More

Social Media

Light
Dark

এ কালের জয়া-কালু

ক্রিকেট অ্যাকাডেমির সবাই কিংবা ছোটবেলার বন্ধুরা তাঁকে ডাকেন ‘জয়াসুরিয়া’ বলে। তাঁর স্ট্রোকপ্লের জন্যই বন্ধুদের এমন নাম দেয়া। তাঁরা বিশ্বাসও করেন সিদ্ধার্থ যাদব একদিন সনাথ জয়াসুরিয়ার মত ওপেনার হবেন। জয়াসুরিয়ার সাথে তাঁর ওপেনিং পার্টনার রমেশ কালুভিতারানাও তো থাকা চাই। তিনিও আছেন সিদ্ধার্থের ক্রিকেট একাডেমিতে। তাঁর নাম আরাধ্য যাদব।

দুজনই সেই ছোট বেলা থেকে একসাথে ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে আছেন। সিদ্ধার্থ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান, ঠিক সনাথ জয়াসুরিয়ার মত তাঁর ব্যাটিং। ওদিকে বন্ধু আরাধ্য কালুর মতই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। দুই বন্ধু এবার ক্রিকেট খেলবেন নিজের দেশের হয়ে। ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিয়েছেন এই দুই বন্ধু।

এই দুই ব্যাটসম্যানই ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাচ্ছেন ভারতের হয়ে যুব বিশ্বকাপ খেলতে। দুজনই উঠে এসেছেন গাজিয়াবাদ থেকে। সিদ্ধার্থের উঠে আসার পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল তাঁর বাবার। তিনি একটা ছোট দোকান চালান। দোকান থেকে সংসার চালিয়ে যা টাকা বাঁচে তাই খরচ করতেন ছেলের ক্রিকেটের পিছনে।

ads

ছোট বেলায় সিদ্ধার্থ যেদিন প্রথম ব্যাট ধরেছিলেন সেদিনই বোঝা গেল ছেলেটা বাঁ-হাতি। বাঁ-হাতে ব্যাট ধরা দেখে অনেকে বলেছিল সোজা হয়ে (ডান হাতে) ব্যাট ধরতে। তবে সিদ্ধার্থের বাবা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বলেছিলেন ছেলে যেভাবে খেলতে চায় খেলুক। বিকালে তিন ঘন্টা নিজের দোকান বন্ধ রেখে ছেলেকে ক্রিকেট খেলতে নিয়ে যেতেন বাসার পাশের ছোট মাঠে। এরপর থেকে সিদ্ধার্থ নিজের মতই খেলেছে। যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছে নিজেকে প্রমাণ করেছেন।

সিদ্ধার্থের বয়স তখন মাত্র ১২-১৩ বছর। সিদ্ধার্থের বাবা তখন অজয় যাদব নামে এক ভদ্রলোকের সাথে পরিচিত হন। অনূর্ধ্ব ১৬ দলের ট্রায়ালে নিজের ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন সেই ভদ্রলোক। সেই ছেলের নামই আরাধ্য। দুজনই তখন ভর্তি হন মেমোরিয়াল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। সেখানকার কোচ ছিলেন সাবেক ক্রিকেটার অজয় শর্মা। তাঁর হাতেই গড়ে উঠেন সিদ্ধার্থ ও আরাধ্য। একসাথে খেলতে খেলতে দুজনের বন্ধুত্ব গাড় হয়, ক্রিকেট মেধাও প্রখর হতে থাকে।

ওদিকে আরাধ্যও ক্রিকেট ব্যাট হাতে তুলে নিয়েছিলেন ছোট বেলায়ই। মাত্র ১২ বছর বয়সেই অনূর্ধ্ব ১৪ দলে খেলেছিলেন। তাঁর বড় ভাইও ক্রিকেট খেলতেন। ফলে ছোট বেলা থেকেই বড় ভাইকে প্র্যাকটিস করতে দেখেছেন। ক্রিকেটটা আস্তে আস্তে আরাধ্যর ভিতরে ঢুকে গিয়েছিল। আরাধ্যর বাবাও ছেলের ক্রিকেটের জন্য অনেক রকম ত্যাগ করেছেন। সেই ভদ্রলোক কাজ করেন দিল্লী পুলিশে।

তবে দুজনেরই ক্রিকেটটাকে পুরোপুরি নিজেদের করে নেন অ্যাকাডেমিতে এসে। সেখানকার কোচ অজয় শার্মা বলছিলেন, ‘ওরা আমার এখানে এসেছিল ২০১৬ সালে। দুজনেরই বয়স তখন ১২-১৩। দুজনই ভীষণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার ছিল। আর আপনি কোচ হিসেবে নিশ্চয়ই এমন বাচ্চাদের বেশি যত্ন নিতে চাইবেন। আমিও তাই করতাম। আরাধ্যর ওজন একটু বেশি ছিল। তবে পরে সে তাঁর ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছে। ৫০ ওভার কিপিং করার পরেও সে ওপেন করতে পারে। তবে আরাধ্যর ম্যাচ শেষ করে আসতে পারার ক্ষমতা অসাধারণ। একাডেমিতে সবাই ওকে আরাধ্য নট আউট বলে ডাকে।’

এছাড়া এই কোচ তাঁর আরেক প্রিয় ছাত্র সিদ্ধার্থকে নিয়ে বলেন, ‘আমি তাঁর সাথে খুব কাছ থেকে কাজ করেছি। আমার ছেলে ২০১০ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলেছে। সেও বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ছিল। শুরুর দিকে আমার ছেলের ক্রিকেট সরঞ্জাম এনে আমি সিদ্ধার্থকে দিতাম। অ্যাকাডেমিও তাঁকে নানাভাবে সাহায্য করেছে। আজ সে আমাদের অনেক গর্বিত করেছে।’

ওপেনিং করতে নেমে শটের ফুলঝুড়ি ছড়িয়ে একজন নাম পেয়েছেন জয়াসুরিয়া। আরেকজন ম্যাচ শেষ করে আসার জন্য নট আউট নাম পেয়েছেন। তবে দুজনের রোল মডেল আবার ভারতের ক্রিকেটের পরিচিত দুই বন্ধু। মহেন্দ্র সিং ধোনি ও সুরেশ রায়না। এমনকি আগে টুকটাক বল করলেও ধোনির জন্য বোলিং ছেড়ে কিপিং গ্লাভস হাতে তুলে নিয়েছেন আরাধ্য। দুই বন্ধুর দলে চরিত্র ভিন্ন, ডাকনাম ভিন্ন কিংবা রোল মডেলও ভিন্ন। তবে দুজনের স্বপ্ন এক, একসাথে খেলতে চান ভারতের হয়ে। দুজনেই বুঝি একসাথে গান ধরেন, ‘বন্ধু চল, বলটা দে। রাখব হাত, তোর কাঁধে।’

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link