More

Social Media

Light
Dark

দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিংয়ের পাকিস্তানি ধারা

পাকিস্তান, ক্রিকেট অঙ্গনে এই নামটা শুনলেই মনের অলিতে গলিতে উঁকি দেয় ভয়ংকর সব পেস বোলারদের নাম। ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস কিংবা হালের শাহিন শাহ আফ্রিদি। পাকিস্তান ক্রিকেট বরাবরই পেস বোলারদের পুন্যভূমি। তাই বলে যে দেশটির ক্রিকেটে ব্যাটারদের অভাব ছিলো তা কিন্তু নয়।

জাভেদ মিঁয়াদাদ, সেলিম মালিক, ইনজামাম উল হক, সাঈদ আনোয়ার, ইউনুস খান, এখানেও তো সব বড় বড় নাম। তবে আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় পাকিস্তানের সবচেয়ে নান্দনিক ব্যাটার কে? একটু হয়ত ইতোস্ততবোধ হবে, তবুও বেশকিছু নাম শোনা যাবে। তবে এই যে বড় বড় নামের ভিড় এরা সবাই নি:সন্দেহে ভাল খেলেছেন, রান করেছেন। তবে তাঁদের ব্যাটিংয়ে ঠিক সেই নান্দনিকতা ছিল না। আজ সেই নান্দনিকতা খোঁজার পালা।

  • মাজিদ খান

নিজের শেষ টেস্ট ম্যাচটা খুব একটা স্মরণীয় করে রাখতে পারেননি মাজিদ খান। ১৩ বল খেলে মাত্র শূন্য রানে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছিলেন তিনি। তবে তাতে কি তাঁর ব্যাটিং এর নান্দনিকতার ব্যাঘাত ঘটেছে ? না মোটেই না। বরং তিনি পাকিস্তানের নান্দনিক ব্যাটারদের একজন। চোখের আরাম করা ব্যাটিং প্রদর্শন ছিলো তাঁর। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রায় বিশ বছর তিনি খেলেছেন টেস্ট ক্রিকেট।

ads

দীর্ঘ সময়ে তাঁর ব্যাটিং যে দর্শকদের ত্যাক্ত করেছিলো সে প্রমাণ নেই বোধকরি। মার্জিত এক ব্যাটিং স্টাইল হাওয়াতে ব্যাটের দারুণ পদচারণায় করা ড্রাইভ এবং পুল শটগুলো ছিল দেখার মতো। তাছাড়া ওপর থেকে ব্যাট নেমে এসে যখন তা বলে আঘাত করতো তখন সেখানে মাধুর্য্যতার দেখা মিলেছে বারংবার। পপিং ক্রিজে শান্ত-শিষ্ট থাকতেন তিনি। এ সব কিছুই তাঁকে একটা লম্বা সময় ধরে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপে আলাদ জায়গা করে দিয়েছে।

  • জহির আব্বাস

পাকিস্তানের কিংবদন্তিদের মধ্যে নিজের আলাদা এক পরিচয় করে নিয়েছেন জহির আব্বাস। তা তাঁর দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ভুরিভুরি রান দিয়ে। দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ হওয়া দর্শকের সংখ্যা হয়ত গুণে বের করা দুষ্কর। শুধু তাঁর ব্যাটিং দেখতেই সুন্দর তা নয়। তিনি ছিলেন দলের একজন ভরসার পাত্র। যার উপর অনায়াসে ভরসা করে পাঠিয়ে দেওয়া যায় বাইশ গজে।

জহির আব্বাসের ব্যাটিং দেখে একটা প্রশান্তির ঢেঁকুর তোলা যায়। পৃথিবীর যে প্রান্তে, যত প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই খেলা হোক না কেন জহির আব্বাস তাঁর স্বকীয়তা দিয়ে সর্বদাই মুগ্ধ করেছেন বিশ্বের নানা প্রান্তের ক্রিকেট ভক্ত-সমর্থকদের। দোদুল্যমান এক ব্যাটে দারুণ টাইমিং মিশ্রিত এক একটি শট দেখে চোয়ালখানা ঝুলে না পড়ে উপায় আছে বলুন।

