More

Social Media

Light
Dark

ওয়ানডের সফলতম ভারতীয় অধিনায়ক

রোহিত শর্মা এখন টক অব দ্য টাউন। ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলের সাদা বলের অধিনায়ক। প্রথমে পেলেন দায়িত্ব টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে, সেটা খানিক প্রত্যাশিতই ছিল। কেননা সদ্য সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলি এ বছরের শুরুতেই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি ক্রিকেটের ক্ষুদ্র ফরম্যাটে অধিনায়কত্ব থেকে নিজেকে সড়িয়ে নেবেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সপ্তম আসর শেষ হওয়ার পরপরই। তাই করলেন এবং স্বাভাবিকভাবেই তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন রোহিত শর্মা। প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজেই সাফল্যের পরিসংখ্যান একশ শতাংশ।

খানিক হুট করেই রোহিত শর্মাকে ভারত জাতীয় ওয়ানডে দলের অধিনায়কের দায়িত্বও দিয়ে দিলো বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া। এক টুইট বার্তায় ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই তথ্য নিশ্চিত করে। এর ফলে সব ফরম্যাটে একজন অধিনায়ক রীতি থেকে সড়ে আসলো ভারত। কেননা লাল বলের ক্রিকেটে এখনও দলকে নেতৃত্ব দেবেন বিরাট কোহলি। যেহেতু নতুন এক দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন রোহিত, তাঁর উপর প্রত্যাশার চাপ বাড়বেই। সফল হবেন কিনা তা সময় বলে দিলেও তাঁকে মাথায় রাখতেই হচ্ছে সেই সকল অধিনায়কদের যাদের উত্তরসূরী হিসেবে তিনি বসেছেন দলনেতার আসনে।

ভারতীয় দলের সাবেক সফল সকল অধিনায়কদের সাফল্যের একটি তালিকা করা গেলে বোঝা যাবে ঠিক কি পরিমাণ খাটতে হবে রোহিত শর্মাকে সেরা অধিনায়কদের কাতারে নিজেকে নিয়ে যেতে। তাই আজকে ভারতের সাবেক ওয়ানডে অধিনায়কদের সাফল্যের পরিসংখ্যান নিয়ে হাজির খেলা ৭১, যারা কিনা অন্তত বিশটি ওয়ানডে ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলকে।

ads
  • বিরাট কোহলি

রোহিত শর্মার অধিনায়কত্বের দায়িত্বপ্রাপ্তির পর থেকেই নানা মহলে হচ্ছে সমালোচনা। তাঁর কারণ অবশ্য বিরাট কোহলি কেন্দ্রিক। বিরাট চেয়েছিলেন ওয়ানডেতে তাঁর অধিনায়কের দায়িত্ব ২০২৩ বিশ্বকাপ অবধি অব্যাহত রাখতে। তাঁর এই সিধান্তকে উপেক্ষা করে বিসিসিআই নতুন অধিনায়ক নিয়োগে এই সমালোচনার উত্থান।

বিরাট কোহলি ভারতীয় ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা একজন অধিনায়ক। যদিও তিনি ভারতকে কোন আইসিসি ট্রফি জেতাতে পারেননি তবুও তাঁর অধীনেই ভারত সর্বাধিক দ্বিপাক্ষিক সিরিজে জয়লাভ করেছে যার সংখ্যা ১৫টি, ১৯টি সিরিজের মধ্য থেকে। এরমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজদের মতো শক্ত প্রতিপক্ষের আধিক্য ছিল বেশি।

সদ্য সাবেক অধিনায়ক বিরাট তাঁর অধিনায়কত্বকালীন সময়ে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ৯৫টি ওয়ানডে ম্যাচে। যার মধ্য থেকে দলকে ৬৫ ম্যাচ জিততে সহয়তা করা বিরাট কোহলির জয়ের পরিসংখ্যান ৬৮ শতাংশ।

  • মহেন্দ্র সিং ধোনি 

ভারত তো বটেই বিশ্বক্রিকেটের অন্যতম সেরা কিংবা সেরাদের সেরা অধিনায়ক হিসেবে যদি মহেন্দ্র সিং ধোনিকে আখ্যায়িত করা তাহলে খুব বেশি যে ভুল হবে তা নয়। তিনিই ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র অধিনায়ক যার নেতৃত্বে তাঁর দল জিতেছে তিনটি ভিন্ন আইসিসি আয়োজিত বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের শিরোপার। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও ২০১৩তে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এই  তিন শিরোপা জয়ের পথ তিনি বাতলে দিয়েছেন দলকে এবং বনে গেছেন ইতিহাসের অনন্য অধিনায়ক।

