More

Social Media

Light
Dark

কোম্যান গেলেন, বার্সা ফিরবে কি?

রায়ো ভায়োকানোর মাঠে লিগে নিজেদের দশম ম্যাচ খেলতে যায় রোনাল্ড কোম্যানের তত্ত্বাবধায়নে থাকা এফ সি বার্সেলোনা। এই ম্যাচের আগেই মৌসুমের প্রথম এল ক্ল্যাসিকোতে নিজেদের চিরপ্রতিদ্বন্দী রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরেছে কাতালানরা। সেই হারের ক্ষত উপশমের ম্যাচে কলম্বিয়ান স্ট্রাইকার রাদামেল ফালকাও ক্ষত বাড়িয়ে দিলেন বহু গুণে। তাঁর ৩০ মিনিটে করা গোলেই লিগে তৃতীয় হারের মুখ দেখে বার্সেলোনা। আর আর পরেই খবর আসে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বার্সা কোচ রোনাল্ড কোম্যানকে।

রোনাল্ড কোম্যান, খেলোয়াড়ি জীবন বিবেচনায় যিনি একজন বার্সেলোনা কিংবদন্তি। ১৯৮৯ সালে কাতালান জার্সি গায়ে ইয়োহান ক্রুইফের ‘ড্রিম টিম’ এর সদস্য ছিলেন কোম্যান। বার্সার ক্যারিয়ারে তিনি খেলেছেন সেন্ট্রাল ডিফেন্সিভ পজিশন থেকে শুরু করে মধ্যমাঠেও দিয়েছিলেন আস্থার প্রতীক। কাতালানদের হয়ে তিনি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নেমেছেন ২৬৪ ম্যাচে। ভার্সেটাইল এই খেলোয়াড় গোলও পেয়েছেন বার্সা জার্সিতে ৮৮টি।

খেলোয়াড়ি জীবনে চার বার লা লিগার ট্রফি ছুঁয়ে দেখার সুযোগ হয়েছিল কোম্যানের। এর পাশাপাশি অর্জনের কেবিনেটে আরও রয়েছে কোপা ডেল রে, সুপার কোপা, ইউরোপিয়ান কাপ ও ইউরোপিয়ান সুপার কাপ। তাই এই ক্লাব কিংবদন্তির উপর ভরসা করে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল দলটি গুছিয়ে শিরোপার দৌড়ে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসা।

ads

কোম্যান দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০২০/২১ মৌসুমে। এর আগের মৌসুমের লিগ শিরোপা হাতছাড়া হয় কাতালান ক্লাবটি। তাঁর থেকেও প্রধান চিন্তার বিষয় ছিলো ইউরোপিয় ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের মঞ্চ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তাঁরা রয়েছে ট্রফি বঞ্চিত সেই ২০১৪/১৫ মৌসুম পরবর্তী সময় থেকে।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এমন হতাশার দরূণ বহু কোচ পরিবর্তন করেও সুফল পায়নি ক্লাবটি। রোনাল্ড কোম্যান যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন তাঁর ঠিক আগেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বাদ পড়ে যায় স্পেনের ক্লাবটি। তাঁর থেকেও বড় ট্র্যাজেডি তাঁরা হেরেছিল জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ এর বিপক্ষে ৮-২ গোলের এক বিশাল ব্যবধানে। এমন পরিস্থিতি পরবর্তী সময়ে আশা, ভরসা নিয়ে ক্লাবকে শিরোপা জয়ের গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয় ক্লাব কিংবদন্তি কোম্যানকে।

অবশ্য তাঁর সাফল্য বিবেচনায় তাঁকে এই গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন বলেই অভিমত ফুটবল বিশারদের। কোচিং ক্যারিয়ারে তিনি আয়াক্স, বেনেফিকা, ভেলেন্সিয়ার মতো বেশকিছু দলকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিরোপা জিতিয়েছেন তিনি। সেই বিশ্বাস থেকেই হয়ত তাঁকে বার্সার মতো ইউরোপিয়ান পরাশক্তির দায়িত্ব দেওয়া হয়।

