More

Social Media

Light
Dark

বেনি হাওয়েল: টি-টোয়েন্টির বিশ্ব নাগরিক!

উপমহাদেশের ক্রিকেটে বেনি হাওয়েল নামটা খুব একটা পরিচিত ছিল না। তবে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডে বেশ পরিচিত নাম এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। অনেকের মতে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সবচেয়ে উদ্ভাবনী ক্রিকেটারদের একজন বেনি হাওয়েল। সেই ভরসা থেকেই চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স দলে ভিড়িয়েছিল এই অলরাউন্ডারকে। হাওয়েল যেন শপথ নিয়ে এসেছিলেন, উপমহাদেশের তাঁর নামটা উচ্চারণ হওয়া চাই।

তবে বেনি হাওয়ালের এই বিপিএল খেলতে আসার পথটা সহজ ছিল না। অনেক পথ ঘুরে তবেই ঢাকায় এসেছেন পৌছেছেন এই ক্রিকেটার। জন্ম হয়েছিল ক্রিকেটের সাথে সম্পর্কহীন এক দেশে। ফ্রান্সের বোরডক্স শহরে জন্ম নিলেও বেড়ে উঠেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে স্কুলে পড়া অবস্থাতেই ক্রিকেটের হাতেখড়ি। এরপর আর বেনি হাওয়েলকে আটকায় কে। যেখানেই ব্যাট বলের লড়াই হয় সেখানেই হাজির তিনি।

অস্ট্রেলিয়া থেকে ক্রিকেট খেলতে পাড়ি জমিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে। সেখানেই প্রথম ব্যাট-বল হাতে নজর কাড়েন। এছাড়া বিগব্যাশেরও পরিচিত নাম বেনি হাওয়েল। তবে ক্রিকেটের এই অঞ্চলটায় কখনো খেলা হয়নি তাঁর। কিছুদিন আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি-টেন লিগে খেলেছেন। ক্রিকেটের আরেক নতুন সংস্করণ হানড্রেডেও খেলেছেন।

ads

আর এখন বাংলাদেশের এলেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে খেলতে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) তাঁর পরিচিত আঙিনা। আগেও খেলেছেন, খুলনা টাইটান্সের হয়ে। আসলে তিনি যাযাবর ক্রিকেটার – যখন যেখানে সুযোগ পান খেলে আসেন। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড – দু’টো দেশের পাসপোর্ট আছে তাঁর। তিনি আবার বিয়ে করেছেন আর্জেন্টিনায় – সেই অর্থে তাঁর শ্বশুরবাড়ি আর্জেন্টিনা!

তাঁর জীবনটা কতটা যাযাবরের মত সেটা বুঝতে একটা গল্প বলা দরকার। একবার আমেরিকায় গিয়েছিলেন ছুটি কাটাতে। সেখানে একটা বেসবল ম্যাচ দেখতে গেলেন স্টেডিয়ামে। গ্যালারি থেকে দেখে বুঝলেন, এভাবে চাইলে তিনিও পেটাতে পারবেন। পরে বিষয়টা আরো ভালভাবে রপ্ত করতে তিনি মেলবোর্ন বেসবল ক্লাবের হয়ে কিছুদিন রিজার্ভ পিচারও বনে গিয়েছিলেন।

আর বেসবলের এই বলকে পেটানোর ধারাটা তিনি নিয়ে আসলেন ক্রিকেটে। সেই ধারাবাহিকতাটা বিপিএলেও বেশ ভাল ভাবে দেখা যাচ্ছে।

ঢাকা পর্বে বিপিএলের তিন ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। এখন অবধি ব্যাট হাতে বিপিএলের সবচেয়ে নজর কাড়া ব্যাটসম্যান বেনি হাওয়েল। প্রথম ম্যাচেই ঝড়ো এক ইনিংস খেলে চট্টগ্রামকে খাঁদের কিনারা থেকে তুলে এনেছিলেন। ২০৫.০০ স্ট্রাইকরেটে ২০ বলে খেলেছিলেন ৪১ রানের ইনিংস। এছাড়া বল হাতেও ছিলেন ইকোনমিক্যাল।

পরেরদিন ঢাকার বিপক্ষে খেলতে নেমেও একই রূপে বেনি হাওয়েল। শেষদিকে তাঁর ১৯ বলে ৩৭ রানের ইনিংসে ভর করে ১৬১ রান করে চট্টগ্রাম। চার ওভার বল করে দিয়েছিলেন মাত্র ২৭ রান। হাওয়েলের অলরাউন্ড পারফর্মেন্সে ঢাকার বিপক্ষে সহজ জয় পায় চট্টগ্রাম।

তবে একেদিনের বিরতিতে আজ বেনি হাওয়েল যেনো আরো বিধ্বংসী। মিরপুরের নানা প্রান্তে গিয়ে পড়ছিল তাঁর বাউন্ডারি গুলো। তাঁর ঝড়ো ইনিংসে এখন পর্যন্ত এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ স্কোর করে দেখাল চট্টগ্রাম। মিরপুরের উইকেটেও তাঁদের সংগ্রহ ১৯০ রান। আজ বেনি হাওয়েলকে অবশ্য দলের বিপদে হাল ধরতে হয়নি।

আজ শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছে চট্টগ্রাম। এরপর বোর রান করার মঞ্চটা গড়ে দিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাব্বির রহমান রুম্মন। আজ ছয় নম্বরে নেমে ব্যটিং করলেন ১৭০.০০ স্ট্রাইকরেটে। ২০ বলে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৩৪ রান। ইনিংসটি সাজিয়েছেন এক ছয় ও চার চারের মাধ্যমে।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যে মেজাজটা সেটা এমনিতে বিপিএলে খুঁজে পাওয়া কঠিন। দিনের ম্যাচগুলোতে তো রান করাটাই এক চ্যালেঞ্জ। রাতের ম্যাচ গুলোতে যা টুকটাক রান হচ্ছে। তবে বিপিএলে এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টির মেজাজ যা পাওয়া গিয়েছে সেটা বেনি হাওয়েলের ব্যাটে চড়েই। দিন হোক কিংবা রান বেনি হাওয়েল রান করে যাচ্ছেন নিজের ধরণেই।

ফ্রান্স থেকে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড হয়ে ঢাকায় আসাটা যে বৃথা হতে দিবেন না সেটা তাঁর ব্যাটিং এই স্পষ্ট। পিচ যেমনই হোক, অপর প্রান্তের ব্যাটসম্যানরা যেভাবেই খেলুক বেনি হাওয়েল খেলে যাচ্ছেন ক্রিকেটটা যেভাবে খেলতে হয় সেভাবেই। ক্রিকেটের টানে পুরো দুনিয়া ঘুরতে গিয়ে তাঁর একটা স্থায়ী ঘর হলোনা। তিনি তো আসলে ক্রিকেটেরই সন্তান, তিনি তো ক্রিকেটেরই অ্যাম্বাসেডর।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link