More

Social Media

Light
Dark

জাদু ও জীবন: ম্যারাডোনা ও ওয়ার্ন

দু’জনই খেলোয়াড়, জাদুকর, তারকা – নিজেদের দিনে হতেন টক অব দ্য ওয়ার্ল্ড। দু’জনের ছিল খেলার বলটার ওপর অবিশ্বাস্য নিয়ন্ত্রণ। দু’জনই যার যার খেলার বরপূত্র। তারা দু জন জানতেন, জাদুটা কীভাবে দেখাতে হয়। কিন্তু, শুধু কী এই খেলা?

মদ কিংবা মাদক, উদ্যাম জীবন যাপন, নারী কেলেঙ্কারি, জীবনটাকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ এবং সর্বশেষ মৃত্যুতে তাঁরা একাকার হয়ে গেলেন। এই অবিশ্বাস্য এক হয়ে ওঠা তাই ক্রিকেট আয়ারল্যান্ডকে বলতে বাধ্য করে – মরণেও তিনি ক্রিকেটের ম্যারাডোনা!

হ্যাঁ, ক্রিকেটের ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনাই ছিলেন শেন কিথ ওয়ার্ন। কী অবিশ্বাস্য মেলবন্ধন!

ads

লড়াইটাও দেখেন। ম্যারাডোনা সর্বকালের সেরা কি না, এ নিয়ে বিতর্ক করা যেতে পারে। পেলে, ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার থেকে শুরু করে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বা লিওনেল মেসি; লড়াইটা কম নয়। কিন্তু এসব লড়াই ছাপিয়ে ম্যারাডোনাকেই সর্বকালের সেরা বলে মেনে নিয়েছিলেন ভক্তরা। ফিফার জরিপে তেমনই ভোট দিয়েছিলেন তাঁরা।

ওয়ার্নও কী সর্বকালের সেরা?

তার চেয়ে তো মুত্তিয়া মুরালিধরনের উইকেট বেশি। তার চেয়ে ওয়াসিম আকরামের কৃতিত্ব কম নয়। ব্যাটিংয়ে তো স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, ব্রায়ান লারা বা শচীন টেন্ডুলকার আছেন। কিন্তু যে একটা বার ওয়ার্নির সেই বাঁক নেওয়া বল দেখেছে, সে কী করে দুনিয়ায় আর কারো শ্রেষ্ঠত্ব মানবে? মন-মুগ্ধতা দিয়ে ওয়ার্ন যেন হয়ে উঠতে চান সর্বকালের সেরা।

সে আপনি সেরা মানুন বা না মানুন, এটা মানতে হবে যে ক্রিকেট বল দিয়ে শেন ওয়ার্ন যা করেছেন, ফুটবল দিয়ে তা করতে পেরেছেন কেবল ম্যারাডোনা। দু জনই বশ করে রেখেছিলেন এই বল জিনিসটাকে। বল তাদের কথা শুনতো।

ম্যারাডোনা বলকে পায়ে পায়ে ঘোরাতেন বাধ্য প্রাণীটার মত। তার কথা শুনে এগিয়ে যেত। আর ওয়ার্ন বলটাকে পোষা বেড়ালটার মত ছেড়ে দিতেন উইকেটে। তার কথা মতই বাঁক নিত, বাতাসে ভাসতো কিংবা ঘুরতো। বল ব্যাপারটাকে এতোটা পোষ মানাতে এই দুই জন ছাড়া আর কেউ পারেননি।

তবে ওয়ার্ন তো কেবল খেলা দিয়ে ম্যারাডোনা হয়ে ওঠেননি।

দু জনের প্রধান  জায়গাটা ছিল জীবন উপভোগ। অনেক নিষেধাজ্ঞা, অনেক শাস্তি এবং অনেক অপ্রাপ্তিও তাদের এই জীবনকে উপভোগ করা থেকে সরাতে পারেনি।

জীবন আর কয় দিনের? খাও, দাও, ফুর্তি করো, বুঁদ হয়ে থাকো উৎসবে। এই যেন ছিল তাঁদের জীবনের স্লোগান। তাঁরা জীবনের সর্বোত্তম উপভোগকারী।

ওয়ার্ন কী কম ভুগেছেন? জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছেন, নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন, স্পন্সর চলে গেছে, অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কত্বের সম্ভাবনা চিরতরে শেষ হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই ওই উদ্যাম জীবন থেকে সরে আসেননি। সেই মদ, নারী আর বেপরোয়া জীবন-যাপন। যেন একটু একটু করে জীবনের সবটুকু স্বাদ নিয়ে ফেলার চেষ্টা করা। আর এই করতে গিয়ে সর্বশান্ত হওয়া।

বয়সও তাই পেলেন না।

ম্যারাডোনা ৬০ বছরে চলে গেলেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। আর ওয়ার্নি তো ৫২ বছরেই। এই মৃত্যু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, জীবনটাকে আরেকটু সমীহ করা মনে হয় দরকার। অবশ্য, রাজেশ খান্নার মত এখানেও চাইলে বলা যায়, ‘বাবুমশাই . . . জিন্দেগি লাম্বি নেহি, বারি হোনা চাহিয়ে!’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link