কিন্তু তিনি ব্যর্থ। হ্যা সত্যিই তিনি ব্যর্থ। ২০২০/২১ মৌসুমে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর বার্সার যে আহামরী পরিবর্তন তিনি আসতে পেরেছিলেন তা বলা যায় না। দলের অবস্থা দিনকে দিন আরো বেগতিক হতে থাকে। সেই মৌসুমে বার্সা স্প্যানিশ লিগের দৌড় থেকে ছিটকে যায়। সাত হার আর সাত ড্র-তে তাঁদের অবস্থান শেষমেশ গিয়ে দাঁড়ায় তৃতীয়তে।

অপরদিকে যেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নিয়ে অন্তহীন চিন্তার কোন সমাধান দিতে পারেননি কোম্যান। দ্বিতীয় রাউন্ডেই ফ্রেঞ্চ ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেই এর কাছে হেরে বিদায় নেয় কোম্যানের বার্সা। প্রধান উদ্দেশ্যেই তিনি ব্যর্থ। সে যাই হোক তিনি অবশ্য একটি ট্রফি জিতিয়েছিলেন। কোপা ডেল রে তে অ্যাটলেটিকো বিলবাও-কে ৪-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তোলে কাতালানরা। শিরোপা তিনি জেতাতে পারেন এমন এক বিশ্বাস হয়ত তাঁর উপর ছিল ক্লাব কর্তাদের।

বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর! আরো একবার ভরসা করা হলো ক্লাব কিংবদন্তি খেলোয়াড়ের উপর। টিকে গেলেন তিনি আরেক মৌসুমের জন্যে। কিন্তু ক্লাবের আর্থিক সংকট, এর পাশাপাশি বিভিন্ন পজিশনে খেলোয়াড়দের ইনজুরিতে দলে বেশকিছু নতুন মুখের আগমন ঘটলো।

সমর্থকদের ঠিক খুব একটা পছন্দের দলবদল ছিলো সেগুলো না তা আর বলার বিশেষ প্রয়োজন নেই। তাছাড়া দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি দল ছেড়ে চলে যাওয়া একটা চাপা ক্ষোভের বিস্তার ঘটেছে। প্রেসিডেন্ট এবং কোচের বিপক্ষে।

কিন্তু ক্লাব যেন অতলের দিকে আরো অগ্রসর হতে শুরু করে চলতি মৌসুমে। বর্তমান মৌসুম কেবল শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বার্সা লিগে খেলে ফেলেছে দশ ম্যাচ, অপদিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলেছে তিনটি। লিগে তাঁদের অবস্থান নয়ে। সমান তিন হার ও ড্র মিলিয়ে তাঁদের পয়েন্ট মোটে পনেরো। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও অবস্থা সেই একই।

দুই ম্যাচ হেরেছে কাতালানরা। সমান ৩-০ ব্যবধানে তাঁদেরকে যথাক্রমে হারিয়েছে বায়ার্ন মিউনিখ ও পর্তুগালের ক্লাব এস এল বেনেফিকা। বেনেফিকা তো রীতিমত ইতিহাস গড়ে হারিয়েছি কাতালানদের। ষাট বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বার্সাকে হারিয়েছে তাঁরা।

এমন পরিস্থিতিতে কোম্যানের বিদায় সুর যেন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে সময়ের সাথে। মৌসুমের প্রথম এল ক্ল্যাসিকোতে ঘরের মাঠে রিয়ালের বিপক্ষের হারে বিদায়ের করুণ সুর যেন আরো বেশি ছড়িয়ে পরে। ঠিক তাঁর পরের ম্যাচেই রায়ো ভায়োকানোর বিপক্ষে হারে সুর পরিণত হয় বাস্তবে।

বিদায় ঘন্টা বেজেছে রোনাল্ড কোম্যানের।  বিদায় হচ্ছেন তিনি প্রিয় ক্লাবের ডাগআউট থেকে। তাঁর পরিবর্তে যিনি আসবেন তিনি কি পারবেন এই ধ্বংসস্তূপ থেকে ক্লাবকে টেনে তুলতে? অপেক্ষা, অপেক্ষা এবং অপেক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link