More

Social Media

Light
Dark

খোলস ছেড়ে নতুন ফখর

ফখর জামানকে বেশ নিন্দা সইতে হয়েছে তাঁর ধীরস্থির ব্যাটিং অ্যাপ্রোচের জন্যে। তিনি কিছুটা রয়ে সয়ে, উইকেট বুঝে থিতু হয়ে খেলতে বেশ সাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ফখর জামানকে সেই সুযোগ কখনই দিতো না। কেননা ক্রিকেটের এই ক্ষুদ্রতম সংস্করণে সময় যে বেশ মূল্যবান। প্রতিটা বল অপচয়ের খেসারত যে দিতে হয় দলকে। কিন্তু পাকিস্তান সুপার লিগে করাচি কিংসের বিপক্ষে এক অন্য ফখর যেন আবির্ভূত হয়েছিলেন ক্রিকেট ময়দানে। মারকাটারি ব্যাটিং করে দলকে নিয়ে গিয়েছেন জয়ের বন্দরে।

পাকিস্তান সুপার লিগের ম্যাচ। মুখোমুখি স্বাগতিক করাচি কিংস ও লাহোর কালান্দার্স। সেই ম্যাচে টস জিতে করাচিকে ব্যাটিং এর নিমন্ত্রণ দেয় লাহোর অধিনায়ক শাহিন শাহ আফ্রিদি। নিজের বোলিং লাইন আপের উপর পূর্ণ আস্থা থেকেই হয়ত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আফ্রিদি। তাছাড়া একটা রেকর্ডও রয়েছে করাচির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে। গত বছর থেকেই দ্বিতীয় ইনিংস ব্যাট করাদের জয়ের পাল্লাটা ভারী। সেই দিক বিবেচনা করেও হয়ত আগে বোলিং এর সিদ্ধান্ত এসেছিলো লাহোর টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে।

করাচি কিংসের শুরুটাও বেশ ভালই হয়েছিলো। শারজিল খান ও অধিনায়ক বাবর আজম নিজেদের মধ্যে একটা বড় পার্টনারশীপ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছিলেন একেবারে শুরু থেকেই। তাঁরা সফলও হন। একপ্রান্তে শারজিল তাঁর ব্যাট চালাতে থাকেন আপন ছন্দের, মারকুটে ভঙ্গিতে। অন্যদিকে বাবর আজম অপরপ্রান্ত ধরে খেলার চেষ্টা করেন। অভিজ্ঞ মোহাম্মদ হাফিজের বলে শারজিল বোল্ড আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত দু’জন করাচির স্কোরবোর্ডে রান তুলেছেন ৮৪, ১০ ওভারে। ভাল একটা শুরু এনে দিয়েছিলেন করাচির ওপেনিং ব্যাটাররা।

ads

শাহিন শাহ আফ্রিদর মাথায় তখন হয়ত করাচি ২০০ রান ছাড়িয়ে যেতে পারে এমন শঙ্কা এসে ভর করেছিলো। তবে তাঁর বোলাররা তাঁকে নিরাস করেনি। তাঁরা নিয়মিত বিরতীতে উইকেট নিয়ে চাপে ফেলে দেয় করাচির ব্যাটারদের। ভাল একটা শুরু পাওয়ার পরও করাচির লোয়ার মিডেল অর্ডারের ব্যর্থতায় খুব বেশি দূর এগোতে পারেনি বাবর আজমের দল। সাত উইকেট হারিয়ে ১৭০ রান সংগ্রহ করতে পারে করাচি কিংস।

জবাবে ব্যাট করতে নামা লাহোর কালান্দার্সের ওপেনিং ব্যাটার আবদুল্লাহ শফিককে দ্রুতই প্যাভিলনের পথ দেখান মোহাম্মদ নবি। কিন্তু ফখর জামান দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়েই হয়ত নেমেছিলেন করাচির বিপক্ষে ম্যাচে। তিনি নিজেকে প্রমাণের একটা সুন্দর মঞ্চও পেয়ে গিয়েছিলেন আজ। নিজের খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে এলেন ফখর। লাহোর কালান্দার্সের বোলারদের রীতিমত এক হাত দেখে নিয়েছেন ফখর।

মাত্র ৬০ বল খরচায় তিনি রান করেছেন ১০২। একাই দলকে টেনে নিয়ে গেছেন জয়ের দিকে। এমন এক স্বস্তিজনক স্থানে নিয়ে গেছেন দলকে যে সেখান থেকে হেরে যাওয়াটা হয়ত হতো বেদনাদায়ক। তবে শেষের সাত ওভার বাকি থাকতেও লাহোরের প্রয়োজন ছিলো ৭৫ রান। সেখান থেকে ম্যাচ জেতাতে ফখরকে সহয়তা করেছেন সামিত প্যাটেল। তিনি ১৮ বলে ২৬ রানের এক ছোট্ট ক্যামিও ইনিংস খেলেন।

তবে লাহোরের জয়ে সিংহভাগ অবদান রয়েছে ফখর জামানে। শেষের দিকে দশের বেশি রানরেট তাড়া করেছেন একেবারে টি-টোয়েন্টি মেজাজে। স্থির ফখর যেন এদিন এক অতীত। মোট ১২টি চার ও চারটি ছক্কা মেরেছেন ফখর। ১৭৬.৬৬ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করে ফখর জামান দলকে এনে দিয়েছেন এবারের পিএসএলের প্রথম জয়। অন্যদিকে এই হারে টানা তিন ম্যাচ জয় বঞ্চিত হয়ে রইলো বাবর আজমের করাচি কিংস। লাহোরের প্রথম ম্যাচেও ফখর জামান একটি দূর্দান্ত অর্ধশতক করেছিলেন। এবারের পিএসএলকে ফখর জামান হয়ত নিজেকে একজন টি-টোয়েন্টি ব্যাটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার মঞ্চ ভেবে নিয়েছেন। দেখা যাক কতদূর তিনি যেতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link