More

Social Media

Light
Dark

দেখিস, একদিন, আমরাও…

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে অস্বস্থিকর ছিল বাছাইপর্বে খেলা। ওমান, পাপুয়া নিউগিনি ও স্কটল্যান্ডের মোকাবেলা করে তবেই মূল পর্বে খেলতে হয়েছে। কিন্তু সুপার টুয়েলভ যেন নতুন শিক্ষা দিচ্ছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।

স্কটল্যান্ডের কাছে পরাজয়ের পর ওমান ও পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে জয়ে ’ইজ্জত’ রক্ষা হলেও এখন কুলহারা বাংলাদেশের ক্রিকেট। সেমিফাইনালে খেলার প্রত্যাশা থাকলেও সেটি কার্যত শেষ হয়ে গেছে। টাটা তিন হারে চারিদিকে সমলোচনার সুনামী বলে চলেছে। ক্রিকেটারদের সামর্থ নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন নেটিজেনরা। দীর্ঘসময় ধরে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল বাংলাদেশ।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় দিয়ে শুরু করার পর অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ে আশায় বুক বেধেছিল। কিন্তু সেই আশার সমাধি হতেও সময় লাগেনি। বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর কয়েকটি বিষয় সামনে চলে এসেছে। বাংলাদেশকে যদি ক্রিকেটের ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটের মধ্যে দল হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাহলে একমাত্র ওয়ানডেতে সমীহ করা দল বলতে হবে।

ads

বাকি টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে এখনো সামর্থবান দলে পরিণত হয়নি লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। টেষ্টে আফগানিস্তানের পাশাপাশি টি-টোয়েন্টিতে স্কটিশদের বিপক্ষে পরাজয় সেই কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। এক বিশ্বকাপ দিয়ে বাংলাদেশ দলের অনেক অসঙ্গতি ফুটে ওঠেছে।

বিনোদন আর মারকাটরি ক্রিকেট হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সেরা দলের পাশাপাশি নিয়ে যেতে পারেনি রাসেল ডোমিঙ্গোর শীষ্যরা। বিশেষ করে একটা দল হয়ে খেলতে পারছেনা তারা। যার মধ্যে প্রথম কিংবা পরে ব্যাট করলেও পাওয়ার হিটারের যে প্রয়োজণীয়তা সেটি বেশি করে ভোগাচ্ছে দলকে।

ইংল্যান্ডে জশ বাটলার, পাকিস্তানে আসিফ আলী কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার ডেভিড মিলারের মতো কেউ নেই বলে জয়ের খুব কাছে গিয়ে হারতে হচ্ছে। ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩ রানের পরাজয়টাই বেশি করে পোড়াচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। সমর্থকরা তো এই পরাজয় মেনে নিতে পারছে না। একজন পাওয়ার হিটার যে কতটা প্রয়োজন দলে সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

বিশ্বকাপে আসিফ আলীর ব্যাটের দুর্বিনীত নাচনের কাহিনী এখন ক্রিকেট বিশ্বে সবার মুখে মুখে ফিরছে। দুই ম্যাচে মাত্র ১৯ বল খেলে রান তুলেছেন ৫২। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১২ বলে অপরাজিত ২৭ আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭ বলে চার ছক্কায় অপরাজিত ২৫ রানে পাকিস্তানের জয়ের নায়ক আসিফ। দুই ইনিংসে তার স্ট্রাইক রেট যথাক্রমে ২২৫.০০, ৩৫৭.১৪!

যে কারণে পাকিস্তানকে খুব বেশি ভাবনাও ভাবতে হয়নি। ঠিক এতটা বিস্ফোরক আর খুনে ব্যাটিংয়েরও খুব বেশি দরকার ছিল না বাংলাদেশের। তার অর্ধেক মানের কাউকে পাওয়া গেলেও যে হাপিত্যেশ চলছে চারিদিকে সেটাও ছু’তে পারতনা লাল সবুজ পতাকাধারীদের। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ওভারপ্রতি আস্কিং রান রেটের সঙ্গে অনেকটাই পাল্লা দিয়ে লড়ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ-লিটন দাসরা।

বিশ্বকাপ স্বপ্ন বাচিঁয়ে রাখতে এই ম্যাচের শেষ ১২ বলে ২২, ৬ বলে ১৩ রান এবং শেষ বলে চার রান প্রয়োজন ছিল টাইগারদের। কিন্তু বাংলাদেশ দলে ছিল না ‘একজন আসিফ আলী’র মতো ড্যাশিং কোন ব্যাটসম্যান। শেষ বকলে কোন রান করতে না পেরে মাত্র ৩ রানে হারে মাঠ ছাড়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। খুব কাছে গিয়েও এই হারের পর স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলে কেন কোন পাওয়ার হিটার নেই?

