More

Social Media

Light
Dark

দ্য রয়্যাল কামব্যাক

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ যদি হয় রূপকথার বই, তবে নি:সন্দেহে ফিনিক্স পাখির ভূমিকায় থাকে রিয়াল মাদ্রিদ। ফিনিক্স পাখি যেমন বারবার ধ্বংসস্তুপ থেকে ফিরে আসে,ডানা মেলে মুক্ত আকাশে; তেমন করে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বারবারই পিছিয়ে থেকেও ঘুরে দাঁড়ায় রিয়াল মাদ্রিদ।

গত এক দশক জুড়ে কখনো রোনালদোর ডানায়,কখনো আবার বেনজামা কিংবা অন্য কারো ডানায় মুক্ত আকাশে উড়াল দিয়েছে রিয়াল রয়্যাল মাদ্রিদ। ফিরে এসেছে প্রতিপক্ষকে মুছড়ে দিয়ে। বায়ার্ন মিউনিখ, মিলান অথবা বার্সেলোনা; রিয়ালের ইউরোপীয় প্রভাব খর্ব করতে অনেকে এসেছিলো তবে গল্প শেষে ঠিকই বিজয়ীর মতই নীল আকাশে ভেসেছে লস ব্ল্যাঙ্কোস’রা।

পিএসজি এর বিপক্ষে ম্যাচেই প্রথম লেগে শেষ মূহুর্তের গোলে পরাজয়, এরপর ঘরের মাঠে দ্বিতীয় লেগ। ম্যাচের স্কোরলাইন নয়, রিয়াল মাদ্রিদের খেলার ধরনই হতাশ করেছিলো ফুটবল প্রেমীদের। আল্ট্রা ডিফেন্সিভ মুডে খেলা মাদ্রিদকে পছন্দ হয়নি কারোই। তবু ঘরের মাঠে, পরিচিত সেই সান্তিয়াগো বার্নাব্যু-তে দ্বিতীয় লেগ। আশা ভরসায় একটু একটু করে সম্ভবনার অংক কষেছিলো আনাচে-কানাচে থাকা সব রিয়াল ভক্তগন।

ads

কিন্তু, আশা ভরাসায় ছাই ঠেলে দিয়ে ম্যাচের ৪০ মিনিটের মাথায় এমবাপ্পে’র গোল। নেইমারের দুর্দান্ত এক ডিফেন্স চেরা পাসে রিয়াল ভক্তদের হৃদয়ে ক্ষত সৃষ্টি করেছিলো কিলিয়ান। দুই লেগ মিলিয়ে তখন ২-০ তে ফ্রন্টফুটে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন। কিন্তু উয়েফার এই টুর্নামেন্ট তো লস ব্ল্যাঙ্কোসরা হাতের তালুর মতই চেনে। তাই হয়তো এরপরের গল্পটা শুধুই তাদের। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ যে রিয়ালের আজন্ম লালিত ঘরের ছেলে, বারংবার তা প্রমান করতে ব্যস্ত অল হোয়াইট টিম

পিএসজি’র ইতালিয়ান গোলরক্ষকে ডোনারুম্মার ভুলে শুরু রিয়ালের গল্প লেখা। বেনজেমা দ্রুতগতির প্রেসিংয়ে খেই হারিয়ে ডোনারুম্মা বল তুলে দিয়েছিলেন ভিনি জুনিয়রের পায়ে। এই ব্রাজিলিয়ানের আস্তে করে বাড়ানো বলে পিএসজি’র জালে বল পাঠিয়ে দেন করিম বেনজেমা। এর মিনিট পনের পরেই ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার লুকা মদ্রিচ বল রিয়ালের অর্ধে বল কেড়ে নিয়েই এগিয়ে দিলেন ভিনিসিয়াসের দিকে। এরপর ভিনি থেকে আবার মদ্রিচ, মদ্রিচ থেকে করিম বেনজেমা এবং গোল।

দুই লেগ মিলিয়ে সমতায় রিয়াল,বার্নাব্যু’য়ের সমর্থক কিংবা সারা বিশ্বের রিয়াল ভক্ত সবাই যখন ব্যস্ত দ্বিতীয় গোল উদযাপনে তখন কিছু বুঝে উঠার আগেই আবারো বল পিএসজি’র জাল খুঁজে নিয়েছিলো। একটু খুঁজতেই পাওয়া গেলো গোল দাতা, চিরচেনা সেই কেবিনাইন!

