More

Social Media

Light
Dark

বাঙালি বাজপাখির ব্যাট

‘ওহ! হ্যাজ হি টেকেন ইট, সাহা? ইটস আ অ্যাবসোলিউটলি ব্রিলিয়ান্ট ক্যাচ ফ্রম ঋদ্ধিমান সাহা!’

উমেশ যাদব এর জোরে বলটা লেগ সাইডে গ্লান্স করতে গিয়ে কিপার এর ব্লাইন্ড স্পটের মধ্যে একটা আক্ষরিক অর্থের হাফ চান্স তৈরী করে দিয়েছিলেন থেউনিস দি ব্রুইন। সরাসরি সুযোগের সদ্ব্যবহার। বাঁ-দিকে ঝাঁপিয়ে দুরন্তভাবে তালুবন্দি শিলিগুড়ির পাপালির।

আগেও ধরেছেন অনেক। ২০১৭ অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ম্যাথিউ ওয়েড, ২০১৪ আইপিএলে মনদীপ সিং বা অন্যান্য অনেক ব্যাটসম্যানকে ড্রেসিংরুমে ফেরানো ক্যাচ তার কিপিং দক্ষতার প্রমান দেয়। কিন্তু একজন ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকের কাছে ঋদ্ধি কতটা? সবার মুখে মুখে ঘোরা উত্তর হলো ‘উইকেটরক্ষক? নি:সন্দেহে দারুণ। কিন্তু ব্যাটসম্যান? চলেনা মশাই।’

ads

ধারণা ভাঙতে গেলে কখনো ফিরতে হবে ৬ বছর আগের আইপিএল ম্যাচে বা ৩ বছর আগের অস্ট্রেলিয়া টেস্টে। যেতে পারেন গত মৌসুমেও রঞ্জি ফাইনালেও।

  • ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া, তৃতীয় টেস্ট, ২০১৭

অস্ট্রেলিয়ার ৪৫১ রান তাড়া করতে নেমে ভালো শুরু করেও দ্রুত করুন নায়ার এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন এর উইকেট ভারতকে ৩২৮-৬ স্কোরে ইনিংসে পিছিয়ে যাওয়ার ভ্রূকুটি দেখাচ্ছে সদ্য। ক্রিজে সেট হয়ে থাকা চেতেশ্বর পুজারার সঙ্গে ব্যাট করতে এলেন বাংলার ঋদ্ধি। শুরু খুব ধীরে। প্রথম বারো বল খেলার পরে স্টিভ ও’কিফকে মারা একটি শট দিল প্রথম বাউন্ডারি। এরপরে ধ্রুপদী ঢঙে চললো ব্যাটিং।

কখনো প্যাট কাম্মিন্সকে কভার দিয়ে মারা চার আবার কখনো নাথান লায়নকে কাউ-কর্নার দিয়ে মারা লফ্টেড ছক্কা তাকে পৌঁছে দিলো কাঙ্খিত অর্ধশতকে। তাও মাত্র ১০০ বলে। পরের হাফ সেঞ্চুরি এলো ১০৬ বলে। অর্থাৎ সেঞ্চুরি ২০৬ বলে। অপরদিকে ডাবল সেঞ্চুরি করে ফিরে গেছেন সৌরাষ্ট্রর ব্যাটসম্যান। অত:পর ও’কিফকে ইনসাইড-আউট করতে গিয়ে যখন ক্যাচ উঠে ফেরত গেলেন ঋদ্ধি, তখন পুজারার সঙ্গে তার ১৯৯ পার্টনারশিপ এবং স্কোরবোর্ডে ৯০ রানের লিড বিরাট কোহলির মুখে চওড়া হাসি এনে দিতে প্রচণ্ডভাবে সফল।

  • রঞ্জি ফাইনাল, বাংলা বনাম সৌরাষ্ট্র, ২০২০

সৌরাষ্ট্র স্কোরবোর্ডে তুলেছে ৪২৫। ব্যাট করতে নেমে বাংলা হারিয়েছে অভিষেকরত সুদীপ ঘরামী এবং অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরনকে। বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান সুদীপ চ্যাটার্জীর সাথে চা-পরবর্তী সেশন সামলে দিয়েছেন মনোজ তিওয়ারি(৩৫)। মনোজ আউট হতেই আবার ব্যাট হাতে নামলেন শিলিগুড়ির পাপালি। প্রথমদিকটা ভালোরকম স্বচ্ছন্দে গেলোনা।