একজন মারদাঙ্গা ব্যাটারের যে কতটা প্রয়োজন দলে সেটি পরাজয়ের পর বুঝতে পেরেছে। বিশ্বকাপে দলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়া জাতীয় দলের নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমনও চিন্তিত একজন পাওয়ার হিটার না থাকায়, ‘এখন মানসম্পন্ন উইকেট তৈরি করতে না পারলে ভবিষ্যতে আরও সমস্যায় পড়তে হবে দলকে। সে কারণে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটই কেবল ব্যাটসম্যানদের হাত খুলে খেলার পরিবেশ দিতে পারে। তখনই পাওয়া হিটার পাওয়া যাবে।’

কখনোই রান প্রসবা ক্ষেত্র হিসেবে দেখা যায়নি বাংলাদেশের হোম অব ক্রিকেট মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের উইকেটগুলোকে। বেশিরভাগ সময়ই মন্থর, নিচু হওয়া স্পিনিং উইকেটই ব্যাটসম্যানদের সাহস, সক্ষমতা বাড়ানোর পথে বড় বেশি অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। কারণ বছরের বেশিরভাগ সময়ই এমন মানহীন আর নিম্নমানের উইকেটে খেলে থাকেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।

নানা সময় বিতর্ক তৈরি হওয়ার পর এসব উইকেট বানিয়ে প্রায় এক যুগ ধরে মিরপুর স্টেডিয়ামে বহাল তবিয়তে আছেন শ্রীলঙ্কান কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা। দেশীয় ভালো কিউরেটরকে ঢাকার বাইরে পাঠিয়ে মিরপুরে তাকে ধরে রাখার পেছনেও এক পরিচালকের হাত থাকার পাশাপাশি এমন উইকেট থৈরিও একটা বড় কারণ। বিশ্বকাপ মিশনে হতাশাজনক এই ভরাডুবিতেও তাদের অবদান অনস্বীকার্য।

এদিকে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলটও দলে পাওয়ার হিটার না থাকায় বেশ হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সবাই জানেন বিসিবির ৯০০ কোটি টাকারও বেশি উদ্বৃত্ত রয়েছে। মাসে ১০ কোটি টাকা আয়ের পথ থাকলেও দুই বলে ১০ রান করার মতো ব্যাটসম্যানই যে নেই বাংলাদেশ দলে। এভাবে টোয়েন্টি-২০ ক্রিকেটে প্রতিপক্ষ দলগুলোর সঙ্গে পেরে ওঠা কোনভাবেই সম্ভব নয়। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা আমাদের এখনই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।’ কুড়ি ওভারের ক্রিকেট খেললে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটের দিকেই বেশি করে মনযোগ দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন পাইলট।

পাকিস্তানের আসিফ আলী যেখানে প্রতি ৩ বলে একটি ছক্কা হাকান সেখানে বাংলাদেশের লিটন দাস ১০৪ বলে একটি করে ছক্কা হাঁকান! পার্থক্যটা এখানেই পরিস্কার হয়ে যায়। এর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ উইকেটের পরাজয়ের পর বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ হতাশা নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা যেভাবে ব্যাটিং করেছি সেটি কোনভাবেই টি-টোয়েন্টি মানের নয়। উইকেট ভালো থাকলেও প্রয়োজনীয় রানটাই করতে পারিনি আমরা। এসব উইকেটে ভালো শুরু না পেলে বড় রান করা যে কঠিন সেটি আমরা বুঝতে পেরেছি। বর্তমানে আমাদের দলে পাওয়ার হিটারের চেয়ে স্কিলড হিটারের সংখ্যাই বেশি।’

দক্ষিণ আফ্রিকাও হিটার নিয়ে সমাধান পেয়ে গেছে। শ্রীলংকার বিপক্ষে শেষ দুই ওভারে প্রোটিয়াদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৫ রান। ইনিংসের ১৯ নম্বর ওভার থেকে ১০ রান নেন কাগিসো রাবাদা ও ডেভিড মিলার। শেষ ৬ বলে ১৫ রান যেখানে প্রয়োজন সেখানে লাহিরু কুমারার প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে প্রান্ত বদল করেন রাবাদা। স্ট্রাইক পেয়েই মিলার টানা দুই বলে ডিপ স্কয়ার লেগে ছক্কা মেরে জয় নিশ্চিত করেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৩৬ বলে সেঞ্চুরি হাঁকানো মিলার। বাংলাদেশ দলে সেই ধরনের ব্যাটসম্যান হতে পারেন শামীম পাটোয়ারী। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেটেও জোরে বল মারতে সিদ্বহস্ত এই বাহাতি। এখন জাতীয় দলে তার নিজেকে প্রমাণের পালা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link