More

Social Media

Light
Dark

শঙ্খচিল দানি আলভেজ

আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে – এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় – হয়তো বা শঙখচিল শালিকের বেশে

জীবনানন্দ দাশ ফিরতে চেয়েছিলেন এই ধরণীতে। তবে ক্যাম্প ন্যুয়ের শঙ্খচিল বেশে আবার বার্সালোনায় ফিরলেন দানি আলভেজ। ৩৮ বছর বয়সে ফিরেছেন ইউরোপের অন্যতম সেরা কিংবা ঐতিহ্যবাহী ক্লাবে। ২০১৬ সালে ছেড়েছিলেন কাতালান ক্লাবটির মায়া। ক্লাবে হয়ত তাঁর প্রয়োজন ফুরিয়ে এসেছিল। কিন্তু দানি আলভেজের মনের গহীন কোণ থেকে হয়ত আবার প্রত্যাবর্তনের ইচ্ছেটা হয়ত ছিলই।

বহু গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বারংবার তিনি বলেছিলেন। অপেক্ষা রয়েছেন একটি মাত্র ফোন কলের। ক্লাবের প্রয়োজনে নিজের ক্যারিয়ারের শেষ বেলায়ও নিজেকে উজাড় করে দেবেন। অপেক্ষার হয়েছে শেষ। জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করা ক্লাবে আবার ফিরেছেন দানি আলভেজ। আবার এসেছে সুযোগ কাতালান জার্সি গায়ে জড়িয়ে ক্যাম্প ন্যু-কে মাতিয়ে তুলবার।

ads

প্রায় একটা ছোট্ট দেশের জিডিপির সমপরিমাণ ঋণের ডুবে থাকা দলের সম্প্রতি হাল ধরেছেন আরেক ক্লাব কিংবদন্তি দানি আলভেজের সতীর্থ জাভি হার্নান্দেজ। জাভি ফিরলেন কোচ হিসেবেই এবং দলে ভেড়ালেন নিজের সতীর্থকে একজন খেলোয়াড় হিসেবে। এক সাথে কত মধুময় স্মৃতির রোমন্থন হবে ড্রেসিং রুমে কিংবা অনুশীলনের ফাঁকে।

তবে দানি, জাভিরা যেমনটি রেখে গিয়েছিলেন তাঁর নিকট দূরেও নেই বর্তমান বার্সার অবস্থান। ২০১৫-১৬ মৌসুম পর্যন্তও কি এক বিধ্বংসী দল ছিলো বলুন! প্রতিপক্ষের পরিকল্পনার ছকে কাটাছেড়া হতো কাতালান ক্লাবটির প্রতিটি খেলোয়াড় নিয়ে। জাভি, দানি, আন্দ্রেস ইনিয়েন্তা, লিওনেল মেসি, লুইজ সুয়ারেজ, নেইমার জুনিয়রদের প্রত্যেকে যেন ছিল মূর্তিমান আতঙ্কের নাম।

সময়ের পরিক্রমায় এসেছে দলে পরিবর্তন। ফুটবল মাঠের ত্রাস বার্সা এখন বনে গেছে এক মামুলি প্রতিপক্ষ। হেসে-খেলে কিংবা খানিক পরিকল্পনা মাফিক এগোলেই হারিয়ে দেওয়া যায় বার্সাকে। নেই বার্সার সেই জৌলুশ, ধার, তেজ। লিগে অবস্থান নয় নম্বরে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও অবস্থান যে খুব একটা ভাল তাও নয়। এমন সময়ে দানি ফিরলেন।  বয়সের ভারে হয়ত নিজের স্বর্ণালী দিনগুলোর মতো দলকে সার্ভিসটা ঠিক দিতে পারবেন না। যেমন পারতেন ২০১৬ এর পূর্বে।

২০০৮ সালে দানি এসছিলেন স্পেনের আরেক ক্লাব সেভিয়া থেকে কাতালান শিবিরে। তারপর থেকে মুগ্ধ করেছেন বার্সেলোনার দর্শক-সমর্থকদের। ২০০৮-২০১৬ অবধি বার্সার হয়ে ৩৯১ ম্যাচ। একজন ফুলব্যাক হিসেবে বার্সেলোনার রক্ষণ যেমন সামলেছেন ঠিক সমান তালে অংশ নিয়েছিলেন আক্রমণে। ছিলেন দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ২১ খানা গোলও রয়েছে তাঁর নামের পাশে। খানিকটা নিজের স্বার্থ চিন্তা করলে তিনি হয়ত গোল সংখ্যাও বাড়িয়ে নিতে পারতেন।

