More

Social Media

Light
Dark

বিশৃঙ্খলের শৃঙ্খল

আমি দুর্বার,
আমি ভেঙে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহ মন্ত্রেই যেন উজ্জীবিত ভারতের ঋষাভ পান্ত। যেন শৃঙ্খল ভাঙ্গতেই এসেছেন তিনি। ভাঙ্গবেন ক্রিকেটের যতসব বাঁধা ধরা নিয়ম। নিজের মত করে বাঁচবেন বাইশ গজে। শোনাবেন দ্রোহের গান। যে গান প্রতিপক্ষের মাথা ব্যথার কারণ হবে, যে গান হবে প্রতিপক্ষের ত্রাস।

এই তো সেদিন শৃঙ্খল ভাঙ্গার প্রত্যয় নিয়ে সবুজ মাঠে নিজের হাতের তালুর মতো বানিয়ে নিলেন। ২৮ বলে তুলে নিলেন ভারতীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে টেস্টে দ্রুততম হাফসেঞ্চুরি। তবে এ আর নতুন কি! সেই শুরু থেকেই তো পান্ত এমন। তিনি বাইশ গজে হাত খুলে বেধরক পেটাবেন ১৭৬ গ্রামের সেই ছোট্ট গোলককে। এটাই তো পান্তের স্টাইল।
টেস্ট ক্রিকেটে প্রায়শই এক চিত্রের দেখা মেলে। দুই বলের মাঝের বিরতিতে ব্যাটার করছেন ছায়া অনুশীলন।

ads

নিজের পছন্দের শট কিংবা খানিক আগে খেলে ফেলা শটটা আরেকটু শাণিত করে নিলেন। পরের বার যেন আর ভুলচুক না হয়। তবে এই বিরতি পান্ত কাজে লাগান ভিন্নভাবে। তিনি এ সময় পার করেন মাঠটাকে একেবারে শিকারির চোখ দিয়ে দেখে কিংবা একজন অতন্দ্র প্রহরী হয়ে। সম্ভাব্য সকল বিপদ পড়ে ফেলার চেষ্টা।

তবে তিনি খোদ যে একজন বিপদ তা হয়ত তিনি আন্দাজ করেন না কখনোই। হ্যাঁ, তিনি প্রতিপক্ষের জন্য ঘোরতর বিপদ। নাছোড়বান্দাও বটে। পান্ত যখন ঠিক করে ফেলেন তিনি কোন শট খেলবেন তিনি ঠিক সে শটটাই খেলেন। নিজের মাথায় এঁকে নেন সেই শটের দৃশ্যপট। সম্ভাব্য সকল পরিস্থিতির একটা খসড়া করে নেন। অঘটন ঘটতে পারে, তবুও পান্ত নির্ভীক এক নাবিক।

তিনি জানেন তাঁর পেশিশক্তি ঠিক কতটা, তিনি জানেন সব ভুল হয়ে গেলেও তাঁর পেশি শক্তি তাঁকে নিরাশ করবে না। নিজের প্রতি চরম আত্মবিশ্বাসী পান্ত। ঠিক যেমনটা ছিলেন বীরেন্দ্র শেবাগ। শেবাগের মতোই ঋষাভ পান্ত নিজেকে জানেন, বোঝেন। সব হিসেব নিকেশ শেষ করেই যেন ঝুঁকি নেন। আর সেই ঝুঁকি কাল হয় প্রতিপক্ষের। মাঠ কে হাতের তালু বানিয়ে ফেলা পান্তের শটেও রয়েছে দারুণ সব বৈচিত্র।

মাঠের চারপাশে শট খেলার দক্ষতা রয়েছে এই ছোকড়ার। সুনিপুণ ড্রাইভ, দুর্দান্ত টাইমিংয়ে করা সুইভ, রিভার্স সুইপ সেই সাথে স্ট্যাম্পের ঠিক কাছ থেকে করা নির্ভুল কাট সেই সাথে স্লাশ এবং চপশট তো রয়েছেই। নির্ভীক পান্ত কখনও দ্বিধাবোধ করেন না। আগের বার আউট হবার দায় যে শটের সে শটকে তিনি আড়ালে কোথাও লুকিয়ে রাখেন না। তিনি যখন বাইশ গজে নেমে যেন খেলার পেন্ডুলামটা টেনে নিয়ে আসেন ভারতের দিকে।

যতক্ষণ সবুজের মাঝে সেই শক্ত মাটিতে তাঁর অবস্থান তখন যেন পেন্ডুলাম ভারতের দিকে থাকতে বাধ্য। আর প্রতিপক্ষের ম্যাচ জয়ে উদ্দীপনা ভেঙ্গেচুরে চুরমার করে দেন। প্রতিপক্ষের সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে সিদ্ধহস্ত পান্ত। এরপর থেকে ভারতের বিপক্ষে মাঠে খেলতে নামার আগে এখন থেকে পিচ কন্ডিশন, আবহাওয়া ছাড়াও আরেকটি ফ্যাক্টর নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা করে মাঠে নামতে হবে। আর সেটা ‘পান্ত ফ্যাক্টর’।

যত দিন যাচ্ছে পান্ত ক্রমশ আরো পরিপক্ক হচ্ছেন, সে সাথে নিজের স্বকীয়তায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বড় এক নামে পরিণত হচ্ছেন। পান্তকে নিয়ে এখন নিশ্চয়ই বাড়তি পরিকল্পনার ছক কষবেন আসন্ন সিরিজগুলোর প্রতিপক্ষরা। নতুবা ঐতিহাসিক গ্যাবা টেস্টের পরিণতি কিংবা এই সদ্যই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পান্তের রুদ্রমূর্তির মুখোমুখি হতে হবে তাঁদেরকে। শুধু যে বিধ্বংসী ব্যাটিং করেন বলেই পান্ত এখন বেশ আলোচনায় রয়েছেন বিষয়টা কিন্তু পুরোপুরি তেমন নয়।

ধ্বংসযজ্ঞের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। তাঁর শেষ চার ইনিংসে রান সংখ্যাটা দেখলে অন্তত তাই বোঝা যায়। অপরাজিত ১০০(১৩৯), ৯৬(৯৭), ৩৯(২৬) ও ৩১ বলে ৫০। টেস্টে তিনি ৭০ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করছেন নিয়মিত। আর তাঁর গড় এখন ৪০ এর কোটা ছাড়িয়েছেন দ্য ড্যাশিং ঋষাভ পান্ত। সহসাই পান্ত নামক এই তপ্ত সূর্য হেলে পড়বে না গোধূলি বেলায়। প্রত্যাশা সেইটুকুই হয়ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link