এবারেও ছিল পিএসজি’র ডিফেন্সের অবদান। ক্যাপ্টেন মার্কুইনহোস করেছিলেন ক্ষমার অযোগ্য ভুল। ক্লিয়ার করতে গিয়ে উল্টো বল বাড়িয়ে দিলেন প্রতিপক্ষের অধিনায়কের পায়ে। স্ন্যাপ শটে আবারো ডোনারুম্মাকে ফাঁকি দিয়ে বলকে পাঠিয়ে দিলেন সোজা জালে। তার এমন শটে বল জালে জড়িয়েছে হয়তো ক্যামেরার সামন

তবে আঘাতটা গিয়েছে ক্যামেরার আড়ালে থাকা পিএসজি’র ভক্তদের হৃদয়ে।

গোল কিভাবে এসেছে সেই ভাবনা পাশে সরিয়ে রেখে সাদা জার্সি ধারি রিয়াল মাদ্রিদ এর খেলোয়াড় কিংবা মাঠের বাইরে অগুনিত সমর্থক তখন মেতেছিলো বাঁধন হারা উল্লাসে। ফ্রান্স জাতীয় দলের স্ট্রাইকার বেনজেমা’র পনেরো মিনিটের ঝড়ে রীতিমতো লন্ডভন্ড ফ্রান্সের ক্লাবটি। ৬১,৭৬ এবং ৭৮ মিনিটের তিন গোল, রিয়াল ভক্তরা হয়তো আজীবনই মনে রাখবে। রিয়ালের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পগুচ্ছতে যোগ হলো নতুন গল্প।

ম্যাচের নায়ক যদি হন করিম বেনজেমা, তবে পার্শ্বচরিত্রে দারুন এক রাত কাটিয়েছেন ব্রাজিলিয়াল সাম্বা বয় ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। কখনো মনোমুগ্ধকর ড্রিবলিং কখনো বা নাভিশ্বাস তুলে দেয়া রানিং; পুরো নব্বই মিনিট যেন বার্নাব্যুয়ের সবুজ ঘাসে চিত্র এঁকে গিয়েছেন। সাথে ‘এভারগ্রিন’ লুকা মদ্রিচ আরো একবার রিয়ালকে তার প্রতি কৃতজ্ঞ করে তুলেছেন।

অন্যদিকের গল্পটা আঁধারের। পিএসজি ভক্তরা হয়তো এই রাত ভুলবে না অনেকদিন, দুই লেগ মিলিয়ে ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরও এমন পরাজয়। যেন ২০১৭ সালের ‘লা রেমোনটাডা’ স্মৃতি ফিরে এসেছে ২০২২ সালে। শুধু পরাজয় নয়, নিজ দলের এমন শিশুসুলভ ভুলও তাদের হৃদয়ে রক্ত ঝরাবে। ভক্তদের মনে পুনরায় জায়গা পাবেন কিনা ডোনারুম্মা সেটিও ভাবনার বিষয়।

‘নাইন্টি মিনিটস ইন সান্তিয়াগো বার্নাব্যু ইজ টু লঙ’ – এমন ফুটবলীয় প্রবাদের চাক্ষুষ প্রদর্শনী হয়ে গেলো আবারো। সূদুর ফ্রান্স থেকে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ ভ্রমণে এসে প্যারিসিয়ানরা যেন এমন প্রবাদ প্রমানে সাহায্যই করতেই এসেছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link