More

Social Media

Light
Dark

দ্য কিং বেনজেমা

সতেরো মিনিট, ঢাকার রাস্তায় হয়ত চোখের পলকে চলে যায়। বিজয় স্মরণির জ্যামে বসে এক ঘুম দিলে তো আর হদিস পাওয়ার উপায় নেই, কতক্ষণ গেল চলে। তবে এই সতেরো মিনিটে ইতিহাস রচিত হয়। এই সতেরো মিনিট মহাকাব্যের খোড়াক জোটানোর জন্যে যথেষ্ট। স্পেনে তো হয়েই গেলো সতেরো মিনিটে এক মহাকাব্য। সেই কাব্যের রচয়িতা ফ্রেঞ্চ তারকা করিম বেনজেমা।

যখন সব শেষ ভেবেই নিয়েছে সকলে, ঠিক তখন কোন এক অপার্থিব শক্তি এসে ভর করলো বেনজেমার কাঁধে। সতেরো মিনিটের মাথায় তিনবার বল পাঠালেন প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি) জালে। কি ক্ষিপ্রতা! কি বুদ্ধিদীপ্ততা! একটিমাত্র শব্দে বেনজেমাকে বেঁধে ফেলা স্রেফ অসম্ভব। পিএসজির স্বপ্নের ধানে মই দিয়ে দিলেন বেনজেমা। অথচ তিনি এতকাল ছিলেন পর্দার আড়ালে। ছিলেন রিয়াল নামক উপন্যাসের একজন পার্শ্বচরিত্র।

বেনজেমা আর রিয়ালের সম্পর্কের বয়স পা রেখেছে প্রায় ১৪ বছরে। দীর্ঘ সময়। অগণিত রাত, তিনি নেমেছেন রিয়ালের সেই সাদা জার্সি গায়ে। নিজের সম্পূর্ণটা নিংড়ে দিতে চেয়েছিলেন। দিয়েছেনও বহুবার। তবুও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো নামক এক অতিমানব তাঁকে আড়াল করেছে বারংবার। তবে সেই অতিমানব ফিরেছেন তাঁর নিজ গৃহে। চলে গেছেন শৈশবের ক্লাবে। এখন তবে নতুন নায়ক খোঁজার পালা। আর বেনজেমা ছাড়া নায়ক হবেই বা কে?

ads

২০১৮ সালে রিয়াল ছেড়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। নতুন ঘরের সন্ধানে গিয়েছিলেন ইতালিতে। তখন সবাই হয়ত ভেবেছিলো এই বুঝি গেলো রিয়াল গভীর কোন আঁধারে। তবে এমনটা হতে দেননি এই করিম বেনজেমা। অথচ দলের প্রধান এক খেলোয়াড় চলে গেলে দল যে কি পরিমাণ খাবি খায় তার উদাহরণ তো খোদ স্পেন ফুটবলেই রয়েছে। বিশ্বসেরা খেলয়াড় লিওনেল মেসি বার্সেলোনা ছেড়ে যাওয়ার পর কেমন মুখ থুবরে পড়লো কাতালানরা।

তা কি আর দেখেনি বিশ্ব! মেসি নেই, বার্সেলোনাও নেই। তবে রোনালদো ছাড়া রিয়াল অকেজো সেটা তো বলার উপায়ই নেই মশাই। ২০১৮/১৯ মৌসুমে বেনজেমা একাই করেছিলেন ৩০ গোল। করিয়েছিলেন ১১টি। পরের মৌসুমেও দলকে রেখেছিলেন সঠিক পথে। জালের দেখাও পেয়েছিলেন ঠিকঠাক। গোলের সংখ্যা তিনটে কমলেও অ্যাসিস্ট ছিল ধ্রুব। এবারের আগের মৌসুমে আবার সেই ৩০ বার তাঁর পায়ের ছোঁয়ায় বল জালের ঠিকানা খুঁজে নিয়েছে।

নয়বার সতীর্থদের বলেছেন ‘এই নে গোল কর’। আর এবার নিজেকে বানিয়েছেন প্রাণ ভোমরা। ৩০ খানা গোল আর ১২ খানা অ্যাসিস্ট। সবুর করুণ, মৌসুম তো এখনও বাকি। পর্দার আড়াল থেকে বেড়িয়ে আসা বেনজেমা তো এখনও নিজেকে আরো খানিকটা মেলে ধরবেন নিশ্চয়ই। এই পরিসংখ্যান দিয়েই কি কেবল ত্রাণকর্তা বেনজেমাকে বর্ণনা করা যায়? শুধু এতটুকুতেই কি শেষ করে দেওয়া যায় আলোচনা?

সবচেয়ে বেশি বয়সে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে হ্যাট্রিক করা খেলোয়াড় এখন বেনজেমা। বয়সটা ৩৪ বছর ৮০ দিন। এই বয়সেও তিনি সমান তালে ছুটে চলেন ফুটবল মাঠে। গেগন প্রেসিং হয়ত তাঁর দল কখনোই করে না, তবুও প্রতিপক্ষের গোলরক্ষককে চাপ প্রয়োগে তাঁর বিন্দুমাত্র ক্লান্তি নেই। আর বুদ্ধিদীপ্ততা, সে নিয়ে আর নতুন করে কি বলার আছে। ঠিক চৌকস এক স্ট্রাইকার। প্রতিপক্ষের ভুল কিংবা সতীর্থের দারুণ বল সব যেন আগে ভাগেই পড়ে ফেলতে পারেন করিম বেনজেমা।

আর পায়ের কারিকুরিও কম জানেন না বেনজেমা। কিন্তু হয়ত তিনি তাঁর জীবনের সেই বছর গুলোর জন্যে আফসোস করেন মাঝেমধ্যেই। নিজের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে প্রাইম সময়ে তিনি একজন অতিমানবের ছায়ায় কাটিয়েছেন। তিনি হতে পারেননি একমাত্র তারকা। সেই আক্ষেপটা ঘুচাতেই হয়ত তিনি কাব্য লিখছেন।

বিশ্বের সেরা তিন খেলোয়াড়দের দাঁড় করিয়ে রেখে তিনি লিখছেন ‘পিএসজি বধ কাব্য’। লিওনেল মেসি, নেইমার, কিলিয়ান এমবাপ্পেরা একরাশ হতাশা নিয়ে সাক্ষী হন সেই মহাকাব্যের। এই বেনজেমা রিয়ালে স্তম্ভ, এই বেনজেমা রিয়ালের ভরসা। রয়্যাল ক্লাবের বর্তমান রাজা। দ্য কিং করিম বেনজেমা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link