বেশ অসুবিধায় ফেললেন রাউন্ড দ্য উইকেট বল করা চেতন সাকারিয়া এবং জয়দেব উনাদকাত। সাকারিয়ার একটি বল রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেলেন ঋদ্ধি। চতুর্থ দিন থাকলোনা কোনো জড়তা। স্ট্রেইট-ব্যাটে খেলতে লাগলেন ঋদ্ধি। উনাদকাত-সাকারিয়া-প্রেরক মানকর-ধর্মেন্দ্র সিং জাদেজা কেউ লুজবল দিয়ে পার পেলেননা। ধীরে ধীরে হাফ সেঞ্চুরি এবং ইনিংস শেষ হওয়ার মুহূর্তে তার নামের পাশে থাকল ১৮৪ বলে ৬৪। আরো গুরুত্বপূর্ণ দিনের শুরুর সুইং সামলে দুটো সেশন খেলে দিলেন সুদীপের সঙ্গে।

আইপিএল ফাইনালে ১০০ রান করা একমাত্র ভারতীয় ক্রিকেটার তিনি। ইডেন টেস্টে নিউজিল্যান্ড বিরুদ্ধে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ কিন্তু ক্যাচ বা স্ট্যাম্পিং এর জন্য আসেনি, এসেছে দুই ইনিংসে দুটি হাফ সেঞ্চুরির জন্য। এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে কঠিন সময়ে শতরান আছে, ওটা নাহয় ছেড়ে দিলাম দুর্বল দল বলে। রঞ্জি ডেব্যুতে হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে ১১১, এছাড়াও অন্য ম্যাচে চতুর্থ ইনিংসে রয়েছে ৯৭, প্রথম শ্রেণীর খেলায় সেঞ্চুরি মোট ১৩ টি। রয়েছে ডাবল সেঞ্চুরিও।

বিরাট কোহলি বলেন, ‘সাহা বর্তমানে বিশ্বসেরা উইকেটরক্ষক।’

হার্শা ভোগলে বলেন, ‘ঋদ্ধিমান থাকায় অশ্বিন-জাদেজা নিশ্চিন্ত হতে পারে।’ আর যাই হোক তার কিপিং নিয়ে বেশি বলা অতিকথন হয়ে যাবে। শুধু একটাই কথা, পাতে দেওয়ার অযোগ্য এই ধারণা বদলান। সে ধারাবাহিক না হতে পারে, হয়তো তার জন্যই অশ্বিন-জাদেজার পরে ব্যাট করতে পাঠানো হয় তাকে। এবং ধরে নিন ঠিক এই কারণেই ভারতীয় ম্যানেজমেন্ট তাঁকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে রাখে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যানের জন্য।

সাফল্যের তুলনায় ব্যার্থতা বেশি আছে, অবশ্য সে তো: অনেকেরই থাকে। কিন্তু একটু ভাবুন এতো ভালো ব্যাটিং রেকর্ড যার তিনি কি অযোগ্য ব্যাটসম্যান হতে পারেন? তার ব্যাটিং বলতে যেমন ৩১ বলে ৩০ আছে হায়দ্রাবাদ এর হয়ে কেকেআরের বিরুদ্ধে তেমনি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে লোয়ার অর্ডারে ৩১ (১০২) আছে যা রবীন্দ্র জাদেজাকে সঙ্গত দিয়ে ভালো জায়গায় পৌঁছে দেয় ভারতকে।

৩৭ টেস্টে ৩০ গড়, প্রথম শ্রেণীর খেলায় ৪৩ গড় এবং লিস্ট ‘এ’ খেলায় ৪২ গড় থাকা ব্যাটসম্যান খারাপ হতে পারেননা, খারাপ কোনো দিন নন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link