  • মহসিন খান

সুদর্শন মহসিন খান মাত্র ৩১ বছর বয়সেই ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন। নিজের দৈহিক উচ্চতা আর সৌন্দর্য কাজে লাগিয়ে হতে চেয়েছিলেন বলিউডের নায়ক। তাঁর ব্যাটিং তাঁর মতই সুদর্শন। একেবারে ঠায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতেন তিনি পপিং ক্রিজে বলের জন্যে। তবে সময় মত বলের উপর চড়াও হতেও খুব বেশি দেরি হতো না তাঁর।
চোখ, পা আর হাতের দূর্দান্ত মেলবন্ধনে তাঁর ব্যাটিং ছিলো উপভোগ করার মতো।

তাছাড়া ব্যাকফুটে গিয়ে বলকে উপর থেকে চপেটাঘাত করাতেও তাঁর দক্ষতা ছিল। উচ্চতা আর সুনিপুণ দক্ষতা এই দুইয়ের মিশেলে তিনি যে কোন পিচে যে কোন বোলারের বিপক্ষে দূর্দান্ত সব শট খেলেছেন তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারে। তবে তাঁর ক্যারিয়ারটা আরেকটু সুদীর্ঘ হলে হয়ত সুদর্শন ব্যাটিংয়ের খোরাক মিটতো।

  • মোহাম্মদ ইউসুফ

একবিংশ শতাব্দীর প্রাক্কালে পাকিস্তান ক্রিকেট পেয়েছিল আরও একজন নান্দনিক ব্যাটার। তিনি মোহাম্মদ ইউসুফ। রানের ক্ষুধা তাঁর মধ্যে ছিলো তবে সেই ক্ষুধা তাঁর ব্যাটিং স্টাইলে খুব বেশি প্রভাব ফেলেনি কখনোই। মোহনীয় ব্যাটিং প্রদর্শনের বার্তাবাহক ছিলেন মোহাম্মদ ইউসুফ। পাকিস্তানের সেরা পাঁচ সংগ্রাহকদের মধ্যে তিনি একজন।

অথচ দৃঢ়তা, শান্ত স্বভাব নিয়ে তিনি ব্যাটিং করে গেছেন তাঁর পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই। বেশ উঁচু থেকে তাঁর ব্যাট নেমে আসতো। আর চোখ তাঁর মস্তিষ্কে যথাসময়ে বলের সব হিসেব-নিকেশ পৌঁছে দিতো। আর এরপর হাত ও পায়ের খানিক নৃত্যে কি দূর্দান্ত সব শট রচনা করতেন মোহাম্মদ ইউসুফ। ব্যাটিং দেখে চোখ জুঁড়ায়!

  • বাবর আজম 

বর্তমান সময়ে পাকিস্তান ক্রিকেট যাদের হাতে রয়েছে সুরক্ষিত তাঁদের মধ্যে অন্যতম নাম বাবর আজম। পাকিস্তান দলের অধিনায়ক। তবে সে পরিচয় ছাপিয়ে তাঁর বড় পরিচয় তিনি একজন দৃষ্টিনন্দন ব্যাটার। বর্তমান সময়ে পুরো পৃথিবীর নান্দনিক সব ব্যাটারদের মধ্যে কোন দ্বিধা ছাড়াই থাকবেন তিনি। বিরাট কোহলি, স্টিভ স্মিথ, কেন উইলিয়ামসন ও জো রুটদের সাথে এখন তাঁর নামটাও অনায়াসে জুড়ে দেওয়া যায়।

তবে হ্যাঁ এটা সত্য তিনি বাকি চারজনের মতো সেই দক্ষতা কিংবা সুনিপুণতা ধারণ করেননা। তবে তাঁর ব্যাটিং কখনই মনে হয়না দৃষ্টিকটু। বরং বেশ আনন্দের সাথে দেখা যায়। এ যেন চোখের জন্যে আরামদায়ক এক বিনোদন। তাছাড়া তাঁর আর কোহলির কভার ড্রাইভ এই মুহূর্তের জন্যে বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে দর্শনীয় এক বিষয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link