More

Social Media

Light
Dark

ক্ষণস্থায়ী স্পিন বিস্ময়

বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্মলগ্ন থেকেই বাঁ-হাতি স্পিনারদের আধিক্য ছিল। মোহাম্মদ রফিক, এনামুল হক জুনিয়র, আব্দুর রাজ্জাক, সাকিব আল হাসান ছাড়া আরো অনেক বাঁ-হাতি স্পিনার আশার আলো দেখালেও তা নিভে গেছে অল্পতেই। অভিষেকে ৬ উইকেট শিকার করে ইলিয়াস সানিও জানান দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট আরেক বাঁ-হাতি স্পিন তারকা পেতে যাচ্ছে। তবে ‘সম্ভাবনা’ থেকে বাস্তবে আর রূপ দিতে পারেননি তিনি। অভিষেক টি-টোয়েন্টিতে রেকর্ড গড়া সানি হারিয়ে গেছেন অল্পতেই।

২৪ অক্টোবর, ২০১১। চট্রগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে বল করছে বাংলাদেশ। প্রথম দিনে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনের খেলা ভেস্তে যায় বৃষ্টি বাঁধায়। চতুর্থ দিনে ৯ উইকেটে ৩৫০ রানে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ইনিংস ঘোষণার পর ব্যাটিংয়ে নামে ক্যারিবীয়রা। ওই টেস্টেই অভিষিক্ত হন ইলিয়াস সানি। ব্যাট হাতে অবশ্য ডাক মেরে অভিষেকেই লজ্জার রেকর্ড গড়েন। তবে বল হাতে সেদিন সাগরিকায় ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং শিবির একাই ধসিয়ে দিয়েছিলেন এই বাঁ-হাতি স্পিনার।

সানির স্পিন বিষে ১৩৭ রানে ৫ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই ৫ উইকেটের চারটিই শিকার করেন তিনি! শেষ দিনে অভিষেকেই পাঁচ উইকেটের হাতছানি ছিল সানির সামনে। মারলন স্যামুয়েলসকে তুলে নিয়ে চতুর্থ বাংলাদেশী হিসেবে অভিষেকে পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন তিনি। ওই ইনিংসে ৯৪ রানে ৬ উইকেট সহ ম্যাচে ৭ উইকেট শিকার করেন সানি! ম্যাচ ড্র হলেও অভিষেকেই ম্যাচ সেরা হন এই স্পিনার।

ads

অভিষেক টেস্টেই নিজের সামর্থ্যের ঝলক দেখিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যত তারকা খ্যাতি পেয়েছিলেন। ইলিয়াস সানিকে অনেকেই পরবর্তী মোহাম্মদ রফিক হিসেবে ভেবেছিলেন। ভাবা হচ্ছিল সাকিব-রাজ্জাকদের পর বাঁ-হাতি স্পিনারদের নেতৃত্বটা সানির কাঁধেই থাকবে।

পরের টেস্টে শারীরিক অসুস্থতায় সানির বদলি অভিষিক্ত হন আরেক বাঁ-হাতি স্পিন অলরাউন্ডার সোহরাওয়ার্দী শুভ। ওই বছরের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতেও অভিষিক্ত হন সানি। অভিষেকে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪৬ রানের বিনিময়ে শিকার করেন মাত্র ১ উইকেট। পরের ম্যাচে নেন ৩৬ রানে ২ উইকেট। ওই সিরিজেই ২ টেস্টে নেন মাত্র ৫ উইকেট। এরপর টেস্ট ও ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই দলে জায়গা হারান তিনি।

পরের বছর জুলাইয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বেলফাস্টে টি-টোয়েন্টিতে অভিষিক্ত হন সানি। অভিষেকেই মাত্র ১৩ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন রেকর্ড গড়েন তিনি। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকে পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন সানি। টেস্ট খেলুড়ে দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি অভিষেকে এখনো সেরা বোলিং ফিগার সানির দখলে। পরের ম্যাচেও ১৮ রানে ২ উইকেট শিকার করেন তিনি।