তবে তিনি তা না করে নিজেকে সপে দিয়েছিলেন দলের তরে। খেলেছিলেন স্বার্থের উর্ধ্বে দলের হয়ে। ফুটবল বিধাতা দিয়েছেনও দানি আলভেজকে দু’হাত ভরে। বার্সার জার্সিতে এহেন কোন শিরোপা নেই যা তিনি জেতেনি। ২০০৮-১৬ দীর্ঘ আট বছরের বার্সা ক্যারিয়ারে তাঁর অর্জনে রয়েছে ছয়টি লা লিগা, তিনটি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, চারটা কোপা দেল রে। ২০০৮-০৯ মৌসুমে যেবার বার্সা পেপ গার্দিওলার অধীনে ট্রেবল জয়ের কৃতীত্ব গড়লো সেই দলের সহ-অধিনায়ক জাভির সতীর্থ ছিলেন দানি আলভেজ।

তবু সে যাই হোক এই বুড়ো বয়সে ধুকতে থাকা এক বার্সেলোনায় দানি আলভেজ আর কি ই বা করবেন। এমন অভিমত হয়ত অনেকেরই রয়েছে। থাকাটাও অত্যন্ত স্বাভাবিক। বয়সের ভারে শরীরটা তো ঝুকেই যায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাজিলের অলিম্পিক দলের সদস্য ছিলেন দানি আলভেজ। সদস্য নয় ঠিক অধিনায়ক। খেলেছেন সবগুলো ম্যাচের শুরু থেকে শেষ অবধি। অন্তত প্রমাণ করে প্রতিযোগিতা মূলক খেলা কি করে খেলতে হয় এবং নিজের দেহকে কি করে বশ করতে হয় তা খুব ভাল করেই জানা দানি আলভেজের।

তাছাড়া যদি গত দুই বছরে ঘরের ক্লাব সাও পাওলোতে খেলা তাঁর পরিসংখ্যান ঘাটলে বোঝা যায় তিনি এখনও বেশ কার্যকর। তিন মৌসুমে ৯৫ ম্যাচের বিপরীতে তাঁর গোল সংখ্যা দশটি এবং অ্যাসিস্ট পনেরোটি। তাই অন্তত বলা যায় আলভেজকে দলে ভেড়ানো আহামরি ভুল সিধান্ত নয়। তবে বার্সেলোনা তথা জাভি হয়ত ভিন্ন এক প্রত্যাশায় দানিকে ভিড়িয়েছেন দলে।

বার্সা দলে হয়ত কার্যকরী ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেবার মতো কোন খেলোয়াড় নেই। তবে বেশকিছু তরুণ সম্ভাবনাময়ী খেলোয়াড়ে রীতিমত ঠাসা বার্সেলোনার স্কোয়াড। আনসু ফাতি, গাভি, সার্জিনো ডেস্ট, পেদ্রির মতো খেলোয়াড় রয়েছে। এদের প্রয়োজন দিকনির্দেশনা এবং ফুটবলটাকে কি করে ভালবাসতে হয় সেটা জানা। সেক্ষেত্রে দানি আলভেজের থেকে ভাল কেউ হয়ত নেই।

এতসব কথার মাঝে দানি আলভেজ কিন্তু উৎরে গেছেন বার্সেলোনার মেডিকেল পরীক্ষা। জার্সি নম্বরও পেয়েছেন তাঁর সাবেক সতীর্থ আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার আট নম্বর। ডাগআউটে থাকছেন তাঁর আরেক সতীর্থ জাভি।  অথৈ সাগরে হাতরে বেড়িয়ে তীর খোঁজার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালানো দলের শঙ্খচিল হয়ে দেখাতে পারেন কি না দানি সমুদ্রতটের ঠিকানা সেটার জন্য়ে করতে হবে অপেক্ষা। সঠিক সময়ের অপেক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link