More

Social Media

Light
Dark

অদৃশ্য তবুও প্রকট

উপমহাদেশের পেসারদের অবস্থা টেস্ট ক্রিকেটে যেমন হয় আর কি। টেস্টের দ্বিতীয় দিন বিকাল থেকেই তো ফাটা চৌচির স্পিনিং উইকেটে। ফলে এখানে একজন পেসার নায়ক হবেনই বা কী করে? তাছাড়া যে দলে কুমার সাঙ্গাকার, তীলকারত্নে দিলশানরা ব্যাটিং করতেন, রঙ্গনা হেরাথের মত স্পিনাররে বল ঘুরাতেন সেখানে ছয় ফুট লম্বা, হ্যাঙলা পাতলা এক পেসারের দিকে কেই বা নজর দেয়।

তবে কারো নজর না পড়লেও যতদিন গিয়েছে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটে সুরাঙ্গা লাকমল গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এমন না যে এখন তিনি অনেক বড় তারকা বনে গিয়েছেন কিংবা প্রতিদিনই গতির ঝড় তুলছেন। তাঁকে নিয়ে এখনও সেভাবে আলোচনা হয় না। আসলে  তাঁর বোলিংয়ে অতটা রসদও নেই।

লাইন-লেন্থ মেনে বোলিং করা। কখনো কখনো একটু স্যুইং আদায় করে নেয়া এটুকুই। এর বাইরে তাঁর বোলিংয়ে কোন বিশেষত্ব নেই। তবে এতটুকু করে দেয়ার জন্যই লাকমল গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় এক যুগ ধরে শ্রীলঙ্কার হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন। তবে লংকান এই পেসারকে আপনি শেষ কবে একটা স্পেল করতে দেখেছেন মনে আছে?

ads

মনে না থাকাটা অবশ্য লজ্জার কিছু না। কেননা এই পেসারকে ব্যবহারই করা হয় খুব কম। কখনো বা স্পিনারদের বিশ্রাম দেয়ার জন্য তাঁকে দিয়ে ২-৩ ওভার করানো হয়। ফলে দারুণ একটা স্পেলের জন্য আপনি সহজে লাকমলকে মনে করতে পারবেন না। তবে নিজের কাজটুকু ঠিকভাবে করার জন্য লাকমল অবিস্মরণীয় চরিত্রই হয়ে উঠছেন।

অন্তত গত বছর তিনেকে নিজেকে আরো শাণিত করেছেন এই পেসার। ক্যারিয়ারের শুরুটা একেবারেই সাদামাটা ছিল। ক্যারিয়ারের প্রথম  তিন বছর টেস্ট খেলার পর তাঁর বোলিং গড় ছিল ৬৫.৭৫। তবে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে পাঁচ টেস্টে মোট ১৯ টি উইকেট নিলে তাঁর ভাগ্য কিছুটা বদলায়। তবে এরপরেও ৪২ টেস্ট খেলার পর ২০১৭ সালে তাঁর বোলিং গড় ছিল ৪৪.৯৪। তবে ঘরের মাঠে তাঁর গড় তখনো ৬০-এর বেশি। তবে ২০১৮ সালের শুরু থেকেও তাঁর পারফরম্যান্স যেন পুরো বদলে যায়।

গত তিন বছরে খেলা ২২ টেস্টে তাঁর বোলিং গড় মাত্র ২৪.০৭। এই সময়ে শ্রীলঙ্কার হয়ে তিনি খেলেছেন অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও। যেখানে ক্যারিয়ারের প্রথম ৮ বছর তাঁর বোলিং গড় ছিল প্রায় ৪৫ এখন তা কমে হয়েছে ৩৬.৫৩। গত চার বছরে তাঁর বোলিং গড় যথাক্রমে ২৩,১৫,২৪ ও ২৬। তাই তাঁর বোলিং নিয়ে কতটা কাজ করেছেন সেটা তাঁর পরিসংখ্যানই বলছে।

এছাড়া বিদেশের মাটিতে বরাবরই অনবদ্য এই পেসার। পোর্ট এলিজাবেথে ৬৩ রানে ৫ উইকেট, ক্রাইস্টচার্চে ৫৪ রানে ৫ উইকেটের সেই স্পেলগুলোরও মালিক সুরাঙ্গা লাকমল। তবে সেই লাকমলকে খুব কমই দেখা যায়। কেননা উপমহাদেশের পিচ লাকমলকে তাঁর সেরা রূপ দেখাতে দেয় না।

তবুও গত কয়েক বছরে লাকমল আরো বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছেন। আর এই স্পষ্টটার মধ্যেও একটা অদৃশ্য অন্ধকার ছিল। সেই অদৃশ্যতা মাথা পেতে নিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়ে ফেললেন লাকমল। খেলে ফেললেন ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট। বিদায় বেলায় এগিয়ে এসে শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলেন খোদ রাহুল দ্রাবিড় আর বিরাট কোহলি। এই সৌভাগ্যই বা ক’জনার হয়।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link