এরপর টানা পাঁচ টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ পান সানি। বল হাতে ইকোনমিক্যাল হলেও ওই ৫ ম্যাচে শিকার করেন মাত্র ২ উইকেট। এরপরই টি-টোয়েন্টি থেকে বাদ পড়েন তিনি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ঘরের মাটিতে এক ম্যাচেও খেলার সুযোগ পাননি তিনি। ওই বছরের ডিসেম্বরে আবার ওয়ানডে দলে সুযোগ পান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চতুর্থ ওয়ানডেতে ১০ ওভারে ২ মেইডেনসহ ২১ রানে ২ উইকেট শিকার করেন তিনি। সানির কিপটে বোলিংয়ে মাত্র ২১১ রান করতে সমর্থ হয় ক্যারিবীয়রা। অবশ্য ব্যাটারদের হতাশাজনক অ্যাপ্রোচে ওই ম্যাচে ৭৮ রানে হারে বাংলাদেশ!

পরের ম্যাচে ৮ ওভার বল করে ৫৮ রান দিয়ে কোনো উইকেট নিতে পারেননি সানি। ওয়ানডে ক্রিকেটে সানির যাত্রাটা থেমে যায় এখানেই! পরের বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্টে সুযোগ পেলেও দুই ইনিংসে কোনো উইকেটই নিতে পারেননি তিনি। এরপর আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে পারেননি অভিষেকে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে রেকর্ড গড়া এই স্পিনার!

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নজরকাঁড়া পারফরম্যান্স দিয়েই এসেছিলেন জাতীয় দলে। চট্রগ্রামের হলেও ২০০৪ সালে ঢাকা ডিভিশনের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় সানির। জাতীয় দলে আসার আগে ৫৬ ম্যাচে প্রায় ২৫ গড়ে শিকার করেছিলেন ২০৩ উইকেট! ১০ বার ৪ উইকেট ও ৯ বার শিকার করেন ৫ উইকেট। এই ৫৬ ম্যাচে ব্যাটে হাতেও করেছিলেন প্রায় ২ হাজার রান! ঝুলিতে ছিল ৩ সেঞ্চুরি আর ৮ হাফ সেঞ্চুরি।

ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন পারফরম্যান্সের পরে ২৫ বছর বয়সে এসেছিলেন জাতীয় দলে। সাকিব, রাজ্জাকদের ভিড়ে জাতীয় দলের জায়গা মেলানোটাই ছিল দুষ্কর। এর মাঝে আরাফাত সানি অভিষেকের পর থেকে ধারাবাহিক পারফর্ম করছিলেন। আরাফাত সানির কাছেই রঙিন পোশাকে জায়গাটা হারান ইলিয়াস সানি। অবশ্য ইলিয়াস সানির বাজে পারফরম্যান্সই তাঁকে ছিটকে দেয় জাতীয় দল থেকে।

৪ টেস্টে, ৪ ওয়ানডে ও ৭ টি-টোয়েন্টিতে উইকেট নিয়েছেন যথাক্রমে ১২, ৫ ও ৯ টি! প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ৯৭ ম্যাচে শিকার করেছেন ৩৪৩ উইকেট। ঘরোয়া ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত সর্বসাকুল্যে উইকেট নিয়েছেন ৬০৮ টি। এছাড়া ব্যাট হাতে করেছেন প্রায় ৫ হাজার রান। ৩ সেঞ্চুরি ছাড়াও আছে ১৬ টি হাফ সেঞ্চুরি।

২০১৩ সালের পর আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা দিতে পারেননি সানি। বয়সটা এখন ৩৬! জাতীয় দলে খেলার সুযোগ কিংবা সম্ভাবনা কোনোটি আর নেই। ঘরোয়া ক্রিকেটেও তিনি নিয়মিত মুখ নন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে সম্ভাবনা আর আশার আলো দেখিয়ে এসেছিলেন তা নিভে গেছে শুরুতেই। নিজের প্রতিভার সুবিচার মোটেও করতে পারেননি ইলিয়াস সানি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link