এছাড়াও তাঁর সময়ে ভারত দলের মানসিকতায় যেমন এসেছিল পরিবর্তন, ঠিক তেমনি তাঁদের খেলোয়াড়দের প্রতিভা যেন সুযোগ পেয়েছিলে পূর্ণ বিকশিত হবার। কেননা ধোনি খুব ভাল করেই তাঁর দলের থাকা খেলোয়াড়দের দূর্বলতা ও শক্তির জায়গা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তাছাড়া তাঁর সময়কালেই ভারত দেশের মাটিতে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জয়ের পাশাপাশি শিখতে শুরু করেছিল ভিনদেশেও নিয়মিত সিরিজ জয়ের কলাকৌশল।

ভারত তথা ক্রিকেটের এমন সফলতম অধিনায়ক জয়ের সফলতার দিক থেকে রয়েছেন দ্বিতীয় স্থানে। তাঁর জয়ের পরিসংখ্যানের শতকরা হিসেব ৫৫।

  • রাহুল দ্রাবিড়

জয়ের শতকরা পরিসংখ্যানের তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছেন, ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি রাহুল দ্রাবিড়। নিজের ব্যাটিং নৈপুণ্যে নিজেকে কিংবদন্তিদের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া এই ডান-হাতি ব্যাটার বর্তমানে ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করছেন। বিপর্যয়ের এমন এক পর্যায়ে তিনি দলের হাল ধরেছিলেন রাহুল। তবুও তাঁর সাফল্যের পরিসংখ্যানে খুব একটা চর্চা হয়নি। হয়ত ব্যাটার রাহুল দ্রাবিড়ের সাফল্য এবং নৈপুন্যে ঢেকে গিয়েছিল অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়ের সাফল্য।

খুবই অল্প সময়ের জন্যে দ্রাবিড় অধিয়ানায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তবুও ৭৯টি ওয়ানডে ম্যাচে তিনি ভারতকে নেতৃত্ব দিয়ে ৪২টি ম্যাচে জয়ের বন্দরে ঠিকঠাক পৌঁছে দিয়েছিলেন দলকে। ঘরের মাঠে তো বটেই বিদেশের মাটিতেও তাঁর নেতৃত্ব সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। দ্রাবিড়ের অধিনায়কত্বকালীন জয় ৫৩ শতাংশ।

  • কপিল দেব

ভারতকে প্রথম বিশ্বকাপের স্বাদ পাইয়ে দেওয়া অধিনায়ক কপিল দেব ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি। ১৯৮৩ সালে তৎকালীন ক্রিকেটের পাওয়ার হাউজ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে কপিল দেবের নেতৃত্বে বিশ্বকাপ জেতে ভারত। তৎকালীন সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ভাবা হতো অদম্য, দূর্ভেদ্য এক দল। সেই বিধ্বংসী দলকে হারানোর পেছনের মানসিক স্পৃহা জোগানো কপিল দেব ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের প্রথম ‘পোস্টার বয়’।

কপিল দেব ভারতকে ক্রিকেট বিশ্বের ম্যাপে এক উজ্জ্বল এক নক্ষত্র হিসেবে জায়গা করে দেন। কপিল দেবে নেতৃত্বে ভারত মোট ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিল ৭৪টি। যার মধ্যে জয়ের সংখ্যা ৩৯টি। জয়ের পরিসংখ্যান ৫২ শতাংশ। শুধু দলকে নেতৃত্ব দেওয়াই নয়, কপিল দেব ছিলেন একজন কার্যকরী অলরাউন্ডার। ব্যাট-বলেও সমান অবদান রাখতেন কপিল, দলের জয় কিংবা পরাজয়ে।

  • সৌরভ গাঙ্গুলি 

লর্ডের বারান্দায় গায়ের জার্সি খুলে ওড়াবার দৃশ্য নিশ্চয়ই কারো স্মৃতিতে ফিঁকে হয়ে যায়নি। সৌরভ গাঙ্গুলি বরাবরের মতোই ক্রিকেট ময়দানে ঠিক ওমন উদযাপনের মতো করেই ছিলেন আগ্রাসী। তাছাড়া নির্ভীক ক্রিকেটার অধিনায়ক হবার পর দলের মাঝেও ছড়িয়ে দিয়েছেন নির্ভয়ে ক্রিকেট খেলার বার্তা। তাঁর মতোই আগ্রাসী মনোভাব এবং ভয়-ডরহীন ক্রিকেট খেলার টোটকা তাঁর অধিনায়কত্বের পরিসংখ্যানকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে ঠিক তেমনি ভারতকে ধাবিত করেছিল পরাশক্তি হবার দিকে।

২০০০ সালে ভারত ক্রিকেট দলের অধিনায়কের পদ পাওয়া সৌরভ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ১৪৬টি ওয়ানডে ম্যাচে। যেখান থেকে জয়ের সংখ্যা ৭৬। শতকরা হিসেবে ৫২ শতাংশ। আজকে তালিকার পঞ্চম স্থানে থাকলেও সৌরভ গাঙ্গুলি কোনরকমের তর্ক ছাড়াই ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক। তাঁর আমলে ভারত ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি ও ২০০২ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়মন্স ট্রফি জিতেছিল ভারত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link