More

Social Media

[ivory-search id="135666" title="Post Search"]
Light
Dark

ক্রিকেটে বাঁচি, ক্রিকেটে মরি

জেমস অ্যান্ডারসন – তাঁকে কে না চিনে! তাঁর দখলে রয়েছে ৬০০ এর বেশি টেস্ট উইকেট। সেই অ্যান্ডারসনের প্রথম টেস্ট উইকেট কে ছিলেন তা কি আপনি জানেন? সমস্যা নেই বলছি। সেই খেলোয়াড়টি ছিলেন জিম্বাবুয়ের ওপেনিং ব্যাটার মার্ক ভারমিউলেন। নিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচের তৃতীয় ওভারে ভারমিউলেনের উইকেট তুলে নিয়ে পরবর্তীতে হয়েছেন ক্রিকেটের এক কিংবদন্তি।

সেই ভারমিউলেনের খবর হয়ত আর রাখা হয়নি কারো। তবে তিনি নিজেকে খবরের উপাদান বানিয়েছেন বহুবার। জিম্বাবুয়ের হারারেতে ২ মার্চ ১৯৭৯ সালে জন্মেছিলেন ভারমিউলেন। জীবনে ক্রিকেটকে খুব আপন করে নিতে চেয়েছিলেন তিনি। একেবারে বাহুডোরে আগলে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই ক্রিকেটই তাঁকে দিয়েছিলো এক ভয়ানক আঘাত।

ভারতের বিপক্ষে খেলা এক ওয়ানডে ম্যাচে তিনি মাথায় আঘাত পান। ইরফান পাঠানের করা এক বল সজোরে আঘাত করে তাঁর মাথায়। সেটা ছিলো তাঁর ক্যারিয়ারের তৃতীয় এবং সবচেয়ে ভয়ানক চোট। প্রায় ছয় ঘন্টা যাবৎ তিনি ছিলেন অস্ত্রপচার কক্ষে।

ads

সেই স্মৃতি স্মরণ করে ভারমিউলেন বলেন, ‘আমাকে ছয় ঘন্টার এক লম্বা অপারেশনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিলো। ডাক্তাররা বলেছিলেন মস্তিষ্ক ও মাথার খুলির মাঝে তফাৎ মাত্র ৫.৭ মিলিমিটার। আর আমার আঘাত ছিলো তিন চার মিলিমিটার গভীর।’

‘আমি সে দফায় অল্পের জন্যে মৃত্যু কিংবা ভয়ানক কোন শারীরিক সমস্যা থেকে বেঁচে ফিরি।’ তবে সেই আঘাত যে বিন্দুমাত্র তাঁর ক্ষতি করেনি তা কিন্তু নয়। তিনি পরবর্তী সময় মানসিক সমস্যায় ভোগেন। আর অদ্ভুত সব কাণ্ডকারখানা করে বসেন। তাঁকে ডাক্তার বলেছিলেন আর ক্রিকেটে ফিরতে না। তবুও ২০০৬ সালে তিনি আবার ফিরেছিলেন ক্রিকেটে। উপায় তো নেই তিনি তো বড্ড বেশি ভালবেসে ফেলেছিলে ভদ্রলোকের এই খেলাটিকে।

তবে ক্রিকেট জীবনটা আর স্বাচ্ছন্দ্যে কখনোই কাটাতে পারেননি ভারমিউলেন। ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা চলাকালীন সময় তিনি মাঠে থাকা দর্শকদের সাথে তর্কে জড়িয়ে যান এবং বল ছুড়ে মারেন তাঁদের উদ্দেশ্যে। যার ফলশ্রুতিতে তাঁর উপর দশ বছরের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলো ইংল্যান্ড ক্রিকেট। যদিও আপিলের পর তা কমে তিন বছরের সময়সীমা নির্ধারিত হয়।

এতেই থামেনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রায় সাড়ে ছয় হাজারের বেশি রান করা ভারমিউলেনের উদ্ভট সব কাণ্ডকারখানা। ইংল্যান্ড থেকে নিষেধাজ্ঞা মাথায় নিয়ে তিনি ফেরেন জিম্বাবুয়েতে। সে সময় জিম্বাবুয়ে হারিয়েছিলো তাঁদের টেস্ট স্ট্যাটাস। নিজের অনুভূতি আর আয়ত্ত্বে না রাখতে পেরে ভারমিউলেন ছুটে যান তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের সরকারি বাসভবনে।

সেখানে গিয়ে গোলমাল বাঁধানোয় তাঁকে যেতে হয়ে কঠোর জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে। এতে হয়ত ক্ষান্ত হতে পারতেন ভারমিউলেন। তবে না, তিনি ক্রিকেটের চিন্তায় মশগুল হয়ে পড়লেন। ভাবতে লাগলেন ক্রিকেট না থাকলে আসলে তিনি করবেন। সেই ভাবনা তাঁর জন্মে বিষন্নতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি এমনকি আত্মহননের পথ বেছে নিতে চেয়েছিলেন। তবে তিনি সে ভাবনা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পেরেছিলেন।

কিন্তু নিজেকে ধ্বংসের পথে ধাবিত করা চেষ্টাটা তিনি ছাড়েননি। তিনি নয় বরং তাঁর সেই মাথার চোট। তিনি হারায়ে স্পোর্টস ক্লাবের প্যাভিলনে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের আঁতুড়ঘর সেটা। এরপর তিনি আগুন লাগান জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। যার জন্যে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং তিনি তিনদিন কারাবাসও করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৮ মাস ছিলেন জামিনে।

মানসিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয় তাঁর উপর আসা সব ধরণের অভিযোগ থেকে। তাঁর প্রমাণও মেলে। তাঁর মস্তিষ্কের ডান হেমিস্ফিয়ারে আঘাতের চিহ্ন মিলেছিলো। তবে সব বাঁধা পেরিয়ে ২০০৯ সালে তিনি ডাক পেয়েছিলেন ওয়ানডে দলে। সে বছরই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শেষ হওয়ার আগে তিনি খেলেছেন ৪৩টি ম্যাচ। করেছেন ছয়টি হাফ সেঞ্চুরি।

মার্ক ভারমিউলেনের ট্রাজিক জীবনে আশার আলো হয়ে এলো ২০১৪ সাল। তাঁকে ডাকা হলো টেস্ট দলে লম্বা এক বিরতির পরে। এক ম্যাচ খেলেই তাঁর নয় ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে সমাপ্তি হয়। এদফা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্ণবাদী মন্তব্য করে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হন ভারমিউলেন।

ক্রিকেটকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাওয়া মার্ক ভারমিউলেন এখন তাঁর দিন পার করছেন ক্রিকেট প্রশিক্ষক হিসেবে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিদ্যালয়ে তিনি ছোটদের ক্রিকেট দীক্ষা দিয়ে বেঁচে রয়েছেন ক্রিকেটের মাঝেই। তবে গল্পটা ভিন্নও হতে পারতো। তিনি জেমস অ্যান্ডারসনের মতো ক্রিকেটের এক কিংবদন্তি হয়েও বিদায় জানাতে পারতেন ক্রিকেটকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link