

ঝঞ্ঝার মত উদ্দ্যাম

সোমবার সকালে হঠাতই বিসিবিতে একটা ফোন এলো। খোদ গৌতম গম্ভীর তাসকিন আহমেদকে আইপিএলের নতুন দল লখনউ সুপার জায়েন্টেসের জন্য চাচ্ছেন। এরপর প্রস্তাবটা তাসকিন আহমেদের কাছেও গিয়েছে। প্রথমবারের মত আইপিএলে ডাক পেলেন। যেকোন ক্রিকেটারের জন্যই স্বপ্নের মত ব্যাপার। তবে তাসকিন বোধহয় আরো বড় কোন স্বপ্ন দেখছিলেন। স্বপ্নটা কী?

সেই অভিষেক ম্যাচ ভারতের বিপিক্ষে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন। এরপর তাসকিন আহমেদ বাংলাদেশকে অনেক কিছুই দিয়েছেন। তবে পাঁচ উইকেট নেয়া হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরিয়নের এক ইতিহাসের ভিত্তি গড়ে দিলেন তাসকিন। প্রথমবারের মত সিরিজ জয়ের মঞ্চটা গড়ে দিলেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার এই উড়ন্ত দলটাকে ঘরের মাঠে মাটিতে নিয়ে এলেন। একাই দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইন আপটাকে চূর্ন-বিচূর্ন করে দিলেন। আবারো তাসকিনের পাঁচ উইকেট, ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয়। বদলে যাওয়া তাসকিন আহমেদের সর্বোত্তম রূপটা দেখলো ক্রিকেট দুনিয়া।

ads

তাসকিনের এই রূপটা অবশ্য গত এক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে। ইনজুরির কারণে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলতে পারেননি। একটা স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল। বিসিবি একাডেমি ভবনের সামনে চোখে জল নিয়ে বলেছিলেন তিনি আবার ফিরে আসবেন। নিজের সেরা রূপ নিয়ে। তাসকিন শুধু বলার জন্যই বলেননি। তাসকিন আসলে তাঁর সেরাটা নিয়েই এসেছেন, গোটা ক্রিকেট দুনিয়াকে তাক লাগিয়েছেন।

গত একবছরে তিন ফরম্যাটেই তাসকিন অনবদ্য, অপ্রতিরোদ্ধ। এই পেসারকে সামলায়কে। প্রথম ওয়ানডে ম্যাচটা জয়ের পিছনেও বড় ভূমিকা ছিল তাসকিনের। তাসকিনের এই ফর্ম নজর কেড়েছে আইপিএলের দলগুলোরও। সিরিজের মাঝপথেই প্রস্তাব আসলো আইপিএলে যোগ দেয়ার।

তবে তাসকিন স্বপ্ন দেখছিলেন আরো বড় একটি জয়ের। নিজের সেরা রূপটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওই লাল সবুজের জার্সি গাঁয়েই দেখানোর। আইপিএল খেলার ইচ্ছাটাকে চাপা দিলেন। এত বড় মঞ্চ, এত বড় তারকাদের সাথে একসাথে খেলার সুযোগ হাতছানি দিচ্ছিল। তবুও তাসকিন অটল ছিলেন। ওই লাল সুবজ জার্সি গায়েই তাঁর সবচেয়ে বড় স্বপ্নটা পূরণ করবেন বলে।

তাসকিন আহমেদকেও খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। আজ তাসকিন শুরু থেকেই এক আগ্নি বারুদ। আজ অধিনায়ক তাসকিনকে কোন এক অজানা কারণে নতুন বল তুলে দেননি। সেটিও বুঝি আরো একটু তাঁতিয়ে দিল এই পেসারকে। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার হাত থেকে ম্যাচ বের করে আনলেন। শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপটাকে তাসকিন স্রেফ একটা খেলনায় পরিণত করলেন।

পাওয়ার প্লেটাতে ভালোই শুরু করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে সেই শুরুটাকে একাই চাপা দিলেন তাসকিন নামের এক ঝড়। সেঞ্চুরিয়নের উইকেটে তিনি প্রমাণ করলেন এখানে পেসাররা কী করতে পারেন। কিংবা একটু ভালো পিচ পেলে তাসকিনরাও যে বিশ্বসেরাদের একজন হয়ে উঠতে পারেন সেই বার্তাটা জানান দিলেন।

প্রথম স্বীকার হিসেবে বেঁছে নিলেন কাইল ভেরিনকে। ইনসাইড এইজ হয়ে স্ট্যাম্পে আঘাত করলো তাসকিনের বলটা। দক্ষিণ আফ্রিকা একটা হোঁচট খেল। তবে এরপর আর বেশি সময় দেননি বিপদজনক হয়ে উঠা জেনম্যান মালানকেও। ৩৯ রান করা এই ব্যাটারকেও ফেরান তাসকিন আহমেদ।

অবশেষে ম্যাচের একটা নিয়ন্ত্রণ পেল বাংলাদেশ। এরপর বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে বাকি ছিলেন ডেভিড মিলারকে। এই ব্যাটারকে উইকেটে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি। সবমিলিয়ে অবশেষে সাত বছর পর আবারো তাসকিনের ঝুলিতে পাঁচ উইকেট। তাসকিনকে না পাওয়ায় আইপিএল যেন আরো একবার আক্ষেপের শব্দ করলো।

সবিমিলিয়ে আজ মোট নয় ওভার বোলিং করে খরচ করেন মাত্র ৩৫ রান। ডট বলই করেছেন মোট ৩৮ টি। তুলে নিলেন পাঁচ উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ঠিক দশবছর পর আবার বিদেশি কোন পেসার পাঁচ উইকেট নিতে পারলো। সর্বশেষ প্রোটিয়া মাটিতে পাঁচ উইকেট পেয়েছিল লাসিথ মালিঙ্গা। আর আজ পেলেন তাসকিন আহমেদ। আরেকবার বাংলাদেশের পতাকা উড়লো, আরেকবার তাসকিনের জয়গান হলো।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link